ক্লিন ইমেজের নেতা খুঁজছে আওয়ামী লীগ

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের আগেই আগামী নভেম্বর মাসে দলের মহানগর দক্ষিণ ও উত্তরসহ তিন সহযোগী এবং এক ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি পুণর্গঠনে কাউন্সিলের আয়োজন করতে যাচ্ছে সংগঠনগুলো। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য সব প্রস্তুতি নিচ্ছেন আয়োজকরা। তবে আগামী নেতৃত্বে কারা আসবেন, কাকে কোথায় দায়িত্ব দেয়া হবে তার জন্য আদর্শিক রাজনৈতিক ব্যক্তি খুঁজছেন ক্ষমতাসীন দলটি। ত্যাগী, ভালো, যোগ্য, তৎপর এবং আওয়ামী পরিবারে ব্যক্তিকেই খোঁজা হচ্ছে।
চলমান অভিযানের বিষয়টি মাথা রেখেই স্বচ্ছ, পরিচ্ছন্ন ও দুর্নীতিমুক্ত করতে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলো। আগামী ২ নভেম্বর কৃষক লীগ, ৯ নভেম্বর যুবলীগ, ১৬ নভেম্বর স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ২৩ নভেম্বর জাতীয় শ্রমিক লীগের কাউন্সিলের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করতে পারেন আওয়ামী লীগ- এমনটাই
জানিয়েছেন দলটির নীতি নির্ধারকরা। সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নেতাদের সঙ্গে এক জরুরি বৈঠক করেছেন শেখ হাসিনা। বৈঠকে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন আওয়ামী যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও বাংলাদেশ কৃষক লীগ এবং ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন জাতীয় শ্রমিক লীগকে নভেম্বরের মধ্যেই কাউন্সিল আয়োজনের নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। তবে এসব সংগঠনের কোনটির কাউন্সিল কবে হবে, সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
পরে বৈঠক শেষে গণভবনের সামনে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের বেশ কয়েকটি সহযোগী সংগঠনের কমিটির মেয়াদ নেই। বৈঠকে মেয়াদোত্তীর্ণ এসব কমিটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সামনে আমাদের কেন্দ্রীয় সম্মেলনও রয়েছে। তবে নেত্রী (আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা) আমাদের জাতীয় সম্মেলনের আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলন করার নির্দেশনা দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরো বলেন, সংশ্লিষ্ট সহযোগী সংগঠনের নেতাদের এ বিষয়টি জানাতে বলেছেন নেত্রী। তারা যেন এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেন, সে নির্দেশনাও দিয়েছেন তিনি।
সূত্রে আরো জানা যায়, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সংযোগী সংগঠন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ ও কৃষকলীগের নেতৃত্বের পরিবর্তন হচ্ছে। সেখানে স্থান পাবে ত্যাগী, যোগ্য, তৎপর এবং আওয়ামী পরিবারের লোকজন। এ ছাড়া ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন শ্রমিক লীগের নেতৃত্বেও আমূল পরিবর্তন হচ্ছে। দ্রুত সম্মেলন দিয়ে সংগঠনের যে বদনাম রয়েছে তার ইতি টানতে চাচ্ছে সহযোগী সংগঠনের মূল দল আওয়ামী লীগ। দলের শীর্ষ নেতারা জানিয়েছিলেন, দলের জাতীয় সম্মেলনের আগেই এসব সংগঠনের কাউন্সিল আয়োজনের পক্ষে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, কেবল দলের সভাপতি শেখ হাসিনার অনুমতির অপেক্ষায় ছিলেন তারা।
নীতি নির্ধারক সূত্রে জানা যায়, জাতীয় কাউন্সিলের আগে তিন সহযোগী এবং এক ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করবেন। সেখানে মূল দলের পক্ষ থেকে একটি সম্ভাব্য তারিখ দেয়া হবে। সেই তারিখে তাদের কাউন্সিল করার জন্য বলা হবে। এর মধ্যে আগামী ২ নভেম্বর কৃষকলীগ, ৯ নভেম্বর যুবলীগ, ১৬ নভেম্বর স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ২৩ নভেম্বর জাতীয় শ্রমিক লীগকে কাউন্সিল করার জন্য বলতে পারেন দলের সাধারণ সম্পাদক।
