‘আমরা আম গাছ, নিমগাছ নিধন করে ইউক্যালিপটাস রোপণ করি’

বায়ু দূষণে ইটভাটার ক্ষতিকারক কালো ধোয়াকে দায়ী করে তা থেকে উত্তরণে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তারা মনে করেন, বৃক্ষরোপণ ও সচেতনতা বৃদ্ধি পেলে পরিবেশ বিপর্যয় থেকে বাংলাদেশ রক্ষা পাবে।
শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ উপ-কমিটি আয়োজিত ‘বায়ু দূষণ, করণীয় ও পদক্ষেপ’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেনের সঞ্চালনায় ও উপ-কমিটির চেয়ারম্যান খন্দকার বজলুল হকের সভাপতিত্বে আরও আলোচনায় অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক হাফিজা খাতুন, ডিবিসি নিউজের সিইও সাংবাদিক মঞ্জুরুল ইসলাম, স্থপতি ইকবাল হাবীব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন, অ্যাডভোকেট মঞ্জিল মোর্শেদ।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেন, সেমিনারে প্রায় সকল বক্তাই বলেছেন ইটভাটার কারণে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। কিন্তু একই সঙ্গে আমরা চিন্তা করতে হবে ইটের মাধ্যমে বিল্ডিং তৈরি হচ্ছে, এটা আমাদের অর্থনৈতিক সক্ষমতার প্রমাণ। অন্যদিকে আমাদের দেশে রকি এরিয়ার মতো পাথর পাওয়া যায় না। তবে এখানে আশার কথা হলো আমাদের হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন ইটের বিকল্প একটি পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন যা আমরা অনেকই জানি না। যা বালু, মাটি এবং সিমেন্ট মিশিয়ে তৈরি, যেটার নাম হচ্ছে ব্লক, যা ইটের বিকল্প ব্যবহার হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমাদের দেশের তাপমাত্রা কমানোর জন্য অনেকগুলো গাছ রয়েছে। কিন্তু আমরা সেগুলো রোপণ করি না। আমরা আম গাছ, নিমগাছ নিধন করে ইউক্যালিপটাস, আকাশি গাছ রোপণ করি। যে গাছে পাখি পর্যন্ত বসে না। নগরবিদ এবং পরিবেশবিদরা এ নিয়ে কোন কথা লিখছেন বা বলছেন কিনা সেটা আমার মনে পড়ে না।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, আগে এক সময় গ্রামাঞ্চলের রাস্তার দুপাশে বিভিন্ন ফলমূলের গাছ ছিল। যেখানে বিভিন্ন পশু-পাখি এসে বসতো। সেই ফলমূল খেতে পারত। এখন সেই গাছগুলো রিপ্লেস হয়ে গেল। যেগুলো লাগানো হয় সেগুলো পাতাবাহারের, ওখান থেকে কতটুকু কার্বন ডাইঅক্সাইড অবজার্ভ হচ্ছে, কতটুকু অক্সিজেন নিঃসরণ হচ্ছে সেটা আমাদের দেশে মাপা হচ্ছে না। অধ্যাপক দ্বীজেন শর্মা যখন বেঁচে ছিলেন তখন এই বিষয়ে অনেক গবেষণা পেতাম।
তিনি বলেন, বায়ু দূষণ রোধ করতে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। বিধিমালা করে সরকারের একার পক্ষে বায়ু দূষণ রোধ করতে পারবে না। এবারের পরিবেশ দিবসের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে বায়ু দূষণ। এর বাইরে শব্দ দূষণ এবং পানি দূষণ নাগরিক জীবনের জন্য হুমকি। শব্দ দূষণের জন্য গত দুই বছর পরিবেশ অধিদপ্তর বিশাল কাজ করছে। প্রতিটি বিভাগে চালকদের প্রশিক্ষণ এবং মানুষকে সচেতন করতে কাজ করছে তারা। সরকার একেবারে বসে আছে এই কথাটা বলা ঠিক না। আমাদের জন্য এলার্মিং বিষয়টা হলো বায়ু দূষণে ২০০৬ সালে ১২৫ তম এখন আমরা ১৭৯ স্থানে নেমে এসেছি। প্রত্যেকটি নাগরিক যদি সচেতন হয় তাহলে এর থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব।
সাবেক এই উপাচার্য বলেন, এখন যে শিশুদের ডায়রিয়া, কাশি বেড়ে যাচ্ছে, আমরা কতটুকু ফাস্ট ফুড খাচ্ছি- সেটা নিয়ে গবেষণা দরকার। মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য বায়ু দূষণ দায়ী নয়, বরং আমাদের লাইফস্টাইল যে আমরা পরিবর্তন করেছি সেটা অনেকাংশে দায়ী। বায়ু দূষণের জন্য আমাদের আরামপ্রিয়তার দায় আছে। আমরা রাত ৯ টার সময় এসি চালিয়ে দেই, সেটা সকাল ৯টা পর্যন্ত চলে।
ইটভাটার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যেখানে ইটের ভাটা আছে তার আশপাশের এলাকায় পানি ছিটানো বাধ্যতামূলক করা উচিত। তাহলে বাতাসে থাকা বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকারক রাসায়নিক উপাদান মাটির সঙ্গে মিশে যাবে। এতে মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমবে।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আফতাব আলী শেখ।