ঢাকা মঙ্গলবার, ২১শে মে ২০২৪, ৭ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


তিন লক্ষাধিক মামলায় বিচারক মাত্র ৪১ জন


২ ডিসেম্বর ২০১৯ ২২:০৬

আপডেট:
২১ মে ২০২৪ ০৪:৫৩

সারা দেশের ৪১টি ভূমি জরিপ ট্রাইব্যুনালে অন্তত ৩ লাখ ৫ হাজার মামলা এখন বিচারাধীন। এ হিসাবে প্রতিটি ট্রাইব্যুনালে গড় মামলা চলছে ৭ হাজার ৪৩৯টি। একজন বিচারক মাসে সাধারণ ১৫টি মামলা নিষ্পত্তি করতে পারেন। এ হিসাবে এক বছরে এ সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তি হবে ১৮০টি। আর ৭ হাজার ৪৩৯টি মামলা শেষ হতে লাগবে ৪১ বছর।

বর্তমানে এ সংক্রান্ত মামলায় শীর্ষে রয়েছে কিশোরগঞ্জ জেলায় থাকা ভূমি জরিপ ট্রাইব্যুনাল। সেখানে বিচারাধীন মামলা প্রায় ৪৫ হাজার।

এ তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ময়মনসিংহ জেলার ট্রাইব্যুনাল। সেখানে মামলা আছে অন্তত ৩৩ হাজার। প্রত্যেকটি ট্রাইব্যুনালের এত এত মামলা পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন যুগ্ম জেলা জজ পদমর্যাদার একজন করে বিচারক।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জরিপ সংক্রান্ত ত্রুটি সংশোধনে জমে থাকা এসব মামলা নিয়ে সারা দেশের মানুষ রয়েছে চরম ভোগািন্ততে। বছরের পর বছর বিচারপ্রার্থী নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে মামলার রায় বা আদেশ পান।

কিন্তু এ রায় বা আদেশের পর সংক্ষুব্ধ হলে প্রতিকার পেতে তাকে পড়তে হয় আরেক দফা ভোগািন্ততে। কারণ, আইন অনুযায়ী ভূমি জরিপ আপিল ট্রাইব্যুনাল থাকার কথা থাকলেও তা নেই। আপিলের জন্য যেতে হয় হাইকোর্ট বিভাগে।

এ প্রসঙ্গে আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব গোলাম সারওয়ার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বর্তমানে ৪১টি ভূমি জপির ট্রাইব্যুনালে একজন করে যুগ্ম জজ দায়িত্ব পালন করছেন। এতে মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার ড়্গেত্রে কিছুটা জটিলতা দেখা দিয়েছে। তাই জনসাধারণের ভোগািন্ত লাঘবে সরকার বিকল্প ভাবছে।’

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘স্টেট একুইজিশন অ্যান্ড টেন্যান্সি অ্যাক্ট বা রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন-১৯৫০, যুগোপযোগী করা এখন সময়ের দাবি। এ আইনের ১৪৫ক ধারায় ভূমি জরিপ ট্রাইব্যুনাল গঠন করার কথা বলা হয়েছে। ১৪৫খ ধারায় ভূমি জরিপ আপিল ট্রাইব্যুনাল গঠনের কথা বলা হয়েছে। উপ-ধারা (১) এ বলা আছে, ভূমি জরিপ ট্রাইব্যুনালের মামলার রায় ডিক্রি বা আদেশ থেকে উদ্ভূত মামলার আপিল শুনানির জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী ভূমি জরিপ আপিল ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবেন। উপধারা (৩) এ বলা আছে, যারা সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্টে বিচারক ছিলেন তাদের মধ্যে থেকে একজনকে সরকার ভূমি জরিপ আপিল ট্রাইব্যুনালের বিচারক হিসেবে মনোনয়ন দেবেন।’ উপধারা (৫) অনুযায়ী, বিধিমতে কোনো ব্যক্তি ভূমি জরিপ ট্রাইব্যুনালের রায় ডিক্রি এবং আদেশের বিরুদ্ধে তিন মাসের মধ্যে ভূমি জরিপ আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিল করতে পারবেন। আর উপধারা (৬) মতে, ‘উপধারা-৫ এ বর্ণিত সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও আপিল মামলা গৃহীত হতে পারে যদি আপিল দায়েরের দেরি হওয়ার কারণ ট্রাইব্যুনাল স‡ন্তাষজনক বলে মনে করে।’

একাধিক আইনজীবী জানান, এ আইনে দেওয়ানি আদালতের এখতিয়ার রহিত করা হয়েছে। ধারা ১৫৪চ অনুযায়ী, ‘১৪৫ক ধারায় স্থাপিত ভূমি জরিপ ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ারাধীন এলাকায় স্বত্বলিপি পুনঃযাচাইক্রমে গেজেট চ‚ড়ান্ত প্রকাশনার ফলে ১৪৪ ধারার অধীনে দেওয়ানি আদালতে কোনো প্রকার মামলা চলতে পারবে না।’

আইন মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, ১৯৮৪ সাল থেকে ঢাকার ১৯১টি মৌজাসহ সারা দেশে ভূমি জরিপের কাজ চলমান রয়েছে। এ অবস্থায় জরিপ কাজে নানা ত্রুটিবিচ্যুতি নিয়ে ২০০৪ সালে সরকার স্টেট একুইজিশন অ্যান্ড টেন্যান্সি অ্যাক্ট সংশোধন করে ভূমি জরিপ ট্রাইব্যুনাল ও ভূমি জরিপ আপিল ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিধান সংযোজন করে। সে সময় ১২টি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। ২০১২ সালে ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়িয়ে ৪১টি করা হয়। কিন্তু ভূমি জরিপ ট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রায় ১৫ বছরেও হয়নি আপিল ট্রাইব্যুনাল। এর মাঝে বেড়েছে জরিপ ট্রাইব্যুনাল। এতে বেড়েছে মামলার সংখ্যা এবং তার জট লেগেছে হাইকোর্ট বিভাগে। ফলে বিচারপ্রার্থীরা আছেন ভোগািন্ততে। মামলাজট নিরসনে সর্বশেষ ২০১৭ সালে উদ্যোগ নিয়েছিল আইন মন্ত্রণালয়। তারা আগের মতো সহকারী জজ ও সিনিয়র সহকারী জজদের দিয়ে মামলা পরিচালনার বিধান রেখে আইন সংশোধনের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছিল। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট জেলা জজকেও আপিল আদালত হিসেবে ঘোষণা করার প্রস্তাব দিয়েছিল। প্রায় দুই বছর পর সম্পªতি ভূমি মন্ত্রণালয় আইনটি সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আইন মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানিয়েছে। বর্তমানে আইন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আইন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা  জানান, স্টেট একুইজিশন অ্যান্ড টেন্যান্সি অ্যাক্ট সংশোধনের বিষয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের কিছুটা আপত্তি রয়েছে। সেসব আপত্তি নিয়ে সংসদীয় কমিটিতে আলোচনাও হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, আইন খুব দ্রুত সংশোধন হবে। এর মাধ্যমে সহকারী জজ ও সিনিয়র সহকারী জজরা মামলা পরিচালনার এখতিয়ার পাবেন। ফলে ভূমি সংক্রান্ত মামলার চাপ কমে যাবে।