ঢাকা মঙ্গলবার, ২১শে মে ২০২৪, ৮ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


কারাগার থেকেই আসে ‘আইএস টুপি’!


২৯ নভেম্বর ২০১৯ ১৬:১০

আপডেট:
২১ মে ২০২৪ ১২:১২

হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার রায়ের দিন দণ্ডপ্রাপ্ত একাধিক জঙ্গির মাথায় ইসলামিক স্টেটের প্রতীক সংবলিত যে টুপি দেখা যায় সেই টুপি তারা কোথায় পেলেন তা নিয়ে চলছে নানা ধরনের আলোচনা। টুপির রহস্য উদঘাটনে কারা কর্র্তৃপক্ষের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপ) তদন্ত কমিটি করেছে। পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, কারাগার থেকেই টুপি নিয়ে আদালতে গিয়েছিলেন তারা। আর কারা কর্মকর্তারা বলছেন, স্ক্যানার মেশিনে আসামিদের সম্পূর্ণ শরীর পরীক্ষা করা হয়েছিল। কোন টুপিতে কী লেখা সেটা

ধরা সম্ভব নয় তাদের স্ক্যানার মেশিনে।

গত বুধবার গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা মামলার রায় ঘোষণা করা হয় ঢাকার দায়রা জজ আদালত ভবনের বিশেষ ট্রাইব্যুনালে। আসামিরা ছিলেন ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে (কেরানীগঞ্জ)। সেখান থেকেই তাদের আদালতে আনা হয়েছিল। রায়ে সাত আসামির মৃত্যুদণ্ড হয়; খালাস পান একজন। রায়ের পর পুলিশ বেষ্টনীর মধ্যেই ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত একাধিক আসামির মাথায় আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর প্রতীক সংবলিত টুপি দেখা যায়। তখনই এ নিয়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে গতকাল বৃহস্পতিবার ডিএমপির একাধিক কর্মকর্তা জানান, আদালত ভবনের নিচে রাখা প্রিজনভ্যানের দিকে হেঁটে যাওয়ার সময় সেই টুপি পরিহিত জঙ্গিদের ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ায় আসামিদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ কর্মকর্তারা বিব্রত হন। বিপাকে পড়েন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) তদন্তকারী কর্মকর্তারা। কারণ হামলার পর থেকেই সিটিটিসির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, নিষিদ্ধ ঘোষিত জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ বা জেএমবির একটি বিচ্যুত অংশের জঙ্গিরা এই হামলা চালিয়েছিলেন। যারা আইএস ভাবাদর্শে উদ্বুব্ধ হলেও আইএস নন, তারা মূলত নব্য জেএমবি হিসেবে পরিচিত।

আলোচিত ওই টুপির রহস্য উদঘাটনে কারা কর্র্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। পরবর্তী সময়ে রাতে ডিএমপির পক্ষ থেকেও পৃথক তদন্ত কমিটি করা হয়। ডিএমপির জনসংযোগ শাখার উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) মাহবুব আলমকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে তিন কার্যদিবসে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

ডিএমপির আরেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি, এই টুপি কারাগার থেকেই এসেছে। তবে বিষয়টি তদন্তের পর প্রকাশ করা হবে। তিনি বলেন, জঙ্গিরা আইএস প্রতীকের যে টুপি ব্যবহার করেছে তা কোনোভাবেই পুলিশি নিরাপত্তা ভেদ করে তাদের কাছে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। এটি পরিকল্পিতভাবেই তারা আগে থেকেই নিয়ে এসেছে। ধারণা করা হচ্ছে, আসামিরা কারাগারে থাকাকালে এই টুপি সংগ্রহ করেন অথবা তৈরি করেন। তবে কেউ সরবরাহ করলে তিনি কে? তার খোঁজ নেওয়ার পাশাপাশি কারাগারে তৈরি করা সম্ভব কি না সে বিষয়েও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের এক কর্মকর্তা মোবাইল ফোনে দেশ রূপান্তরকে বলেন, তাদের স্ক্যানার মেশিনের সহায়তায় আসামিদের সম্পূর্ণ শরীর পরীক্ষা করা হয়। সেই মেশিনের পক্ষে কোন টুপিতে কী লেখা আছে সেটা ধরা সম্ভব নয়।

বুধবার দুপুরে মহানগর দায়রা জজ ভবনের পঞ্চম তলায় বিশেষ ট্রাইব্যুনালে রায় ঘোষণার পর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত রাকিবুল হাসান রিগ্যানকে ভবনের যে লিফটের সহায়তায় নিচে নামানো হয়, সেই লিফটে পুলিশ ও আসামির সঙ্গে ইংরেজি দৈনিক নিউ এজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মুক্তাদির রশীদ ছিলেন।

গতকাল  তিনি বলেন, ‘রায় ঘোষণা শেষ হওয়ার পর আমি নিচে নামার জন্য যে লিফট ব্যবহার করেছি সেখানে পুলিশ বেষ্টনীতে একজন আসামি দেখতে পাই। যার মাথায় আইএস প্রতীকের টুপি ছিল। কৌতূহলবশত টুপি পরিহিত আসামিকে জিজ্ঞাসা করি, আপনি কি এই টুপি জেল থেকে এনেছেন? উত্তরে তিনি ‘হ্যাঁ’ বলেন। তারপর তাকে প্রশ্ন করি, এটা কি হাতে তৈরি? তখন তিনি নিশ্চুপ থাকেন। শেষে জানতে চাই, আপনি কোন দলের সমর্থক? তিনি উত্তর দেন, ইসলামিক স্টেটের।’

অবশ্য বুধবারই বিকালে ডিএমপির জনসংযোগ শাখার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসি প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘আইএস টুপি’ বলে কোনো কিছু নেই। ওই টুপি কোথা থেকে কীভাবে এলো সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষ তদন্ত করে দেখছে।

ডিএমপির আদালত পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি প্রসিকিউশন) জাফর হোসেন মোবাইল ফোনে গতকাল  বলেন, বুধবার সকাল ১০টার দিকে আসামিদের মহানগর দায়রা জজ আদালত ভবনের নিচতলায় নিরাপত্তা বলয়ে থাকা একটি কক্ষে রাখা হয়েছিল, যেখানে বাহির থেকে অন্য কারও প্রবেশাধিকার ছিল না।

তাহলে এই বিশেষ টুপি কীভাবে তাদের কাছে গেল? তিনি বলেন, আসামিদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশের সব কর্মকর্তা ও সদস্যের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করছে তদন্ত কমিটি। আদলত ভবনের আশপাশে থাকা বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজও বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। তদন্ত শেষ হওয়ার পরই জানা যাবে এই টুপি কোথা থেকে কীভাবে এলো। তদন্ত শেষ হওয়ার আগে কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না বলেও জানান তিনি।