মির্জা আব্বাসের সৃষ্টি শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান

রাজধানী ঢাকার অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণকারী সন্ত্রাসীদের অন্যতম জিসান আহমেদ ওরফে মন্টি সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন, যিনি শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান নামেই বেশি পরিচিত।
১৯৭১ সালে রাজধানীর মগবাজারের মধুবাগ গলিতে জন্ম জিসানের। অভিযোগ আছে, ১৯৯৬ সালের প্রথম দিকে বিএনপি সরকার আমলে দলটির নেতা মির্জা আব্বাসের প্রশ্রয়ে শুরু হয় তার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। ২০০৩ সালে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) একটি দল
জিসানকে গ্রেপ্তার করার জন্য মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে অভিযান চালায়। এ সময় জিসান ও তার বাহিনী ডিবির ইন্সপেক্টর আলমগীর হোসেনসহ দুজন পুলিশ কর্মকর্তাকে গুলি করে হত্যার পর পালিয়ে যায়। তারপর থেকেই দেশের সব মহলে জিসানের নাম আলোচনায় আসে। পরের দুই বছর বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপনে থেকেই চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাতেন তিনি। ২০০৫ সালে দেশ থেকে পালিয়ে ভারতে যান। সেখানে ছদ্মনামে (আকবর আলী) ভারতীয় পাসপোর্ট বাগিয়ে দেশের বাইরে থেকেই রাজধানীর অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণ করতে থাকেন।
সম্প্রতি ক্যাসিনোকাণ্ডে যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভুইয়া ও যুবলীগ নামধারী ঠিকাদার জি কে শামীম গ্রেপ্তার হওয়ার পর জিসানের নাম নতুন করে আলোচনায় আসে। শামীম ও খালেদকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করে জিসানের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পায় বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরপর ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে নতুন নামে জিসানের দুবাইয়ে অবস্থানের বিষয়ে নিশ্চিত হন তারা।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে সেখানকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন জিসান। গত বুধবার বিষয়টি জানতে পারে পুলিশ সদর দপ্তরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি)।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন গতকাল শুক্রবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, অনেক আগেই সন্ত্রাসী জিসানের বিরুদ্ধে রেড ওয়ারেন্ট জারি ছিল। সেই পরিপ্রেক্ষিতে তাকে গ্রেপ্তার করেছে সেখানকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এখন তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলছে।
যেভাবে গ্রেপ্তার জিসান : পুলিশ সদর দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা জানান, জিসানের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশের এনসিবি তথ্য বিনিময় করেছে। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই জিসানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে দুবাইতে। কয়েক মাস ধরেই তার ব্যাপারে এনসিবি দুবাই ও এনসিবি ঢাকার তথ্য বিনিময় চলছিল। ডিএমপির গোয়েন্দা শাখা থেকে জিসানের সাম্প্রতিক তথ্য ও ছবি পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠানোর পর এনসিবি দুবাই জিসানকে শনাক্তের কাজ শুরু করে। এরপর এনসিবি দুবাই পুলিশ সদর দপ্তরকে জানায়, তারা জিসানকে নজরদারির মধ্যে রেখেছে। নিশ্চিত হওয়ার জন্য এনসিবি দুবাই জিসানের সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য চায় এবং পুলিশ সদর দপ্তরকে জানায়, জিসান ভিন্ন নাম ব্যবহার করে দুবাইতে আছেন। তার কাছে ভারত ও ডমিনিকান রিপাবলিকের দুটি পাসপোর্ট রয়েছে। ভারতীয় পাসপোর্টে ছদ্মনাম আলী আকবর লেখা থাকলেও ডমিনিকান রিপাবলিকের পাসপোর্টে জিসান আহমেদ লেখা আছে। এরপর ঢাকা থেকে পাঠানো সর্বশেষ ছবির সঙ্গে তার চেহারার মিল খুঁজে পাওয়ার পর তাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় দুবাইয়ের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
পুলিশ সদর দপ্তরের এনসিবি শাখার অন্য এক কর্মকর্তা বলেন, জিসানকে গ্রেপ্তারের পরপরই এনসিবি দুবাই আমাদের খবর জানিয়ে দেয়। আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত হই। জিসান এখন দুবাইয়ের জুডিশিয়াল কাস্টডিতে আছে।
