ঢাকা বুধবার, ৭ই মে ২০২৫, ২৫শে বৈশাখ ১৪৩২


বিএনপি নেতাদের দেখা দিচ্ছেন না খালেদা


২৩ জুন ২০১৯ ০৪:২৭

আপডেট:
৭ মে ২০২৫ ১৮:২৪

৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রত্যাখ্যানের পর নির্বাচিতদের শপথগ্রহণ, সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়ন, বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে দলের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এই ক্ষোভের কারণেই পহেলা বৈশাখের (১৪ এপ্রিল) পর থেকে তিনি দলের নেতাদের সাক্ষাৎ দিচ্ছেন না বলে গতকাল শুক্রবার  জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক ভাইস চেয়ারম্যান। তবে তার সঙ্গে একমত নন বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। তারা বলছেন, চেয়ারপারসন তাদের সাক্ষাৎ দিচ্ছেন না বিষয়টি ঠিক নয়।

ক্ষমতাসীনদের চাপেই কারা কর্তৃপক্ষ নেত্রীর সঙ্গে নেতাদের সাক্ষাতের অনুমতি

দিচ্ছে না। ঈদের পর খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি চাওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল গতকাল বলেন, ঈদের পরে তার সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি চেয়ে আর কোনো আবেদন করা হয়নি। আবেদন করে কোনো লাভও নেই। কারণ সরকার সাক্ষাতের অনুমতি দেয় না। তিনি বলেন, ঈদের দিন চেয়ারপারসনের সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ অনুমতি দেয়নি। অথচ জেল কোড অনুযায়ী ঈদের উৎসবের দিন আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, স্বজন যারা আছেন, তাদের দেখা করতে দেওয়ার বিধি রয়েছে। সেখানে অবশ্যই কর্তৃপক্ষ বিধি লঙ্ঘন করেছে। তারা একেবারে লিমিটেড করে দিয়েছে, পরিবারের সাতজন ছাড়া কেউ দেখা করতে পারবে না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন  বলেন, পহেলা বৈশাখ সাক্ষাতের পর গত রমজানের ঈদের আগে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুলসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যদের চেয়ারপারসনের সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল কারা কর্তৃপক্ষের কাছে। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ তাদের সাক্ষাতের অনুমতি দেয়নি। তাই তারা সাক্ষাৎ করতে পারেননি।

‘ক্ষুব্ধ চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নিজেই নাকি সাক্ষাতের অনুমতি দিচ্ছেন না এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, বিষয়টি ঠিক নয়। বরং সরকারের নির্দেশে কারা কর্তৃপক্ষ বিএনপি নেতাদের খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি দিচ্ছে না।

বিএনপির শীর্ষ নেতারা কারা কর্তৃপক্ষকে দোষারোপ করলেও কারা কর্তৃপক্ষের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বিএনপি চেয়ারপারসন তাদের স্পষ্ট নির্দেশ দিয়ে রেখেছেন। নির্দেশটা হলো তার অনুমতি ছাড়া কাউকে যেন তার সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি না দেওয়া হয়।

বিএনপির ওই ভাইস চেয়ারম্যান  আরও বলেন, সর্বশেষ পহেলা বৈশাখে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ^র চন্দ্র রায় ও নজরুল ইসলাম খান রাজধানীর শাহবাগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। ওইদিন দলের সংসদ সদস্যদের শপথগ্রহণের বিষয়ে চেয়ারপারসনের মতামত জানতে চাইলে নেতাদের তিনি বলেছিলেন, ‘আমার মুক্তির জন্য কথা বলতে সংসদে যেতে হবে। এ যুক্তি ঠিক নয়। আমার মুক্তির জন্য রাজপথে কথা বললেই চলবে।’

তিনি বলেন, সেখান থেকে বের হয়ে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নিয়ে বসেছিলেন মির্জা ফখরুল। সেখানে শপথ নিয়ে চেয়ারপারসনের অবস্থান স্থায়ী কমিটির অন্য সদস্যদের জানানো হয়। তখন স্থায়ী কমিটির সদস্যরা পরদিন দলের সংসদ সদস্যদের ডেকে চেয়ারপারসনের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব দেন মহাসচিব মির্জা ফখরুলকে।

পাশাপাশি এটাও জানানোর দায়িত্ব দেওয়া হয় যে, কেউ দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ নিলে দায়দায়িত্ব তাকেই নিতে হবে। এরপর বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে আর কোনো ধরনের যোগাযোগের চেষ্টা না করে ২৪ এপ্রিল শপথ নেন নির্বাচিত এক সংসদ সদস্য এবং সর্বশেষ শপথগ্রহণের শেষ দিন ২৯ এপ্রিল শপথ নেন নির্বাচিত আরও চার সংসদ সদস্য। বাকি থাকেন কেবল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল।

এদিকে ২৯ এপ্রিল শপথগ্রহণের পর চারজনই দাবি করেন, তারা লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশেই শপথ নিয়েছেন। এসব খবরে ক্ষিপ্ত হন খালেদা জিয়া। এরপর বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য খালেদা জিয়ার পক্ষে মনোনয়নপত্র তোলা হয়। তাতে স্বাক্ষর নিতে সাক্ষাৎ করতে গেলে ক্ষুব্ধ খালেদা জিয়া বলেন, তিনি উপনির্বাচনে অংশ নেবেন না। যারা অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারাই অংশ নিক।

উপনির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে দলের চেয়ারপারসনের অনীহার বিষয়ে জানতে চাইলে তখন বগুড়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও বগুড়া-৬ আসনের বিএনপির প্রার্থী গোলাম মোহাম্মাদ সিরাজ  বলেছিলেন, উপনির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে চেয়ারপারসনকে এক সপ্তাহ আগেই জানানো হয়েছিল। তখন চেয়ারপারসন নেতিবাচক কোনো মন্তব্য করেননি। হ্যাঁ-না কিছুই বলেননি। তাই বলা যায়, উপনির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে চেয়ারপারসনের মনোভাব নেতিবাচক নয়।