ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ৮ই মে ২০২৫, ২৬শে বৈশাখ ১৪৩২


মাঠে খেলতে যাওয়ায় শিশুকে পিটিয়ে মারল মাদ্রাসা শিক্ষক


৪ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:১৬

আপডেট:
৮ মে ২০২৫ ১৮:৪৩

কেরানীগঞ্জে শিক্ষকের নির্যাতনে সাত বছরের এক মাদ্রাসাছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষক হাফেজ মোহাম্মদ আব্দুল মোক্তাদিরকে গ্রেপ্তার করেছে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ।

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার এসআই ইমারন উকিল সাংবাদিকদের জানান, নিহত মো. শুভ হাসান (৭) ও তার ছোট ভাই মো. শান্ত হোসেন (৬) দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন দোলেশ্বর গ্রামে ইসলামিয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানায় নুরানি বিভাগে লেখাপড়া করে আসছিল। তারা মাদ্রাসায় চারতলার একটি কক্ষে থেকে পড়াশোনা করত। শুক্রবার দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে নিহত শুভ, ছোট ভাই শান্ত ও আরো দুজন ছাত্র মাদ্রাসা মাঠে খেলতে যায়। মাদ্রাসার নিয়ম অনুযায়ী বিকেল ৪টার আগে খেলা নিষেধ।

তিনি জানান, অভিযুক্ত শিক্ষক হাফেজ মোহাম্মদ আব্দুল মোক্তাদির তাদের মাঠে খেলতে দেখে তার কক্ষে ধরে নিয়ে আসেন। নির্ধারিত সয়ের আগে খেলতে যাওয়ায় চারজনকে মারধর করেন। মার খেয়ে তিনজন পালিয়ে গেলেও শুভ হাসান শিক্ষকের হাতে আটকে যায়। তিনজন পালিয়ে যাওয়ায় আব্দুল মোক্তাদির আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং শুভকে লাইটের স্ট্যান্ড দিয়ে পেটাতে থাকেন। একপর্যায়ে স্ট্যান্ডটি ভেঙে গেলেও তিনি থামেননি। বেদম মারধরে শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে শুভকে তিনি তার কক্ষে দিয়ে যান। কক্ষে এসে শুভ আর শান্তকে শাসিয়ে যান যে মারধরের কথা কাউকে বললে তাদের আরো মেরে মাদ্রাসা থেকে বের করে দেওয়া হবে।

পুলিশ আরো জানায়, এরপর শনিবার সকালে শুভর অবস্থা অনেক খারাপ হলে তার পরিবারকে খবর দেওয়া হয়। পরিবার এসে হাসপাতালে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক শুভকে মৃত ঘোষণা করেন। মাদ্রাসার আশপাশের লোকজন বিষয়টি জানতে পারলে তারা দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় খবর দেন।

অভিযুক্ত শিক্ষক হাফেজ মোহাম্মদ আব্দুল মোক্তাদিরের বিরুদ্ধে নিহতের খালা ঝুমুর আহমেদ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

ঝুমুর আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, নিহত শুভ হাসানের বাবার নাম মো. দেলোয়ার। তাদের গ্রামের বাড়ি বরিশালের উজিরপুর থানার শোলক গ্রামে। শুভর বাবা-মায়ের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেলে তার বাবা আরেকটি বিয়ে করেন এবং মা ওদের আমার কাছে রেখে সৌদি আরবে কাজ করতে চলে যান। আমি ওদের লেখা-পড়ার জন্য মাদ্রাসায় ভর্তি করে দিই। শুক্রবার বিকেলে সামান্য খেলতে যাওয়ার ঘটনায় ভাগনে শুভর ওপর মাদ্রাসা শিক্ষক হাফেজ মোহাম্মদ আব্দুল মোক্তাদির পাশবিক নির্যাতন চালায়।

শুভর ছোট ভাই শান্তর বরাত দিয়ে ঝুমুর জানান, মার খেয়ে শুভর পিঠে জখম হয়ে যায় এবং হাতের দুটো আঙুল ভেঙে যায়। শান্ত আর শুভ যেন কাউকে কিছু না বলে সে জন্য শিক্ষক তাদের ভয়ভীতিও দেখান। শনিবার গভীর রাত থেকেই শুভর অবস্থা ভালো ছিল না। বারবার খিঁচুনি দিচ্ছিল। ফজরের নামাজের সময় যখন শিক্ষকরা দেখে ও জানতে পারে তখন তারাও কোনো ব্যবস্থা নেননি। সকাল সাড়ে ৬টায় যখন ওর অবস্থা বেশি খারাপ হয়ে যায়, তখন পরিবারকে খবর দেওয়া হয়।

নিহত শুভর খালা আরো জানান, খবর পেয়ে প্রথমে আমরা ওকে আদ দীন হাসপাতালে নিয়ে যাই, সেখান থেকে ডাক্তাররা ওকে ফিরত দিলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ শাহ জামান বলেন, মাদ্রাসাছাত্র নিহতের ঘটনায় এলাকার লোকজন খবর দিলে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ মাদ্রাসায় গিয়ে ঘাতক শিক্ষক হাফেজ মোহাম্মদ আব্দুল মোক্তাদিরকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করে। তিনি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে নিহতের খালা বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। তার সর্বোচ্চে শাস্তির জন্য আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব।