সিন্ডিকেট এবার সক্রিয় ঢাবি-উত্তর-দক্ষিণ ছাত্রলীগ কমিটি নিয়ে!

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ পাওয়া বিতর্কিতদের কয়েকজন বাদ পড়লেও পদ না পেয়ে যারা আন্দোলন করেছেন তারা আর কমিটিতে ঢোকার সুযোগ পাচ্ছেন না। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির কয়েকজন শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন, সিন্ডিকেটের ইশারায় তারা আন্দোলন করছেন এমন সন্দেহে তাদের পদ দেওয়া হবে না। কারণ, পদ না পেয়ে নানা অজুহাত তুলে আন্দোলন করে ছাত্রলীগের নতুন কমিটিকেই প্রশ্নবিদ্ধ করতে চান তারা। তাই আন্দোলনকারীদের পদ দিয়ে অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না।
শিগগিরই ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের কমিটি দেওয়া হবে জানিয়ে তারা বলেন, এই তিন কমিটি নিয়েও ভেতরে ভেতরে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। গঠনতন্ত্রে এসব কমিটির সদস্য সংখ্যা ১৫১ জন থাকলেও ওই সিন্ডিকেট চাইছে ২৫১ সদস্যের কমিটি।
এদিকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের দিন গত ১৩ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে সৃষ্ট অনাকাক্সিক্ষত ঘটনায় গতকাল সোমবার ৫ জনকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করেছে ছাত্রলীগ। এদের মধ্যে একজনকে স্থায়ীভাবে এবং চারজনকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত বছর ১১ ও ১২ মে ছাত্রলীগের সম্মেলন হওয়ার পর ৩১ জুলাই আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মতিতে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি ও গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। সেদিন রাতে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তাদের নাম ঘোষণা করেন। একই দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং ঢাকা মহানগরীর দুটি ইউনিটের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হয়। তারপর দ্রুত সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার কথা থাকলেও প্রায় ১০ মাস পর ১৩ মে ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। দুই বছরমেয়াদি নতুন এই কমিটি ঘোষণার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সংবাদ সম্মেলন করে অসন্তোষ জানান পদবঞ্চিত ও প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া নেতারা। পরে বিক্ষোভও করেন তারা। একই সময়ে আনন্দ মিছিল করেন নতুন নেতা ও তাদের সমর্থকরা। এ নিয়ে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা, এমনকি সংঘাতও সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে নানা অভিযোগ ওঠা ১৭ জনকে তদন্তসাপেক্ষে বাদ দেওয়ার জন্য ২৪ ঘণ্টা সময় চান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। ওই সময় পার হওয়ার পরও তারা বাদ না পড়ার একপর্যায়ে আন্দোলনকারীরা অনশনে বসেন। সর্বশেষ গত রবিবার রাতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে শোভন-রাব্বানীসহ কয়েকজন আন্দোলনকারীর বৈঠক হয়। বৈঠকে উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার ও আন্দোলন থেকে সরে আসার প্রতিশ্রুতি দেন আন্দোলনকারীরা। এমন প্রেক্ষাপটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও মহানগরের দুই কমিটি নিয়ে দেখা দিয়েছে জটিলতা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ছাত্রলীগ সভাপতি শোভন বলেন, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি নিয়ে আর আন্দোলন হবে না। কমিটি ঘোষণার পর যে আন্দোলন হয়েছিল তাতে সাবেক কোনো কোনো নেতার ইন্ধন ছিল। তারা ছোটখাটো কিছু বিষয়কে বড় করে দেখিয়ে ফায়দা হাসিল করতে চেয়েছিল। আমরা বিষয়গুলো মোকাবিলা করেছি। আন্দোলনকারীদের দাবি অনুযায়ী যাচাই-বাছাই করে বিতর্কিতদের বাদ দেওয়া হবে। শিগগিরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের কমিটি দেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এই তিন ইউনিটের সদস্য সংখ্যা নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতা জানান, গত রবিবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতার সঙ্গে ধানমন্ডি আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের বৈঠক হয়েছে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। ছাত্রলীগ সভাপতি শোভন ও সাধারণ সম্পাদক রাব্বানী দ্রুত সমস্যার সমাধান করবেন বলে কেন্দ্রীয় নেতাদের আশ্বস্ত করেন। বৈঠকে আন্দোলনকারী নেতারাও ছিলেন। তারা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের আন্দোলন থেকে সরে আসবেন বলে জানিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে যখন কেন্দ্রীয় কমিটির জটিলতা নিরসন হওয়ার পথে তখনই জটিলতা শুরু হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের কমিটি নিয়ে।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় দুই নেতা বলেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এই ইউনিটগুলোর সদস্য সংখ্যা ১৫১। কিন্তু গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে এই ইউনিটগুলোর প্রধান নেতারা ২৫১ সদস্যের কমিটি করতে চাইছেন। এ নিয়ে ছাত্রলীগে আবারও জটিল পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। ইউনিটগুলোর প্রধানদের ওপর সিন্ডিকেট ভর করে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করানোর চেষ্টা করছে। এ কারণে নতুন করে সংঘাতও হতে পারে।
ছাত্রলীগের সহসভাপতি পদের দুই নেতা বলেন, বর্তমান কমিটিকে বিতর্কিত করতেই মূলত এই আন্দোলন। এখানে সাবেক নেতারা ভাগবাটোয়ারা নিয়ে কিছু শিক্ষার্থীকে মাঠে নামিয়ে সারা দেশে তাদের আধিপত্য দেখিয়েছে। বর্তমান কমিটিকে দুর্বল করতে চেয়েছে। তারা মনে করে, তাদের কার্যসিদ্ধি হয়েছে। এখন তারা কেন্দ্রীয় কমিটিতে পাওয়া-না পাওয়া নিয়ে আর ভাবছে না। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও মহানগরের দুই কমিটিতে আধিপত্য বিস্তার করতে চাইছে।
৫ জনকে বহিষ্কার : গতকাল রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো ছাত্রলীগ সভাপতি শোভন ও সাধারণ সম্পাদক রাব্বানী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে তাদের বহিষ্কারের তথ্য জানানো হয়। শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়াদের মধ্যে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়া হলের কর্মী সালমান সাদিককে। সাময়িক বহিষ্কৃতরা হলেনÑ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী মুরসালিন অনু, জিয়া হল ছাত্রলীগের সদস্য কাজী সিয়াম, একই হলের ছাত্রলীগকর্মী সাজ্জাদুল কবীর এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য জারিন দিয়া।
এ ছাড়া কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়েছে দুজনকে। তারা হলেন রোকেয়া হল ছাত্রলীগের সভাপতি বি এম লিপি আক্তার এবং জিয়া হল ছাত্রলীগের পরিকল্পনা ও কর্মসূচি বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান শান্ত। শৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য তাদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা তিন দিনে জানাতে বলা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মধুর ক্যান্টিনে ঘটে যাওয়া অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার পর তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পর্যালোচনা করে ওই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।