বিএনপিতে ব্যাপক মনোনয়ন বাণিজ্য

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যাপক মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে বিএনপির বিরুদ্ধে। মনোয়ন থেকে বাদ পড়া নেতারা বলছেন, প্রার্থী বাছাইয়ের দায়িত্ব থাকা জ্যেষ্ঠ নেতারা যোগ্যদের বাদ দিয়ে নিজ অনুসারীদের মনোনয়ন দিয়েছেন। বিএনপির গুলশান কার্যালয়ের কর্মকর্তারা মনোনয়ন পেলেও আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকা রাখা কয়েকজন নেতা বঞ্চিত হয়েছেন বলেও অভিযোগ তাদের।
ভুক্তভোগী নেতারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, বিএনপি কার্যালয়ে প্রবেশ থেকে মনোনয়নের চিঠি হাতে পাওয়া পর্যন্ত ‘ঘাটে ঘাটে’ টাকা দিতে হয়েছে। দলের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতাও বড় অঙ্কের টাকা নিয়েছেন।
এ কারণে দলের মনোনয়নপ্রাপ্ত নেতার পরিসংখ্যান পর্যন্ত নেই।
রাজধানীর গুলশান এলাকার কয়েকজন নেতা অভিযোগ করে বলেন, ঢাকা-১৭ আসনে শওকত আজিজ রাসেল নামের একজন বিএনপির মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। দলে তার কোনো পদ নেই। তিনি কখনও বিএনপি করেননি। তিনি নোয়াখালী-৩ আসনে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন, গুলশান কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে পেয়ে যান ঢাকা-১৭ আসনের টিকিট। অভিযোগ রয়েছে, তিনি টাকার বিনিময়ে মনোনয়ন পেয়েছেন।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ মঞ্জুর হোসেন এ অভিযোগ করেছেন।বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা জানান, গুলশান কার্যালয় থেকে টেলিফোন করে তাদের মনোনয়নের প্রত্যয়নপত্র নিতে বলা হয়। গুলশান কার্যালয়ের কর্মকর্তা পরিচয় দেওয়া তিনজন ছাড়াও একজন ভাইস চেয়ারম্যানের সহকারী এবং একজন সিনিয়র নেতার ব্যক্তিগত সহকারী তাদের ফোন করেন। কার্যালয়ের এই ‘সিন্ডিকেট’ তাদের মনোনয়নপত্র দেওয়ার বিনিময়ে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করে।
বিএনপি নেতারা বলছেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের স্বাক্ষর করা মনোনয়নপত্র কার্যালয়ের দ্বিতীয়তলা থেকে নিচতলায় আসার পর গায়েব হয়ে যায়। পরে প্রার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার বিনিময়ে মনোনয়নপত্র দেয় ‘সিন্ডিকেট’। আবার অনেক ক্ষেত্রে একই আসনের প্রভাবশালী প্রার্থীদের সঙ্গে যোগসাজশ করে মনোনয়নপত্র গায়েব করার ঘটনাও ঘটেছে। এ রকম ঘটনায় অনেক ক্ষেত্রে দলের মহাসচিব দ্বিতীয়বার মনোনয়নপত্র দেন। রাজবাড়ী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ ও চুয়াডাঙ্গা জেলার বিএনপির সদস্য শরীফুজ্জামান শরীফের ক্ষেত্রে এমন ঘটনা ঘটে। হারুন অর রশিদ জানান, তার প্রথম চিঠিটি হারানো গেছে বলে গুলশান কার্যালয় থেকে বলা হয়েছিল। তবে কোনো আর্থিক লেনদেন ছাড়াই দ্বিতীয় চিঠি পেয়েছেন।
নেতারা আরো জানিয়েছেন, ‘সিন্ডিকেটে’র দুই নেতার ব্যক্তিগত সহকারী দেশের বিভিন্ন জেলার প্রার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতেন। বাকি ৩জন তাদের কাছ থেকে আর্থিক লেনদেন করতেন। এ ‘সিন্ডিকেটে’র বিরুদ্ধে মহাসচিবের স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া প্রত্যয়নপত্র বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। কুমিল্লা-১১ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী কামরুল হুদা এর শিকার হয়েছেন। এ কারণে তিনি মনোনয়ন জমা দেননি। তার মতো কয়েকজনের কাছে ভুয়া প্রত্যয়নপত্র বিক্রির ঘটনা ঘটেছে। গুলশান কার্যালয়ের ‘সিন্ডিকেট’ এবং দলের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতার রোষানলে পড়া বেশ কয়েকজন প্রার্থী প্রত্যয়নপত্র নিতে পারেননি।
বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, এসব অভিযোগ তদন্ত করে দায়ীদের শাস্তি দিতে নির্দেশ দিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
মনোনয়ন বঞ্চিত হেভিওয়েট নেতাদের মধ্যে রয়েছে- ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান, সাবেক এমপি লায়ন হারুন অর রশিদ, নাজিমউদ্দিন আহমেদ, অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার, সৈয়দ সাদাত আহমেদ, আশরাফউদ্দিন নিজানসহ আরও কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা ও সাবেক এমপি মনোনয়ন পাননি।