ঢাকা মঙ্গলবার, ৩০শে এপ্রিল ২০২৪, ১৮ই বৈশাখ ১৪৩১


নিরক্ষর কৃষকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা


১৬ মার্চ ২০২১ ০৬:১৫

আপডেট:
৩০ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:০১

জানেন না লেখাপড়া। চালাতে পারেন না ফেসবুক। অথচ ফেসবুকে পোস্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে এক নিরক্ষর কৃষকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে।

মামলার পর গ্রেফতারের ভয়ে পাঁচ মাস ধরে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন কৃষক আবু জামান। তিনি কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার পিরিজপুর ইউনিয়নের গজারিয়া গ্রামের বাসিন্দা। জমি-সংক্রান্ত বিরোধের জেরে তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছেন কটিয়াদী পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দা মিজানুর রহমান শিকদার।

স্থানীয় সূত্র জানায়, জমি-সংক্রান্ত বিরোধের জেরে আবু জামানের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ, চুরি-ডাকাতিসহ পাঁচটি মামলা করেন মিজানুর রহমান। পরে জামানের বসতভিটা দখল করেন। স্থানীয় এমপি আফজাল হোসেনের কাছে অভিযোগ দিয়ে সালিস বৈঠকে বসতভিটা ফিরে পান জামান। কিন্তু মিজানুর রহমানের রোষানল থেকে রক্ষা পাননি।

সবশেষ ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার মিথ্যা অভিযোগে জামানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন মিজানুর। অথচ জামানের ফেসবুক অ্যাকাউন্টই নেই।

মামলার পর পাঁচ মাস ধরে গ্রেফতার থেকে বাঁচতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন জামান। গত বছরের ২০ অক্টোবর মামলাটি করেন মিজানুর। চার মাস ২৫ দিন পার হলেও আদালতে অভিযোগপত্র দেয়নি পুলিশ। থেমে আছে মামলার তদন্তকাজ। আতঙ্কে আছেন কৃষক ও পরিবারের সদস্যরা।

নিজ বাড়ি থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে এক কলাবাগানে কথা হয় আবু জামানের সঙ্গে। হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, আমি পড়ালেখা জানি না। ফেসবুক চালাই না। প্রধানমন্ত্রী এবং পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সহযোগিতা চাই। মিথ্যা মামলা থেকে মুক্তি চাই।

কটিয়াদী মডেল থানায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২০ অক্টোবর দুজনকে আসামি করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন মিজানুর রহমান। মামলার এক নম্বর আসামি বাজিতপুরের পিরিজপুর ইউনিয়নের গজারিয়া বিলপাড় এলাকার আলাউদ্দিনের ছেলে আল আমিন এবং দুই নম্বর আসামি গজারিয়া গ্রামের মৃত হাছেন আলীর ছেলে আবু জামান।

মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেছেন, আমার বাবা বিলপাড় গজারিয়ার শিকদার মডেল একাডেমির অধ্যক্ষ গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধে ফেসবুকে কুরুচিপূর্ণ পোস্ট দিয়েছেন আল আমিন। এতে আমার পরিবারের মান-সম্মান ক্ষুণ্ন হয়েছে।

তবে মামলার ২ নম্বর আসামি আবু জামানের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করা হয়নি। এজাহারে বলা হয়, আসামিরা এলাকায় বাদীর বাবার বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ কথাবার্তা বলে মানহানি করেছেন।

এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রধান আসামি আল আমিনের সঙ্গে আবু জামানের পারিবারিক সম্পর্ক; এমনকি যোগাযোগও নেই।

আবু জামানের স্ত্রী রেহানা খাতুন  বলেন, পাঁচ মাস ধরে স্বামী মিথ্যা মামলায় গ্রেফতারের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। আমার স্বামী লেখাপড়া জানেন না, ফেসবুক কি জিনিস আমরা জানি না। স্বামীকে হয়রানি করতে এ মামলা দিয়েছে। এর আগে পাঁচটি মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন মিজানুর।

মামলার বাদী মিজানুর রহমান শিকদার বলেন, আল আমিন আর আবু জামান আত্মীয় নন; এ কথা ঠিক। তবে জামানের কথায় ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন আল আমিন। জমি-সংক্রান্ত বিরোধে এর আগে জামানের বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা করেছি ঠিকই। কিন্তু সেগুলোর খোঁজখবর নেই।

কটিয়াদী মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, জমি-সংক্রান্ত বিরোধের জেরে আবু জামানকে মামলায় জড়ানো হয়েছে বলে শুনেছি। মামলার ১ নম্বর আসামি আল আমিনের মোবাইলটি জব্দ করা যায়নি। ফলে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়নি। তবে আবু জামান নিরপরাধ হলে অভিযোগপত্র থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে।

ঢাকা পোস্ট/জেলা প্রতিনিধি, কিশোরগঞ্জ