যেভাবে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু : অভিযোগ আছে, ১৯৯১-৯৬ সালে বিএনপি সরকার আমলে তৎকালীন প্রভাবশালী নেতা মির্জা আব্বাসের প্রত্যক্ষ প্রশ্রয়ে জিসানের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু হয়। এরপর মগবাজার থেকে শুরু করে একে একে মালিবাগ, শাহজাহানপুর, খিলগাঁও, বাড্ডা ও গুলশান পর্যন্ত আধিপত্য বিস্তার করেন তিনি। চিরকুট ও কাফনের কাপড় পাঠিয়ে বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে চাঁদাবাজি শুরু করেন। কেউ দিতে অস্বীকার করলে সন্ত্রাসী বাহিনী পাঠিয়ে হামলা ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটাতেন। ১৯৯৬-এর নির্বাচনে ক্ষমতার পালাবদল হলেও সন্ত্রাসী জিসানের প্রভাব ও দৌরাত্ম্য কমেনি। ২০০১ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তৈরি দেশের ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকায় নাম আসে জিসানের। তবে তাকে গ্রেপ্তার করতে পারছিলেন না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে ২০০৩ সাল পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দাপিয়ে বেড়ান জিসান ও তার বাহিনী।
২০০৩ সালে দুই পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা : একাধিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, জিসান ও তার বাহিনীর নানা ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ডে রাজধানীর সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা জিম্মি হয়ে পড়েছিলেন। তার ভয়ে প্রকাশ্যে কেউ মুখ খুলতে সাহস পেতেন না। তবে রাজধানীর বিভিন্ন থানা ও গোয়েন্দা শাখায় তার বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ, জিডি ও মামলা হয়েছিল। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৩ সালের ১৪ মে জিসানকে গ্রেপ্তার করার জন্য ডিবির একটি দল মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে অভিযান চালায়। এ সময় জিসান ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী পুলিশের ওপর গুলি চালিয়ে দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে পালিয়ে যায়।
আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের কমিটিতে জিসানের প্রভাব : ২০০৫ সালে দেশ থেকে পালিয়ে ভারতে গেলেও রাজধানী ঢাকার অপরাধজগতে প্রভাব ধরে রাখেন। কৌশলে ধীরে ধীরে নিজের বাহিনীর লোকজনকে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের বিভিন্ন এলাকার কমিটিতে ঢুকিয়ে দেন জিসান। তারা রাজনৈতিক পদ-পদবির আড়ালে নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে অব্যাহত রাখেন।
চাঁদাবাজি, জমি দখল ও টেন্ডারবাজির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কোটি কোটি টাকা বাইরে পাচার করে তারা। যার বেশিরভাগ অংশ জিসানের তহবিলে জমা হতে থাকে। ডিবির একাধিক কর্মকর্তা জানান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের প্রভাবশালী এক নেতা ও যুবলীগ নামধারী ঠিকাদার জি কে শামীমের ঘনিষ্ঠ বন্ধু জিসান। তাদের মাধ্যমেই যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তরসহ বিভিন্ন ওয়ার্ড কমিটিতে জিসানের ঘনিষ্ঠ লোকজন ঢুকে পড়ে। সম্প্রতি তাদের কয়েকজন র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হলেও বেশিরভাগ ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, দক্ষিণের নেতা বাবু ভ‚ঁইয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকার গরুর হাটের নিয়ন্ত্রণ নিতেন জিসান। বিদেশে বসেই সেসব হাটের টাকার ভাগ পেয়ে যেতেন জিসান। ঢাকা মহানগর যুবলীগ উত্তরের বিভিন্ন ওয়ার্ডেও রয়েছে তার ঘনিষ্ঠরা।
দুই দেশের পাসপোর্ট : পুলিশ সদর দপ্তরের এনসিবির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পলাতক এই শীর্ষ সন্ত্রাসী আলী আকবর নাম ধারণ করে ভারতের পাসপোর্ট ব্যবহার করে দুবাই থেকে বিভিন্ন দেশে যাতায়াত করতেন।
পাশাপাশি ডমিনিকান রিপাবলিকের আরেকটি পাসপোর্ট ব্যবহার করতেন তিনি, ওই পাসপোর্টে তার নাম ছিল জিসান আহমেদ। ওই কর্মকর্তা বলেন, আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা (ইন্টারপোল) ও সংশ্লিষ্ট দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি এড়াতেই জিসান ভিন্ন ভিন্ন দেশের পাসপোর্ট তৈরি করে আসল পরিচয় আড়ালের চেষ্টা করেন। দুবাইয়ে একাধিক আবাসিক হোটেলসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে তার। সেখানেই পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন তিনি।