এ ছাড়া ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পরিবর্তন আসছে। বর্তমানে দায়িত্বপ্রাপ্ত কয়েকজনের নামে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। সেই অভিযোগের ভিত্তিত্বে তরুণ ও সৎ নেতৃত্ব চাচ্ছেন আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতারা। মহানগর দক্ষিণ ও উত্তরসহ তিন সহযোগী ও এক ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনে নতুন নেতৃত্বে সাবেক ছাত্রলীগের নেতাদের চাচ্ছেন ত্যাগীরা। তারা বলছেন, ‘সাবেক ছাত্রলীগের নেতারা সহযোগী সংগঠনের দায়িত্ব নিলে দলে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। পাশাপাশি সাবেক ত্যাগীরাও তাদের সঠিক মূল্যায়ন পাবে।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বলেন, ভালো, সৎ-যোগ্য ব্যক্তিকেই আমরা নেব। মানুষ যখন বিয়ে করতে যায়, সবাই সুন্দরী বউ চায়, কেউ খারাপকে বিয়ে করতে চায় না। আমরা চাবো ভালো করতে। ত্যাগী, ভালো, যোগ্য, তৎপর এবং যাদের আওয়ামী পরিবার। তাদের নিয়ে সংগঠন গোছাব। হাইব্রিড নেতা রাখা হবে না। প্রতিটি জেলাতে, প্রত্যকটা সংগঠনে এই ভাবে আমরা লোক নেব।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাত বলেন, সম্মেলনের তারিখ এখনো ঠিক করা হয়নি। আমাদের বলা হয়েছে, ডিসেম্বরের ১০ তারিখের মধ্যে সম্মেলন করার জন্য। নভেম্বরের শেষ দিকে আমাদের সম্মেলন হতে পারে।
যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ বলেন, ৩০ নভেম্বর মধ্যে সম্মেলন করার সম্ভাবনা আছে। তবে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলাপ করে তারিখ ঠিক করা হবে। ভিন্ন ভিন্ন ভাবে কেন্দ্রের সম্মেলনের এক সপ্তাহের মধ্যে মহানগর যুবলীগের সম্মেলন করা হবে।
কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার শামসুল হক রেজা বলেন, আমরা আগামী ৯ অক্টোবর মিটিং করে সম্মেলনের তারিখ ঠিক করব। সম্মেলন আগামী নভেম্বর মাসের শেষ দিকে হবে। মিটিংয়ের পরে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদের এর সঙ্গে দেখা করব। তারা ওকে বললেই সেই তারিখ ফাইনাল হবে। সুযোগ হলে কেন্দ্রীয় সম্মেলনের পর মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সম্মেলন করব।
আওয়ামী লীগ দফতরের তথ্য অনুযায়ী, ক্ষমতাসীন দলটির স্বীকৃত সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম ৯টি সংগঠনের মধ্যে পাঁচটিরই কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ নেই। এর মধ্যে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও বাংলাদেশ কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত হয়েছিল ২০১২ সালে। অর্থাৎ সাত বছর ধরে চলছে এই তিন সংগঠনের কমিটি। অন্যদিকে, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ ও আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন জাতীয় শ্রমিক লীগের কমিটির মেয়াদও শেষ হয়েছে অনেক আগেই। এসব সংগঠনের কাউন্সিল আয়োজন নিয়ে দলের মধ্যে আলোচনা চলছে দীর্ঘ দিন ধরে।
২০১৬ সালের ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের সর্বশেষ জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই হিসেবে আগামী ২৩ অক্টোবর এই কমিটির তিন বছর পূর্ণ হবে। চলতি অক্টোবরেই আওয়ামী লীগের পরবর্তী কাউন্সিল আয়োজনের পরিকল্পনা ছিল। তবে চলমান বিভিন্ন পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে গত ১৪ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক থেকে ঘোষণা দেয়া হয়, আগামী ২০ ও ২১ ডিসেম্বর জাতীয় কাউন্সিল আয়োজন করবে আওয়ামী লীগ।