ঢাকা শুক্রবার, ১২ই ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯শে অগ্রহায়ণ ১৪৩২


বাংলাদেশ আর্ক সামিট ২০২৫ উদ্বোধন: টেকসই, স্থিতিশীল ও মানুষকেন্দ্রিক স্থাপত্যের নতুন দিগন্ত


প্রকাশিত:
১২ ডিসেম্বর ২০২৫ ০০:৫৫

আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি, খ্যাতনামা স্থপতি, শিল্পপতি ও চিন্তাবিদদের নিয়ে তিন দিনব্যাপী বাংলাদেশ আর্ক সামিট ২০২৫ বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) ঢাকায় উদ্বোধন করা হয়েছে।

ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্টস বাংলাদেশ (আইএবি) আয়োজিত এ বছরের সামিটের প্রতিপাদ্য “ক্র্যাফটিং স্পেস, শেপিং হ্যাবিট্যাট”, যা স্থাপত্যের রূপান্তরমূলক শক্তিকে—মানুষ, সমাজ ও নির্মিত পরিবেশ গঠনে তার ভূমিকা—উদ্ভাসিত করে।

সামিটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভিডিও বার্তা প্রধান করেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সামিটের আহবায়ক স্থপতি কাজী এম আরিফ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্য রাখেন স্থপতি ড: আবু সাঈদ এম আহমেদ প্রেসিডেন্ট আইএবি। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব স্থপতি আসাদ আলম সিয়াম। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন আইএবি এর সেক্রেটারী স্থপতি ড: মাসুদ উর রশিদ।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রীর উপদেষ্টা প্রফেসর ড. সি আর আবরার অংশগ্রহণকারীদের প্রতি উষ্ণ শুভেচ্ছা জানান এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্থাপত্যচর্চার একটি গতিশীল মঞ্চ তৈরি করার জন্য আইএবির প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, স্থাপত্য কেবল অবকাঠামো নির্মাণ নয়—“এটি মানুষের জীবন, আকাঙ্ক্ষা ও ভবিষ্যৎকে গড়ে তোলার একটি সৃজনশীল কর্মযজ্ঞ।”

সামিটে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া ও বাংলাদেশের বিশিষ্ট স্থপতি ও বিশেষজ্ঞরা অংশ নিচ্ছেন, যা বৈশ্বিক স্থাপত্য-আলোচনায় বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান নেতৃত্বের পরিচয় বহন করে। আগামী দুই দিনে সামিটে আলোচনা হবে—

(১) টেকসই নগরায়ন ও গ্রামীণ পুনরুজ্জীবন।
(২) জলবায়ু সহনশীলতা ও কমিউনিটি–কেন্দ্রিক নকশা।
(৩) উপকরণ ও প্রযুক্তির উদ্ভাবন।
(৪) ঘন-উষ্ণমণ্ডলীয় নগর নকশার চ্যালেঞ্জ নিয়ে।

দুটি উচ্চপর্যায়ের রাউন্ডটেবিল আলোচনায় গুরুত্ব পাবে—বর্তমান পেশাগত বাস্তবতায় নবীন স্থপতিদের প্রস্তুত করা, এবং প্রযুক্তিগত পরিবর্তন, লিঙ্গসমতা ও জটিল নীতিনিয়ন্ত্রণ–ব্যবস্থার সাথে খাপ খাওয়াতে স্থাপত্য ফার্মগুলোর সক্ষমতা উন্নয়ন।

প্রফেসর আবরার আইএবির পেশাগত সততা ও নিরপেক্ষতার প্রশংসা করেন—যে প্রতিষ্ঠানটি সবসময় মেধা, যোগ্যতা ও পেশাদারিত্বকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকদেরকে স্পষ্ট দক্ষতার মানদণ্ড পূরণ করার যে নীতি আইএবি অনুসরণ করে, তা স্থাপত্যশিক্ষা ও পেশাগত মানোন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, “শিক্ষা উপদেষ্টা হিসেবে এটি আমাদের দায়িত্বকে আরও জোরালো করে—যেসব বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপত্য শিক্ষা প্রদান করে, তারা যেন সর্বোচ্চ মান বজায় রাখে। আজকের আলোচনার ধারাবাহিকতা আমরা বজায় রাখব এবং বাংলাদেশের স্থাপত্যশিক্ষার মান উন্নয়নে একসাথে কাজ করব।”

এ বছরের সামিটের একটি বড় অর্জন হলো সাতটি দেশের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে দক্ষিণ এশিয়ার স্থপতিদের প্রথম আঞ্চলিক সম্মেলন, যা পরিবেশগত ও সাংস্কৃতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নতুন আঞ্চলিক সহযোগিতার দ্বার উন্মোচন করেছে।

সামিটে প্রদর্শনী ও বিল্ড এক্সপোতে উদ্ভাবনী প্রকল্প ও উপকরণের প্রদর্শন অনুষ্ঠিত হচ্ছে—যা সৃজনশীলতা ও শিল্প–উদ্ভাবনের সমন্বয়কে সামনে নিয়ে আসে। উপদেষ্টা আইএবির মহৎ সামাজিক উদ্যোগ—নিজস্ব সদস্যদের অর্থায়নে দেশের বিভিন্ন জেলায় অন্তত একশ’টি ঘর নির্মাণ—প্রশংসা করেন। এটি কোনো সরকারি বা বেসরকারি অনুদান ছাড়াই সম্পন্ন হচ্ছে।

এ বছর প্রায় ৮০০ নতুন স্থপতি আইএবিতে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন। তাদের উদ্দেশে প্রফেসর আবরার বলেন, “আপনাদের নৈতিকতা, সহমর্মিতা, উদ্ভাবনশীলতা ও জনকল্যাণের দায়িত্ববোধই গড়ে দেবে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নগর, কমিউনিটি ও ভূদৃশ্য।”

সমাপনী বক্তব্যে উপদেষ্টা আয়োজক, বক্তা, অংশগ্রহণকারী এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশ আর্ক সামিট ২০২৫ আমাদের দেশের টেকসই উন্নয়ন, স্থিতিশীল অবকাঠামো এবং জ্ঞানভিত্তিক ভবিষ্যতের প্রতি প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। এই সামিট সফল হোক, এবং এখানকার ধারণা ও আলোচনা আমাদের দেশ ও জনগণের কল্যাণে বাস্তব রূপ লাভ করুক।”