সম্মেলনের প্রস্তুতির ঘোষণায় চাঙা ৪ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা

দলের তিন অঙ্গ ও এক সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন করার নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তারপর থেকে চাঙা হতে শুরু করেছে সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা। সংগঠনগুলোর কার্যালয়গুলোতে নেতা-কর্মীদের উপস্থিত বাড়ছে। তবে কবে নাগাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে তার দিনক্ষণ এখনও নির্ধারণ করে নি সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দ।
নানা অপকর্ম ও মামলায় অভিযুক্ত এবং পালিয়ে থাকা যুবলীগের নেতাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। সংগঠনটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বলছেন, এ বিষয়ে লক্ষ্য রাখছে সংগঠনটি।
বুধবার (২ অক্টোবর) সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে এক অনির্ধারিত বৈঠকে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা জাতীয় সম্মেলনের আগেই দলের তিন সহযোগী ও এক ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি পুনর্গঠনে সম্মেলন আয়োজনের নির্দেশনা দেন। সংগঠনগুলো হলো- যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও কৃষক লীগ এবং ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন জাতীয় শ্রমিক লীগ।
আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন নিয়মিত হলেও দলের অন্যতম সহযোগী সংগঠন যুবলীগের সম্মেলনজট লেগেই আছে। সর্বশেষ ২০১২ সালের ১৪ জুলাই যুবলীগের ষষ্ঠ জাতীয় কংগ্রেস হয়। ওই কাউন্সিলে যুবলীগের চেয়ারম্যান হন ওমর ফারুক চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক হন হারুন-অর-রশিদ। ২০১২ সালের ১১ জুলাই মোল্লা মোহাম্মদ আবু কাওসারকে সভাপতি ও পঙ্কজ দেবনাথকে সাধারণ সম্পাদক করে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সর্বশেষ কমিটি হয়। ২০১২ সালের ১৯ জুলাই কৃষক লীগের সর্বশেষ কমিটি হয় মোতাহার হোসেন মোল্লাকে সভাপতি ও খন্দকার শামসুল হক রেজাকে সাধারণ সম্পাদক করে। সভাপতি শুক্কুর মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম নেতৃত্বাধীন শ্রমিক লীগের কমিটিও মেয়াদোত্তীর্ণ প্রায় তিন বছর আগে।
মেয়াদোত্তীর্ণ ওই সংগঠনগুলোর সূত্রে জানা গেছে, সম্মেলন করার নির্দেশনা আসার পর থেকেই সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা নড়ে-চড়ে বসতে শুরু করে দিয়েছেন। সংগঠনগুলোতে সম্ভাব্য প্রার্থী কারা হতে পারেন তা নিয়ে শুরু হয়ে গেছে নানা জল্পনা-কল্পনা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও নিজেদের অবস্থান জানান দিতে শুরু করেছেন বহু নেতা।
যুবলীগ সূত্র জানায়, দলীয় প্রধানের কাছ থেকে সম্মেলন করার নির্দেশনা আসতেই নেতা-কর্মীরা চাঙা বা উজ্জীবিত হতে শুরু করেছেন। বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের যুবলীগ কার্যালয়ে অন্যান্য দিনের চেয়ে নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। সম্ভাব্য নেতৃত্ব নিয়ে সংগঠনের ভেতর-বাইরে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা।
যুবলীগের নেতৃত্বে আসছেন আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতার উত্তরসূরি। এ নিয়ে নানা গুঞ্জন চলছে বহুদিন থেকেই। যুবলীগের মহানগর পর্যায়ের নেতৃত্বের জন্য এখন থেকেই লবিং করে যাচ্ছেন বহু পদ-পদবিপ্রত্যাশী নেতা-কর্মীরা।
সম্প্রতি চলমান দুর্নীতি-বিরোধী শুদ্ধি অভিযানের মধ্যে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নূরুন্নবী চৌধুরী শাওন, কেন্দ্রীয় সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী এবং মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে।
ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট এখন কোথায় আছেন কেউ জানেন না। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া গ্রেফতার হওয়ার পর সংগঠন থেকে বহিষ্কৃত হন। গ্রেফতার এড়াতে সিঙ্গাপুরে গা ঢাকা দিয়েছেন দক্ষিণের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এ কে এম মুমিনুল হক সাঈদ। যুবলীগের দফতর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমানও কলকাতায় গা ঢাকা দিয়েছেন। যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সমবায়বিষয়ক সম্পাদক জি কে শামীমকে গ্রেফতারের পর রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। যদিও যুবলীগের দাবি জি কে শামীম দলের কেউ নন।
যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মেলনের দিনক্ষণ কবে জানতে চাইলে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুন-অর-রশিদ বলেন, যুবলীগের সম্মেলনের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়ে গেছে। তবে নেত্রী ভারত থেকে ফিরে আসলে তার সাথে কথা বলেই দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হবে। তার সাথে আলোচনা করেই সম্মেলনের কর্ম-পরিকল্পনা সাজানো হবে। কারণ নেত্রী সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন, তার সুবিধা মতো সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হবে।
যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাথে সংগঠনের ঢাকা মহানগর (উত্তর-দক্ষিণ) সম্মেলন হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি।
যারা দুর্নীতি ও অপকর্মের কারণে পালিয়ে আছেন কিংবা মামলা হয়েছে তাদের বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেবেন জানতে চাইলে হারুন-অর-রশিদ বলেন, আইনি পদক্ষেপের পরে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা সব কিছু লক্ষ্য রাখছি।
শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল বলেন, এখনও সম্মেলনের তারিখ ঠিক করি নাই। তবে সংগঠনের সবার সাথে আলোচনা করে ৩০ নভেম্বরের মধ্যেই সম্মেলন আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ সোহেল রানা টিপু বলেন, সম্মেলনের তারিখ এখনও নির্ধারণ করা হয় নি। নেত্রী দেশে ফিরে আসার পরই সম্মেলনের দিনক্ষণ নির্ধারণ করবেন আমাদের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক।