যে ছবি নিয়ে ঢুকতে দেয়নি, শিশুটির আঁকা সেই ছবিই উপহার নিলেন প্রধানমন্ত্রী

আমি আপনাকে দেব বলে একটি ছবি একেছিলাম। সেটা আপনার ছবি ছিল। কিন্তু গেট থেকে ঢোকার সময় আপনার দারোয়ানরা ছবিটি নিয়ে নেয়। ওরা আমাকে বলে আপনার ছবি নিয়ে ঢুকতে দেবে না।
বুধবার সকালে কান্না জড়ানো কণ্ঠে এভাবেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনুযোগ করে মাগুরা ১নং সরকারী প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষার্থী কঙ্কনা সাহা।
বুধবার সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ ২০১৯ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ ঘটনা ঘটে।
জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ অনুষ্ঠানে নিরাপত্তার কারণে ছবিটি নিয়ে ঢুকতে পারে নি কঙ্কনা, তাই প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে মেডেল নিতে গিয়ে কেঁদে ফেলে কঙ্কনা। প্রধানমন্ত্রী নিজেও শিশুটির কান্নায় বিচলিত হয়ে ওঠেন, কি হয়েছে জানতে চাইলে শিশু কঙ্কনা বলে, আপনাকে নিয়ে আঁকা ছবিটি নিয়ে ঢুকতে দেয়নি আমাকে।
অবাক প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে সঙ্গে আশপাশে দায়িত্বে নিয়োজিতদের ছবিটির ব্যাপারে জানতে চান, এর কিছুক্ষণ পরেই কঙ্কণার জন্য আসে মাহেন্দ্রক্ষণ। নিজ হাতে আঁকা প্রধানমন্ত্রীর ছবিটি মঞ্চে উঠে কঙ্কনা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দেন। ওইসময় কঙ্কণা ছিল আনন্দিত ও উচ্ছ্বসিত।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি পোর্ট্রেট এঁকেছিলো জাতীয় চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় প্রথম হওয়া কঙ্কনা সাহা। মাদারিপুরের কঙ্কনার ইচ্ছা ছিল জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহে ছবিটি নিজ হাতে প্রধানমন্ত্রীকে তুলে দিবে।
বুধবার বিকেলে ঘটনাটির বর্ণনা দেন জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা আমতলী স্টাফ ওয়েল ফেয়ার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা শারমীন।
তিনি বলেন, শিশুটি দুরন্ত সাহসী ও স্মার্ট, ও খুব সাহসের সঙ্গেই নিজের অভিযোগটি প্রধানমন্ত্রীকে বলে, এক পর্যায়ে কান্না করে দেয়। প্রধানমন্ত্রী শিশুর আবদারটি মিটিয়েছে, বিষয়টি আমার কাছে অত্যন্ত ভাল লেগেছে। ওই সময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলেই শিশু কঙ্কণার সাহসিকতার প্রশংসা করছিল।
কঙ্কণা সাহা, মাগুরা ১নং সরকারী প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষার্থী। কঙ্কনা খুলনা বিভাগ থেকে জাতীয় পর্যায়ে চিত্রাঙ্কনে প্রথম হয়ে জাতীয় শিশু নির্বাচিত হয়। তার পিতার নাম কণক ক্লান্তি সাহা ও মা বন্দনা সাহা।
বুধবার সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ ২০১৯ এর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এসময় তিনি লেখাপড়া নিয়ে বাবা-মায়েদের প্রতিযোগিতা না করে শিশুদের কাছে শিক্ষাকে সহজ করার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, কোনোভাবেই যেন শিশুদের ওপর পড়াশোনার অতিরিক্ত চাপ দেয়া না হয়। প্রাথমিক শিক্ষাই একটি শিশুর শিক্ষার ভিত্তি তৈরি করে। আমরা আমাদের দেশে প্রি-প্রাইমারি শুরু করেছি। তারপর প্রাইমারিকে আমরা সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছি। তারা যেন খেলতে খেলতে, হাসতে হাসতে, সুন্দরভাবে নিজের মতো করে পড়াশোনা করতে পারে সেই ব্যবস্থাটাই করা উচিত।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ।