যৌন নির্যাতন : প্রতিবাদ করায় স্বামী-স্ত্রীকে বেঁধে নির্যাতন

স্ত্রীকে যৌন নির্যাতনের প্রতিবাদ করায় স্বামী দিনমজুর জালাল উদ্দীন (৪২) ও স্ত্রী শাবানা (৩৩) প্রভাবশালীদের হাতে অমানষিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তাদের রশি দিয়ে হাত-পা বেঁধে মারধর করেছে সেকেন্দার আলী, তার ভাই জেকের আলী ও তাদের লোকজন। রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার হামিরকুৎসা ইউনিয়নের কোনাবাড়িয়া গ্রামে সম্প্রতি এ ঘটনা ঘটে।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে জালালকে অজ্ঞান ও শাবানাকে দড়ি দিয়ে বাঁধা ঝুলন্ত অবস্থা থেকে উদ্ধার করে বাগমারা থানা পুলিশ। পরে তাদের চিকিৎসার জন্য স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
এ ঘটনায় আহত শাবানা বাদী হয়ে ৭ জনকে আসামী করে বাগমারা থানায় একটি মামলা করেছেন। এর পর থেকেই দিনমজুর জালাল উদ্দীন তার পরিবার নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। গতকাল ২৯ অক্টোবর, মঙ্গলবার বাগমারা প্রেসক্লাবে এসে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করেন তার স্ত্রী শাবানা।
শাবানা অভিযোগ করেন, গত ২১ অক্টোবর সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজের সময় সেকেন্দার আলী সেকেন (৪৫) ও তার ভাই জেকের আলী (৪২) পর্যায়ক্রমে তাদের বাড়িতে আসে। তারা দুই ভাই-ই শাবানাকে যৌন নির্যাতন করে। স্বামী জালাল উদ্দীন বাড়িতে ফিরলে তাকে তিনি ঘটনাটি জানান।
তখন অভিযুক্তদের বাড়িতে গিয়ে স্ত্রীকে যৌন হয়রানির বিষয়টি জানতে চাইলে ওই বাড়ির লোকজন জালালকে রশি দিয়ে বেঁধে বেধরক মারধর করে। চিৎকার দিয়ে ওই বাড়িতেই অজ্ঞান হয়ে যান জালাল।
বিষয়টি জানতে পেরে স্বামীকে বাঁচানোর জন্য এগিয়ে গেলে সেকেন্দার ও জেকের আলীর নির্দেশে শাবানাকেও রশি দিয়ে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে পুনরায় তার শ্লীলতাহানি ও নির্যাতন করে তাদের লোকজন। খবর পেয়ে এলাকাবাসী তাদের উদ্ধারে এগিয়ে গেলেও অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তাদের কাছে ভিড়তে দেয়া হয়নি।
পরে এলাকার লোকজন বিষয়টি ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনকে জানায়। চেয়ারম্যানের লোকজন ঘটনাস্থলে গেলে তাদেরও ধাওয়া দিয়ে তাড়িয়ে দেয়া হয়।
পরে চেয়ারম্যান বাগমারা থানা পুলিশকে বিষয়টি অবগত করেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় গৃহবধূ ও অজ্ঞান অবস্থায় তার স্বামীকে উদ্ধার করে। পরে তাদের চিকিৎসার জন্য বাগমারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে হামিরকুৎসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘অনেক চেষ্টার পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দিয়ে তাদের উদ্ধার করা হয়েছে।’ এমন নির্মম ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানান তিনি।
এ বিষয়ে বাগমারা থানার ওসি আতাউর রহমান বলেন, ‘ওই ঘটনায় থানায় একটি মামলা হয়েছে। এজাহারভুক্ত এক আসামীকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।’ অন্যদের গ্রেপ্তারে পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে বলেও নিশ্চিত করেন তিনি।