ঢাকা সোমবার, ১৮ই আগস্ট ২০২৫, ৪ঠা ভাদ্র ১৪৩২


জুলাই হত্যাযজ্ঞ

শেখ হাসিনা-কামালের বিরুদ্ধে পঞ্চম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু


প্রকাশিত:
১৮ আগস্ট ২০২৫ ১২:৫০

শেখ হাসিনা ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ছবি : সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে পঞ্চম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে।

সোমবার (১৮ আগস্ট) সকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনালে এ সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।

এদিন আসামি থেকে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে আদালতে হাজির করা হয়।

এর আগে ৬ আগস্ট তৃতীয় দিনের শুনানিতে দুজন প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষ্য দিয়েছিলেন রিনা মুর্মু ও এ কে এম মঈনুল হক। এখন পর্যন্ত মোট পাঁচজন সাক্ষ্য দিয়েছেন এ মামলায়। সবাই অভিযুক্তদের বিচার দাবি করেছেন।

অভিযোগ করা হয়েছে, জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে ১৪০০ জন ছাত্র ও জনতাকে হত্যা এবং হত্যার উসকানি, প্ররোচনা ও নির্দেশ দেওয়ার সঙ্গে তারা জড়িত ছিলেন। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ৫টি অভিযোগ রয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ১৪ জুলাই ছাত্রদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলা, হেলিকপ্টার থেকে গুলির নির্দেশ, রংপুরে আবু সাঈদ হত্যা, চানখাঁরপুলে আনাসসহ ছয় শিক্ষার্থী হত্যা এবং আশুলিয়ায় ছয় মরদেহ পোড়ানো।

এসব অভিযোগের মধ্যে প্ররোচনা, উসকানি, অপরাধ সংঘটন প্রতিরোধে ব্যর্থতা এবং ষড়যন্ত্রের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে প্রথম মামলাটি (মিস কেস বা বিবিধ মামলা) হয় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায় (সুপিরিয়র কমান্ড রেসপন্সিবিলিটি)-এর এই মামলায় তিনজনকে আসামি করা হয়। গত ১২ মে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে এ অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা। প্রতিবেদনটি যাচাই-বাছাই শেষে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ হিসেবে ট্রাইব্যুনালে জমা দেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ মোট আট হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার। এর মধ্যে তথ্যসূত্র দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠার, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি চার হাজার পাঁচ পৃষ্ঠার এবং শহীদদের তালিকার বিবরণ দুই হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠার রয়েছে। সাক্ষী হিসেবে রয়েছেন ৮১ জন।

গত ১ জুন শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। এরপর ১৬ জুন এ মামলায় পলাতক শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়। তাদের হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি জারির পরও হাজির না হওয়ায় অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল। গত ১০ জুলাই এই মামলায় অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১। হয়েছে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়।

একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এই ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীদের বিচারের উদ্যোগ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। এরপর পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে প্রথম মামলাটি (মিস কেস বা বিবিধ মামলা) দায়ের করা হয়। অভিযোগ দাখিলের পর প্রসিকিউশনের আবেদনে গত ১৭ অক্টোবর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

দেশ ছাড়ার পর থেকেই ভারতে অবস্থান করছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এই মামলার পাশাপাশি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে তার শাসনামলের সাড়ে ১৫ বছরে গুম-খুনের ঘটনায় একটি মামলা। আরেকটি রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড সংক্রান্ত। গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন নির্মূলে আওয়ামী লীগ সরকার, তার দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছে বলে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে। জাজ্বল্যমান এসব অপরাধের বিচার অনুষ্ঠিত হচ্ছে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। জুলাই-আগস্টের দমন-পীড়নে ভূমিকার জন্য দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচারের জন্যও এরই মধ্যে আইন সংশোধন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ কয়েকটি দল নির্বাচনের আগেই শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিচার শেষ করার দাবি জানিয়ে আসছে।