ঢাকা শুক্রবার, ১৭ই মে ২০২৪, ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


১২ কাউন্সিলরকে খুঁজছে পুলিশ


২৯ নভেম্বর ২০১৯ ১৫:১৯

আপডেট:
১৭ মে ২০২৪ ০৬:৪৯

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এক ‘কালো তালিকায়’ আছেন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের অন্তত ১২ কাউন্সিলর। তারা কোথায় আছেন বা কী করছেন, সে সম্পর্কে প্রায় তিন মাস কোনো তথ্য নেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে। নানা চেষ্টায়ও পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে তাদের ব্যাপারে কোনো খোঁজখবর পায়নি তারা। আইনের আওতায় আনতে তাদের হন্যে হয়ে খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীতে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হলে এসব কাউন্সিলরের নাম আলোচনায় আসে। আলোচিত ক্যাসিনো কারবারিদের সঙ্গে তাদের ছিল দহরম-মহরম সম্পর্ক। এলাকায় সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, দখলবাজিসহ নানা ধরনের অপরাধ কর্মকা-ে তাদের জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা। ক্ষমতাসীন দলের ব্যানার ব্যবহার করে বেপরোয় হয়ে ওঠেন ওই সব কাউন্সিলর। দুই সিটির মেয়রের কাছে নালিশ জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি স্থানীয়দের। তাদের অপকর্মে অতিষ্ঠ হলেও প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করার সাহস নেই কারও। এমন পরিস্থিতিতে তাদের নামে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ

দেশের সব বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন ও সীমান্ত এলাকায় সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছে বলে পুলিশ ও র‌্যাব সূত্র জানিয়েছে।

র‌্যাব ও পুলিশের দুই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘ব্ল্যাক লিস্টে’ থাকা লাপাত্তা হয়ে যাওয়া ঢাকার ১২ কাউন্সিলরকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের মধ্যে উত্তর সিটির সাত আর দক্ষিণের পাঁচজন। এসব কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দখল, মাদক কারবারে ইন্ধন, জুয়ার আসর বসানো, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকা- পরিচালনাসহ নানা অপকর্ম করার অভিযোগ আছে। তারা যাতে কেউ দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে সেদিকে নজর রাখা হয়েছে। র‌্যাবের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘ইতিমধ্যে এক কাউন্সিলর দেশ ত্যাগ করেছেন বলে আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ রয়েছে, সেগুলোর ব্যাপারে অভ্যন্তরীণ তদন্ত চলছে। অফিস বা বাসায় তাদের পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের মোবাইল ফোনও বন্ধ থাকে। এমনকি পরিবারের সদস্যরাও তাদের ব্যাপারে তথ্য দিতে পারছেন না।’

জানা গেছে, ওই তালিকায় থাকা কাউন্সিলররা হলেন ঢাকা উত্তর সিটির ১ নম্বর ওয়ার্ডের আফসার উদ্দিন খান, ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাজ্জাদ হোসেন, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের আবদুর রউফ নান্নু, ১২ নম্বর ওয়ার্ডের ইকবাল হোসেন তিতু, ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের জিন্নাত আলী, ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের শামীম হাসান ও ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের শরিফুল ইসলাম

এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটির ১ নম্বর ওয়ার্ডের ওয়াহিদুল হাসান মিল্টন, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের আশ্রাফুজ্জামান ফরিদ, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের মোস্তফা জামান পপি, ২০ নম্বর ওয়ার্ডের ফরিদ উদ্দিন আহমেদ রতন ও ২২ নম্বর ওয়ার্ডের তরিকুল ইসলাম সজীব।

তাদের ব্যাপারে জানতে চাইলে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশ পেলেই আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করব। অনেকের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

অনুসন্ধানে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরেই ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব চালিয়েছেন কতিপয় কাউন্সিলর। তাদের অত্যাচারে দিশেহারা এলাকার লোকজন। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে গ্রেপ্তার ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি (বহিষ্কৃত) ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, সাংগঠনিক সম্পাদক (বহিষ্কৃত) খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, যুবলীগ নামধারী ঠিকাদার গোলাম কিবরিয়া ওরফে জি কে শামীম, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়াসহ অন্যদের সঙ্গে তাদের ছিল খুবই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। তাদের আশকারায় দিন দিন বেপরোয়া হয়ে ওঠেন এসব কাউন্সিলর। এসব তথ্য জানার পর আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো তাদের ওই কালো তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) এক কর্মকর্তা বলেন, দক্ষিণের ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ওয়াহিদুল হাসান মিল্টনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও সস্ত্রাসী কর্মকা-ের অভিযোগ আছে। খিলগাঁও তিলপাপাড়া এলাকায় তিনি ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছেন নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী দিয়ে। খিলগাঁও রেলওয়ে কলোনিতে মাদক কারবারে তার যোগসাজশ আছে বলে এক গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আশ্রাফুজ্জামান ফরিদের বিরুদ্ধে সবুজবাগ এলাকায় ফুটপাত থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগ আছে। অভিযোগ আছে, এলাকায় জুয়ার আড্ডা চলে তার মদদে। ক্যাসিনো কারবারি দক্ষিণের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বহিষ্কৃত কাউন্সিলর মমিনুল হক সাঈদের সঙ্গে তার যোগসাজশ ছিল।

১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোস্তফা জামান পপি পল্টনের ডন হিসেবে পরিচিত। পল্টনের মুক্তাঙ্গনে মাইক্রোস্ট্যান্ড বসিয়ে চাঁদাবাজি ও পল্টন এলাকায় ফুটপাতে চাঁদাবাজির অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।

২২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তরিকুল ইসলাম সজীবের বিরুদ্ধে হাজারীবাগের কোম্পানি ঘাট মসজিদ মার্কেট দখল করে ভাড়া আদায়, ফুটপাত থেকে চাঁদাবাজি এবং মাদক কারবারির অভিযোগ আছে। ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন আহমদ রতনের বিরুদ্ধেও নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে।

তিনি ঠিকাদারি কাজ বাগিয়ে নেওয়ার অন্যতম হোতা হিসেবে পরিচিত। তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগও আছে।

আর উত্তরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আফসার উদ্দিন খানের বিরুদ্ধে উত্তরা মডেল টাউন, কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় জমি দখলের অভিযোগ আছে। ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাজ্জাদ হোসেনের বিরুদ্ধে মিরপুর ১২ নম্বর এলাকায় চাঁদাবাজি ও মাদক কারবারির অভিযোগ রয়েছে।

৫ নম্বর ওয়ার্ডের আবদুর রউফ নান্নুর বিরুদ্ধে পল্লবী এলাকায় ফুটপাতে চাঁদাবাজি ও ক্যাডার বাহিনী দিয়ে মাদক কারবারে ইন্ধনের অভিযোগ আছে।

এ ছাড়া ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইকবাল হোসেন তিতু, ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জিন্নাত আলী, ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শামীম হাসান ও ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে দখল, চাঁদাবাজি ও মাদক কারবারে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে।