দলের ভেতরের বলয় ভাঙতে চান শেখ হাসিনা

আসন্ন সম্মেলন ঘিরে প্রভাবশালী উপদলগুলোর তৎপরতা রোধ করতে সরকারের চলমান শুদ্ধি অভিযান ভ‚মিকা রাখবে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। আওয়ামী লীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, দলে রাজনীতিবিদদের জায়গা করে দিতে ও দুর্বৃত্তদের হাত থেকে দলকে মুক্ত করতে চান আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারা বলেন, এবারের সম্মেলন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সম্ভাবনাময় ও প্রতিশ্রতিশীল রাজনীতিকদের হাতে দায়িত্ব তুলে দিতে চান শেখ হাসিনা। চলমান শুদ্ধি অভিযানের মধ্য দিয়ে দলে যারা শুদ্ধ নেতা হিসেবে স্বীকৃতি পাবেন তাদের স্থান করে দেওয়া হবে। আর এ অভিযানের মধ্য দিয়ে যারা অশুদ্ধ প্রমাণিত হবেন তাদের দল থেকে বাদ দেওয়ার সুযোগ হাতে আসবে শেখ হাসিনার। তাই জাতীয় সম্মেলনের আগে মূলত এ অভিযানের বিষয়ে আরও কঠোর হয়ে উঠেছেন প্রধানমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমÐলীর এক সদস্য বলেন, শুদ্ধি অভিযান নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনড় অবস্থানের পেছনের কারণ মূলত দলের জাতীয় সম্মেলন। তিনি মনে করেন, আগামী সম্মেলনের আগে দল থেকে দুর্বৃত্তদের বের করে দিতে হলে এমন একটা ক্ষেত্র তৈরি করার কোনো বিকল্প উপায় তার হাতে ছিল না। শুদ্ধি অভিযানকে তিনি মোক্ষম অস্ত্র হিসেবে নিয়েছেন। কারা ভালো কারা মন্দ তা পরখ করার জন্য এ অভিযানই একমাত্র পথ। ওই নেতা আরও বলেন, এ অভিযানে যারা টিকবেন তারা উতরে যাবেন, যারা ফেল করবেন তারা দলের রাজনীতি থেকে হারিয়ে যাবেন। সম্পাদকমলীর এই নেতা আরও বলেন, সহযোগী সংগঠনেও তাই হবে। তাই জাতীয় সম্মেলনের আগে সহযোগী সংগঠনের সম্মেলনের নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
সম্পাদকমÐলীর আরেক নেতা বলেন, তিন দফায় গত ১১ বছরে ক্ষমতায় থাকার কারণে দলের ভেতরে এক ধরনের দুর্বৃত্তায়নের চর্চা হয়েছে। যার ফলে আদর্শিক ও ত্যাগী নেতারা হারিয়ে যাচ্ছেন এই দল থেকে। সর্বস্তরে দুর্বল হয়ে পড়ছে আওয়ামী লীগ। রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী হতে হলে আওয়ামী লীগকে দুর্বৃত্তদের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে বলে মনে করেন শেখ হাসিনা। সম্পাদকমÐলীর ওই সদস্য বলেন, দলে গুরুত্বপূর্ণ অনেক নেতার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে মূলত দুর্বৃত্তায়ন চলছে আওয়ামী লীগে। এই অভিযানের মধ্য দিয়ে ওই নেতাদের ও তাদের অনুসারীদের বিদায় করতে চান প্রধানমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমÐলীর আরেক সদস্য বলেন, প্রতিবার দলের জাতীয় সম্মেলনের সময় হলে দলের
ভেতরে নানা বলয় তৈরি হয়। তাদের কাজ হলো অমুককে নয়, তমুককে নেতা বানাতে হবে। চলে এক ধরনের ক্ষমতার প্রয়োগ। যারা টাকার পাহাড় হয়ে দলে নেতা বানানোর চেষ্টায় লিপ্ত থাকেন। ওই নেতা বলেন, ভেতরে নানা বলয়ে বিভক্ত হয়ে এরা দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনাকেও অনেক সময় চ্যালেঞ্জ করে বসেন। ফলে সিদ্ধান্ত নিতে হিমশিম খেতে হয় তাকে। ভালো-মন্দ যাচাই করার সময় ও সুযোগও প্রধানমন্ত্রীর হাতে থাকে না। দলের ভেতরে প্রভাবশালী যে গ্রæপ রয়েছে যারা প্রেশার গ্রæপ হিসেবে কাজ করেন। তারা ভালোদের খারাপ বানান আবার খারাপদের ভালো বানিয়ে বিভিন্ন উপায়ে শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, নেতা বানিয়ে নিজেদের কোমর শক্ত করেন ওইসব প্রেশার গ্রæপের নেতারা। সভাপতিমÐলীর ওই সদস্য বলেন, এবার সেই সুযোগ তাদের না দেওয়ার জন্য সম্মেলনকে সামনে রেখে শুরু করা হয়েছে অভিযান। তিনি বলেন, যারা ইতিমধ্যে অভিযুক্ত হয়েছেন তাদের অনেকেই প্রেশার গ্রæপের নেতা রয়েছেন। তাই তারা যেন তাদের বাঁচানোর জন্য ব্যস্ত থাকেন অন্যদিকে সৎ-যোগ্য, পরিচ্ছন্ন ও মেধাবী রাজনীতিবিদদের হাতে নেতৃত্ব তুলে দিতে পারেন শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনার উদ্ধৃতি দিয়ে সম্পাদকমÐলীর এক নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চান সংগঠনকে শক্তিশালী করতে। এর জন্য একটি ঝাঁকুনি দরকার মনে করেন তিনি। গত বুধবার সন্ধ্যায় গণভবনে দলের কয়েকজন নেতার সঙ্গে অনির্ধারিত এক সভায় শেখ হাসিনা বলেন, দলের ভেতরে কোনো দুর্বৃত্ত আমি রাখব না। ওই নেতা বলেন, সভায় শেখ হাসিনার যে দৃঢ়তা আমি দেখেছি তাতে এটুকু নিশ্চিত যে, এ অভিযান চলবে। আওয়ামী লীগ বিশুদ্ধ হয়ে উঠবে এর মধ্য দিয়ে।
সম্পাদকমÐলীর এক নেতা বলেন, সহযোগী সংগঠনের অবস্থাও তাই। সেখানেও পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন শেখ হাসিনা। দল বেচে যারা রাজনীতি করছেন তাদের কাউকে নেতৃত্বে না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি অভিযান শুরু করেছেন সহযোগী সংগঠনগুলোতেও। কারা ভালো কারা মন্দ সেই হিসাব দেখে পরবর্তী নেতৃত্ব ঠিক করবেন।
একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, আওয়ামী লীগে শেখ হাসিনার উত্তরাধিকার কী থাকবে তা এখনই তাকে নির্ধারণ করতে হবে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বকে যুগোপযোগী, গতিশীল ও আদর্শিক করতে হলে বড় ধরনের পরিবর্তন ছাড়া অসম্ভব। শেখ হাসিনার সামনে ওটাই শেষ সুযোগ। আশা করি তিনি তা কাজে লাগাবেন।