ঢাকা সোমবার, ৩০শে জুন ২০২৫, ১৬ই আষাঢ় ১৪৩২


ফেরারি আসামি উজ্জলকে হন্যে হয়ে খুঁজছে পুলিশ


প্রকাশিত:
২৯ জুন ২০২৫ ১৮:৩৫

সাজাপ্রাপ্ত মো: উজ্জল

কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার কুর্শা গ্রামের মো: আব্দুল কাদিরের ছেলে মো: উজ্জ্বল একাধিক গুরুতর ফৌজদারি অপরাধে আদালত কর্তৃক সাজাপ্রাপ্ত আসামি পলাতক রয়েছে এবং তাকে ধরতে দেশব্যাপী অভিযান শুরু করেছে পুলিশ। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে বেআইনি সমাবেশ, সরকারি কর্মচারীকে মারধর ও হুমকি, সরকারি কাজে বাধা প্রদান এবং ভাঙচুরের মতো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত তাকে কারাদণ্ড প্রদান করেন। রায় ঘোষণার পর থেকেই আসামি আত্মগোপনে থাকায় তাকে ধরতে সর্বোচ্চ তৎপরতা চালাচ্ছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা।

মামলার নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, আসামির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির সাতটি ভিন্ন ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছিল এবং দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে আদালত সবকটি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত বলে রায় দিয়েছেন।

ধারাগুলো হলো:

ধারা ১৪৩ (বেআইনি সমাবেশ): পাঁচ বা ততোধিক ব্যক্তির অবৈধ উদ্দেশ্যে সমাবেত হওয়া। এই ধারায় প্রমাণিত হয় যে, আসামি একটি সংগঠিত অপরাধী চক্রের সদস্য হিসেবে কাজ করেছিল।

অপরাধের ধরণ: পরিকল্পিতভাবে অপরাধ সংঘটনের জন্য জমায়েত হওয়া।

ধারা ৩২৩ (স্বেচ্ছায় আঘাত করা): সাধারণ মানুষকে বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের ইচ্ছাকৃতভাবে আঘাত করা।

অপরাধের ধরণ: যা ঘটনার সহিংসতাকে প্রমাণ করে।

ধারা ৩৩২ (কর্তব্যরত সরকারি কর্মচারীকে গুরুতর আঘাত): সরকারি দায়িত্ব পালনের সময় কোনো কর্মকর্তাকে বাধা দেওয়ার উদ্দেশ্যে গুরুতর আঘাত করা। এটি একটি জামিন-অযোগ্য অপরাধ।

অপরাধের ধরণ: আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ওপর সরাসরি হামলা, যা রাষ্ট্রের কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করার সামিল।

ধারা ৩৫০ (অপরাধমূলক বলপ্রয়োগ): কাউকে আঘাত, ভয় বা বিরক্তি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে তার সম্মতি ছাড়া শক্তি প্রয়োগ করা।অ

অপরাধের ধরণ: কর্তব্যরত কর্মকর্তাদের শারীরিকভাবে নিবৃত্ত করার চেষ্টা।

ধারা ৪২৭ (সম্পত্তির ক্ষতিসাধন): পঞ্চাশ টাকার অধিক মূল্যের সরকারি বা বেসরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর বা নষ্ট করা।

অপরাধের ধরণ: ঘটনাস্থলে থাকা যানবাহন, আসবাবপত্র বা স্থাপনা ভাঙচুর করে আতঙ্ক সৃষ্টি ও আর্থিক ক্ষতি করা।

ধারা ৫০৬ (অপরাধমূলক ভীতি প্রদর্শন): ভুক্তভোগী বা সরকারি কর্মকর্তাদের প্রাণনাশ বা গুরুতর জখমের হুমকি দেওয়া।অপরাধের ধরণ: ভয় দেখিয়ে আইন প্রয়োগে বাধা সৃষ্টি এবং এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা।

ধারা ১০৯ (অপরাধে প্ররোচনা): এই মামলায় আসামির ভূমিকা ছিল শুধুমাত্র অংশগ্রহণকারী হিসেবে নয়, বরং একজন উস্কানিদাতা বা প্ররোচনাকারী হিসেবে। সে অন্যদেরও এই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে প্ররোচিত করেছিল।

পুলিশের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, এই ঘটনাটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না। এটি ছিল একটি পূর্বপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করা এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে চ্যালেঞ্জ জানানো। ঘটনার দিন আসামি তার সহযোগীদের নিয়ে একটি এলাকায় বেআইনিভাবে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়। তখনই আসামির নেতৃত্বে পুলিশের ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়, গাড়ি ভাঙচুর করা হয় এবং কর্তব্যরত কর্মকর্তাদের প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়।

দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়ায় একাধিক সাক্ষী, ভুক্তভোগী পুলিশ সদস্যদের সাক্ষ্য এবং ঘটনাস্থলের আলামত (যেমন: ভাঙা গাড়ির ছবি, মেডিকেল রিপোর্ট) উপস্থাপনের মাধ্যমে আসামির বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয় রাষ্ট্রপক্ষ। আদালত আসামিকে দোষী সাব্যস্ত করে কারাদণ্ডাদেশ দেন।

এ বিষয়ে পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, "আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়। আদালত কর্তৃক সাজাপ্রাপ্ত কোনো আসামিকে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। আমরা পলাতক আসামিকে গ্রেপ্তারের জন্য একটি বিশেষ দল গঠন করেছি। তার সকল সম্ভাব্য আশ্রয়স্থল এবং তার আত্মীয়-স্বজন ও সহযোগীদের ওপর কঠোর নজরদারি রাখা হচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তার অবস্থান শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।"

তিনি আরও বলেন, "আমরা জনসাধারণের কাছেও আহ্বান জানাচ্ছি, এই পলাতক আসামির বিষয়ে কোনো তথ্য থাকলে নিকটস্থ থানায় জানান। তথ্যদাতার পরিচয় সম্পূর্ণ গোপন রাখা হবে।"

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একসাথে এতগুলো ধারায় দোষী সাব্যস্ত হওয়া প্রমাণ করে অপরাধটি কতটা গুরুতর ছিল। বিশেষ করে ধারা ৩৩২ এবং ১০৯ প্রমাণ করে যে, আসামি কেবল নিজেই সহিংস ছিলেন না, বরং একটি সংগঠিত চক্রের নেতা হিসেবে সরকারি প্রতিষ্ঠানের ওপর হামলা চালিয়েছেন। এমন সাজাপ্রাপ্ত আসামির পলাতক থাকা জননিরাপত্তার জন্য একটি বড় হুমকি। তাকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা না গেলে সমাজে ভুল বার্তা পৌঁছাতে পারে এবং অন্যরা এ ধরনের অপরাধ করতে উৎসাহিত হতে পারে।

এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত পলাতক আসামিকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি, তবে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।