ঢাকা শুক্রবার, ১৭ই মে ২০২৪, ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


মিরপুরে জোড়া খুনের ঘটনায় ২ জন গ্রেপ্তার


৫ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৩:০০

আপডেট:
১৭ মে ২০২৪ ২১:৪৭

মিরপুরে জোড়া খুনের ঘটনায় জড়িত ইউসুফ ও রমজান নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের (ডিবি) এক কর্মকর্তা জানান, বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকার বাইরে পালিয়ে যাওয়ার সময় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এ দুজন হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছে।

মিরপুর ২ নম্বরের এ ব্লকের ১১ নম্বর বাড়ির চতুর্থ তলার একটি ভাড়া করা ফ্ল্যাট থেকে গত মঙ্গলবার রাতে দুটি লাশ উদ্ধার করা হয়


পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার মোস্তাক আহমেদ  বলেন, এ ঘটনায় রহিমার মেয়ে রাশিদা বেগম বাদী হয়ে গতকাল সকালে হত্যা মামলা করেছেন। মামলার তদন্তে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। খুনের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করেছি। খুনের উদ্দেশ্যও জানতে পেরেছি। তদন্তে পাওয়া তথ্যগুলো যাছাই-বাছাই করা হচ্ছে। শিগগিরই আপনাদের জানানো হবে।
তিনি বলেন, এ জোড়া হত্যাকাণ্ডে একাধিক ব্যক্তি জড়িত ছিলেন, যাদের সবার নাম-পরিচয় জানা গেছে। তাদের গ্রেপ্তার করার জন্য বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালানো হচ্ছে। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্তে সংশ্লিষ্ট এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, দুই নারীকেই শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে।

এদের মধ্যে সুমি নামে এক নারী খুনের আগে ধর্ষণের শিকার হন।
তিনি বলেন, ‘এটি হ্যাবিচুয়াল সেক্সের আলামত। ’ ময়নাতদন্ত শেষে চিকিৎসক ডা. এ কে এম মাইনুদ্দীন মর্গের সামনে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের জানান, দুই নারীকেই শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে।

বুধবার দুপুর ১টার দিকে মায়ের লাশ গ্রহণের জন্য হাসপাতাল মর্গের সামনে অপেক্ষা করছিলেন রহিমা বেগমের একমাত্র মেয়ে রাশিদা বেগম ও তার স্বামী শাহ আলম। মর্গে ঢুকেই কফিনে মোড়ানো লাশ দেখে বিলাপ শুরু করেন রাশিদা। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলতে থাকেন, ‘কী সিন দেখলাম গো। এইটা কি পাওনা ছিল? কেন আমার কাছে তোমারে রাখলাম না। আমারে মাফ করে দিও মা। ’ কান্না থামিয়ে তিনি  বলেন, ‘যারে সন্দেহ করা হয়েছে তারে তো পুলিশ ধরেছে। কারা কেন মেরেছে কিছুই জানি না। ’

রাশিদার স্বামী শাহ আলম বলেন, ‘বছরখানেক আগে শাশুড়িকে প্রায় ৯ মাস আমার নারায়ণগঞ্জের বাসায় রেখেছিলাম। মেয়ের বাসায় তার ভালো না লাগায় তিনি ফের মিরপুরে চলে যান। সেখানে একাই থাকতেন। সোহাগ নামে এক ছেলে মাঝেমধ্যে বাজার করে দিত। এছাড়া একজন ছুটা কাজের বুয়া কাজ করত। তার সঙ্গে মাঝেমধ্যে মেয়ের যোগাযোগ হতো। 


রাশিদা বলেন, বাবা মারা যাওয়ার পর মা মোতালিব হোসেন মিঠু নামে আরেকজনকে বিয়ে করেন। কিছুদিন সংসার করার পর সেই ব্যক্তিও তাকে ছেড়ে দিয়ে অন্যত্র বিয়ে করেন। তারপর থেকেই মা একা একা বাসায় থাকতেন। মিরপুর ২ নম্বরের এ ব্লকের ১১ নম্বর বাড়ির চতুর্থ তলার একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকতেন রহিমা বেগম। তবে ওই বাড়ির ভাড়া দিতেন কে সে বিষয়ে কোনো তথ্য জানাতে পারেননি তারা।

