ঢাকার ২ সিটি নির্বাচনে বিএনপির সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী
উত্তরে তাবিথই দক্ষিণে ইশরাক

চলতি বছরের শেষদিকে বা আগামী বছরের শুরুতে হতে পারে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে বিএনপির সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীরা তত সক্রিয় হয়ে উঠছেন। ইতিমধ্যে পরিকল্পনা নিয়ে কাজও শুরু করে দিয়েছেন এসব মেয়র প্রার্থী।
এ দুই সিটিতে একাধিক প্রার্থী কাজ করলেও উত্তরের মেয়র পদে তাবিথ আউয়াল মিন্টুই দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে এগিয়ে রয়েছেন। আর দক্ষিণের মেয়র পদে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের পরিবর্তে দলের ভাইস চেয়ারম্যান অবিভক্ত ঢাকার মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক হোসেনের সম্ভাবনাই এখন পর্যন্ত বেশি। গতকাল মঙ্গলবার এমনটা জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য।
মহানগর বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সাবেক কমিশনার দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য আবুল বাশার, যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেলসহ আরও কয়েকজন দক্ষিণের মেয়র পদে প্রার্থী হতে আগ্রহী। ঢাকা উত্তরের মেয়র প্রার্থী হিসেবে তাবিথ ছাড়াও ঢাকা মহানগর উত্তরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বজলুল বাসিত আঞ্জু, সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসানসহ আরও কয়েকজন মেয়র প্রার্থী হতে আগ্রহী।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, স্থানীয় সরকারের সব ধরনের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত রয়েছে বিএনপির। ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঘোষণা করলে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নিয়ে বসে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। কে কোথায় প্রার্থী হবেÑ এখনই তা বলা যাচ্ছে না। এজন্য সবাইকে অপেক্ষা করতে হবে। তিনি বলেন, ইসি তফসিল ঘোষণার পর আগ্রহী প্রার্থীদের মাঝে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি করা হবে। সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে। এরপর লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা নিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করবেন।
স্থায়ী কমিটির ওই সদস্য জানান, বিএনপি এখন তরুণ নেতৃত্ব চায়। সম্ভাবনাময় তরুণ নেতাদের লাইমলাইটে আনতে চায়। সে হিসেবে ঢাকা উত্তরে তাবিথ, দক্ষিণে ইশরাক ও চট্টগ্রামে শাহাদাত হোসেনকে প্রার্থী করার সম্ভাবনা বেশি। তাছাড়া লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ইতোমধ্যে তাদের সাংগঠনিক কাজ শুরু করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফল বিপর্যয়ের পর বিএনপি এই সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সংসদ নির্বাচনের পর যে উপজেলা নির্বাচন হয় তা বর্জনও করে বিএনপি। এমন পরিস্থিতিতে দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন তাদের বহিষ্কারও করে বিএনপি। এরপর গত ৫ জুলাই বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বৈঠক করে দলের আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন। বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব এক সংবাদ সম্মেলন করে জানান, বিএনপি আগামীতে স্থানীয় সরকারের সব ধরনের নির্বাচনে অংশ নেবে।
আসন্ন মেয়র নির্বাচন নিয়ে গতকাল কথা হয় সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। জন্ম হওয়ার পর যখন বুঝতে শিখেছি তখন থেকেই কাছ থেকে দেখেছি আমার বাবা সাদেক হোসেন খোকার রাজনীতি। যখনই জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে বাবার পাশে থেকেছি। এখন নিজেই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘আমাকে বিএনপির পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটিতে রাখা হয়েছে সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে। এছাড়া সম্প্রতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমানের নেতৃত্বে গঠিত নারী ও শিশুবিষয়ক ফোরামের সঙ্গে কাজ করছি। নির্যাতিত শিশু ও নারীদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। বাড্ডায় ছেলেধরা সন্দেহ পিটিয়ে হত্যার শিকার রেনু বেগমের বাড্ডার বাসায় গিয়েছিলাম ঈদের আগে।’ ইশরাক বলেন, ‘গণতান্ত্রিক দল হিসেবে বিএনপি নির্বাচনমুখী দল। ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে এবং আমাকে দলের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিলে প্রার্থী হব। বাবার মতো ঢাকাবাসীর পাশে থেকে তাদের জীবন মানের উন্নয়ন ও নাগরিক অধিকার সমুন্নত রাখতে কাজ করে যাব।’
ইশরাক হোসেনের জন্ম ১৯৮৭ সালে। তিনি ঢাকায় ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেল পর্যন্ত পড়ালেখা করে লন্ডনে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে আন্ডার গ্র্যাজুয়েট ও মাস্টার্স করেছেন। সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৬ আসন থেকে বিএনপির হয়ে লড়াই করেন তিনি।
উত্তরের মেয়র পদে এগিয়ে রয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল মিন্টু। সর্বশেষ ২৮ এপ্রিল ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছিলেন তিনি। গতকাল তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘মনোনয়নের বিষয়টি নির্ভর করে দলের ওপর। দল চাইলে বিগত নির্বাচনের মতো আগামীতে নির্বাচন করার ইচ্ছা আমার আছে। সম্প্রতি ঢাকাসহ সারা দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বাড়ার পর ঢাকার জনগণকে সচেতন করতে রাজপথে নেমেছিলাম। জনগণকে সচেতন করতে তাদের মাঝে লিফলেট বিতরণ করেছিলাম। এছাড়া মিরপুরের চলন্তিকা বস্তিতে যখন অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছিল তখন ক্ষতিগ্রস্ত বস্তি পরিদর্শনের পাশাপাশি কয়েকটি পরিবারকে সহায়তা করেছিলাম।’ তিনি বলেন, ‘২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল যে নির্বাচন হয়েছিল তখন আওয়ামী লীগের প্রার্র্থীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন। ভোটকেন্দ্রে বিএনপির যেসব পোলিং এজেন্ট দেওয়া হয়েছিল, তাদের তালিকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কাছে দেওয়া হয়েছিল। তখন পোলিং এজেন্টদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ফলে আমি অনেক ভোটকেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট পাইনি। অনেক কেন্দ্রে গিয়ে নিজে জাল ভোট দিতে দেখেছি।’