ঢাকা শনিবার, ২৭শে এপ্রিল ২০২৪, ১৫ই বৈশাখ ১৪৩১


ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালত

নাজির নিয়োগ নিয়ে নজিরবিহীন কাণ্ড


২৮ জানুয়ারী ২০২৪ ২২:৪৯

আপডেট:
২৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৭:৪৪

ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নাজির মো. খাদেমুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকার পঞ্চম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের স্টেনোগ্রাফার ছিলেন মো. খাদেমুল ইসলাম। বর্তমানে তিনি ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নাজির পদে নিয়োজিত। নিয়োগ বিধিমালা অনুযায়ী, স্টেনোগ্রাফার থেকে নাজির পদে পদায়নের কোনো সুযোগ নেই। আবার নাজির পদটিও স্টেনোগ্রাফারের নিচের পদ। অথচ এসব তোয়াক্কা না করে বিধিবহির্ভূতভাবে তাকে নাজির পদে আনা হয়েছে, যা নিয়ে আদালতে কর্মরত কর্মচারীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। তাদের অভিযোগ, ওই পদে যোগ্য ব্যক্তি থাকা সত্ত্বেও নজিরবিহীনভাবে তাকে ওই পদে বসানো হয়েছে। আবার বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আলাদা চাকরি বিধি থাকলেও তাকে সরকারি চাকরি বিধির একটি বিধান অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, বিচার বিভাগীয় কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা অনুযায়ী স্টেনোগ্রাফার ত্রয়োদশ গ্রেডের কর্মচারী। আর নাজির চতুর্দশ গ্রেডে বেতন পান। তবে স্টেনোগ্রাফার খাদেমুলকে ত্রয়োদশ গ্রেডের সুবিধা বহাল রেখেই চতুর্দশ গ্রেডের নাজির পদে পদায়ন করা হয়। ২০২৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি এক প্রশাসনিক আদেশে তাকে নাজির পদে পদায়ন করেন ঢাকার সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ এ এইচ এম হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া।

ওই পদায়নের আদেশে উল্লেখ করা হয়, ঢাকা জেলা জজশিপের নাজিরের পদটি অবসরজনিত কারণে শূন্য রয়েছে। এজন্য প্রশাসনিক কারণে এবং জনস্বার্থে শূন্য পদটি পূরণের জন্য স্টেনোগ্রাফার মো. খাদেমুল ইসলামকে তার চাকরিকালীন অভিজ্ঞতা বিবেচনা করে বাছাই কমিটির সুপারিশে নাজির পদে নিয়োজিত করা হলো।


বাস্তবে এভাবে পদায়নের কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, ২০০৭ সালে বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক ঘোষণা করা হয়। এরপর বিচারকদের জন্য আলাদা বেতন-কাঠামো এবং বিচার বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আলাদা নিয়োগ বিধি তৈরি করা হয়েছে। জেলা জজ ও অধস্তন আদালতসমূহ এবং বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতসমূহ (কর্মকর্তা ও কর্মচারী) নিয়োগ বিধিমালা-১৯৮৯ এবং জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসি ও মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেসির আদালতসমূহ (সহায়ক কর্মকর্তা ও কর্মচারী) নিয়োগ বিধিমালা-২০০৮ দ্বারা বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়োগ, পদোন্নতি ও শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হয়ে থাকে।

অভিযোগ রয়েছে, ঢাকার জেলা জজ আইন দুটির বাইরে গিয়ে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর তৃতীয় অধ্যায় এ বর্ণিত ধারা ৬ এর ৩নং অনুচ্ছেদের অধীনে খাদেমুল ইসলামকে নাজির পদে নিয়োগ দেন। কারণ সরকারি কর্মচারী আইন, ২০১৮ বিচার বিভাগীয় অধস্তন কর্মচারীদের জন্য প্রযোজ্য নয়। ১৯৯০ সালের বিধিমালার ‘খ’ অংশে বলা হয়েছে, কোন কোন পদে কত বছর চাকরি করলে একজন অধস্তন কর্মচারী (নাজির) পদে পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্য হবেন। এ ছাড়া হাইকোর্ট বিভাগের ২০২৩ সালের ২ মার্চ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, টেকনিক্যাল পদের স্টেনোগ্রাফারকে নন-টেকনিক্যাল পদে (নাজির) বদলি করা যাবে না।

কয়েকজন কর্মচারী জানান, ঢাকার জেলা জজ আদালতে ৭-৮ জন সেরেস্তাদার ছিলেন। সেরেস্তাদার হিসেবে প্রত্যেকের দায়িত্ব পালনের চার বছরের অভিজ্ঞতা ছিল। তারা সবাই নাজির পদে নিয়োগ পাওয়ার যোগ্য ছিলেন। কিন্তু তাদের বঞ্চিত করে নজিরবিহীনভাবে স্টেনোগ্রাফার থেকে খাদেমুলকে নাজির পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. গোলাম রব্বানী  বলেন, ‘জেলা জজ এ ধরনের নিয়োগ ও পদায়ন প্রদান করে থাকেন। এখানে আমাদের কোনো ভূমিকা নেই। তবে জেলা জজের দেওয়া নিয়োগে কোনো অনিয়ম, চাকরি বিধিমালার ব্যত্যয় ঘটলে যে কেউ অভিযোগ দিতে পারেন। নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ পেলে আমরা তদন্ত করব।’

এ ব্যাপারে ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ এ এইচ এম হাবিবুর রহমান ভূঁইয়ার কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।