বাড়ির একাধিক প্রতিবেশী নাম-পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ১১ নম্বর বাড়ির চতুর্থ তলায় বিভিন্ন বয়সী অচেনা মানুষজনের আনাগোনা ছিল। তারা সেখানে কেন যেতেন, সে বিষয়ে কিছু না দেখলেও লোকমুখে শুনেছেন, কাজের মেয়ের পরিচয়ের আড়ালে অসামাজিক কর্মকাণ্ড চলত।

সিআইডির এক কর্মকর্তা  বলেন, ঘটনাস্থল থেকে জন্মনিরোধক সামগ্রী (একাধিক কনডম) উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া সুমি যে কক্ষে থাকতেন সেই কক্ষ থেকে কাপড়-চোপড় উদ্ধার করে পরীক্ষা করা হচ্ছে। তার মতে, খুনের আগে সুমি ধর্ষণের শিকার হতে পারেন। উদ্ধার করা এসব আলামতের পরীক্ষার সূত্র ধরেই খুনিদের শনাক্ত করার কাজ চলছে।

রহিমা বেগমের জীবনযাপন বিষয়ে জানতে চাইলে তার মেয়ে রাশিদার স্বামী শাহ আলমের ভগ্নিপতি দিদার মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, রহিমা বেগমের শরীরে নানা ধরনের রোগব্যাধি ছিল। এর জন্য প্রচুর ওষুধ লাগত। এছাড়া তার প্রতিদিন প্রায় এক থেকে দেড় প্যাকেট দামি সিগারেট লাগত। বাসায় একা একা থাকলেও এসবের খরচ জোগাতেন কে বা কারা তার কিছুই জানেন না।

রহিমা বেগমের স্বজনরা জানান, তাদের গ্রামের বাড়ি যশোরে। তবে সেখানে লাশ না নিয়ে মেয়ের শ্বশুরবাড়ি নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানার গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়েছে।

শাহ আলম জানান, বাসায় কিছু নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার ছিল। এসবের কারণেই কাজের ছেলে সোহাগ তাদের হত্যা করেছে বলে সন্দেহ করছেন তারা।

রহিমার বাবার নাম মৃত দুধ মিয়া। মাতার নাম মৃত কুলসুম বেগম। গ্রাম ও থানা অজ্ঞাত, জেলা নরসিংদী। সুমির পিতার নাম মো. কবির ও মাতার নাম নাসিমা। তাদের বাড়ি পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া থানার বাদরপুর গ্রামে। বর্তমান ঠিকানা দেওয়া হয়েছে যে বাড়ি থেকে লাশ উদ্ধার হয়েছে সেই মিরপুরের ২ নম্বর সেকশনের এ ব্লকের ১১নং বাসা।

সুমির সুরতহাল প্রতিবেদনে যা পাওয়া গেছে : সুমির মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। তার পরনে ছিল নীল কালারের টি-শার্ট ও গোলাপি রঙের সালোয়ার। তার মুখ খোলা ছিল, দাঁত দেখা গেছে। উভয় ঠোঁটে রক্তের দাগসহ বাম পাশে শুকনা রক্তের দাগ পাওয়া গেছে। গলার উভয় পাশে কালো দাগ আছে। পিঠে জমাট রক্তের কালো দাগ ছিল। তবে মর্গ থেকে তার লাশ গ্রহণের জন্য কেউ আসেনি।

মিরপুর মডেল থানার এসআই শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘তাহমিনা নামে সুমির এক বোনের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয়েছে, তবে তিনিও মর্গে আসেননি।

রহিমার সুরতহাল প্রতিবেদনে যা পাওয়া গেছে : তার বাম গালে কাটা দাগ, জিহ্বা ও উভয় ঠোঁটে রক্তের দাগ আছে। মুখ বন্ধ ছিল। বামপাশ দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ার চিহ্ন পাওয়া গেছে। ঘাড়ের বামপাশে ছিল দাগ। বুক ও পেট স্বাভাবিক থাকলেও দুই হাত শরীরের সঙ্গে লাগানো অবস্থায় দেখা গেছে।