এক গলিতেই চার সন্ত্রাসীর জন্ম : ডিএমপির গোয়েন্দা শাখার এক কর্মকর্তা জানান, মগবাজারে মধুবাগের এক গলিতেই রাজধানীর অপরাধজগতের চার সন্ত্রাসীর জন্ম হয়। তাদের অন্যতম জিসান। অন্য তিনজনও তার ঘনিষ্ঠ। তাদের মধ্যে সুব্রত বাইন ও রনি ওরফে মগবাজারের রনি ভারতে বসে ঢাকার অপরাধজগতে তৎপর রয়েছেন। আরেকজনের খোঁজ নেই দীর্ঘদিন। রাজধানীর অপরাধজগতে তারা একই সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেন বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
জিসানের বিরুদ্ধে অর্ধশতাধিক মামলা : প্রায় দুই যুগের সন্ত্রাসী জীবন ও তার বাহিনীর নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের ঘটনায় রাজধানীর বিভিন্ন থানায় অর্ধশতাধিক মামলা রয়েছে। ডিবির দুই কর্মকর্তা হত্যার পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে বিস্ফোরকদ্রব্য সংরক্ষণ, দুবাইয়ে অবস্থান করে ঢাকায় চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ ক্যাসিনো কারবার নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ আছে। তার বাহিনীতে আছে শতাধিক অস্ত্রধারী ‘ক্যাডার’। এই বাহিনীর মাধ্যমে খুন থেকে শুরু করে হামলা, হুমকি, চাঁদাবাজি, অপহরণ, দখল ও মারধরের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, জিসান ও তার বাহিনীর সদস্যদের নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের প্রোফাইল তাদের সংরক্ষণে রয়েছে। ওইসব তথ্য ইন্টারপোলের সংশ্লিষ্ট শাখায় সরবরাহ করা হয়েছে। ওইসব তথ্যের আলোকেই তাকে দুবাই থেকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা-তদবির চলছে। জানা গেছে, সম্প্রতি ঠিকাদারির নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে জি কে শামীমের সঙ্গে জিসানের সম্পর্কের অবনতি হয়। এর জের ধরেই শামীমকে হত্যার জন্য জিসান তার বাহিনীর সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এজন্য শামীম তার নিরাপত্তা বাড়িয়েছিলেন বলে র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন।
বিদেশে পলাতক জীবন : দুবাইতে গ্রেপ্তারের সময় ভারতীয় ও ডমিনিকান রিপাবলিকের দুটি পাসপোর্ট পাওয়া যায় জিসানের কাছে। ২০০৯ সালে একবার কলকাতা পুলিশের হাতে ভারতীয় পাসপোর্টসহ আটক হয়েছিলেন, যে পাসপোর্টে তার নাম ছিল আলী আকবর চৌধুরী। ছাড়া পেয়ে কলকাতায় বসেই ঢাকায় চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ শুরু করেন। সেখান থেকে ২০১১-১২ সালের দিকে ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে দুবাই চলে যান। ভারতীয় পাসপোর্টে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে তার ঠিকানা দেখান শারদা পল্লী, ঘানাইলা, মালুগ্রাম শিলচর, চাষার ও আসাম। তার বাবার ঘরে নাম লেখা ছিল হাবিবুর রহমান চৌধুরী, মায়ের নাম শাফিতুন্নেছা চৌধুরী, স্ত্রীর নামের ঘরে তিনি লিখেছিলেন রিনাজ বেগম চৌধুরী। পাসপোর্ট ইস্যুর স্থান দুবাই হিসেবে উল্লেখ রয়েছে। সূত্রমতে, দুবাইয়ে জিসানের রয়েছে দুটি রেস্টুরেন্ট। সেখানে তার গাড়ির ব্যবসার পাশাপাশি অন্যান্য আর্থিক কর্মকাণ্ড রয়েছে। শামীম ও শাকিল নামে তার দুই ভাই ব্যবসা দেখভাল করেন।
পলাতক অন্য শীর্ষ সন্ত্রাসীদের কে কোথায় : পুলিশ সদর দপ্তর ও ডিএমপির একাধিক কর্মকর্তা জানান, তালিকাভুক্ত ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর বেশিরভাগ এখনো দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। কয়েকজন আছেন দেশের বিভিন্ন কারাগারে। কয়েকজনকে ভারত থেকে আটকের পর দেশে ফিরিয়েও আনা হয়। তবে জামিন নিয়ে ফের দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন তারা। পলাতক সন্ত্রাসীদের মধ্যে পুরান ঢাকার মশিউর রহমান কচি রয়েছেন দুবাইতে। রাজধানীর অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে তার সঙ্গে জিসান ও জিসানের বাহিনীর নিয়মিত বৈঠক হয়। ভারতে অবস্থান করছেন সুব্রত বাইন, মগবাজারে রনি, মোল্লা মাসুদ ও মিরপুরের সন্ত্রাসী শাহাদাত। শীর্ষ সন্ত্রাসী বিকাশ রয়েছেন ইতালিতে। কারওয়ান বাজারের সন্ত্রাসী আশিক আছেন থাইল্যান্ড।