ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ৮ই মে ২০২৫, ২৬শে বৈশাখ ১৪৩২


আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের ব্যাংক জব্দ

এত অভিযোগ তবুও অধরা


৩০ অক্টোবর ২০১৯ ১৩:২২

আপডেট:
৩০ অক্টোবর ২০১৯ ১৩:২৫

 

আজিজ মোহাম্মদ ভাই। কখনও চলচ্চিত্রের রঙিন দুনিয়ায় প্রভাবশালী প্রযোজক। কখনও শিল্পপতি-ব্যবসায়ী। আবার কখনও মাফিয়া ডন। এমনকি জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সালমান শাহ ও সোহেল চৌধুরী হত্যাকাণ্ডে তার জড়িত থাকারও অভিযোগ ব্যাপকভাবে গুঞ্জরিত হয়। এসব মিলিয়ে রহস্যময় এই ব্যক্তি বিগত প্রায় তিন যুগ ধরেই ব্যাপক বিতর্কিত বা আলোচিত নাম। কিন্তু এত অভিযোগের পরও তিনি রয়ে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। গত বছরও শেয়ার কেলেঙ্কারির এক মামলায় আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে গ্রেফতারে পরোয়ানা জারি করেছিল পুঁজিবাজার বিষয়ক ট্রাইব্যুনাল। কিন্তু দীর্ঘদিনেও তাকে গ্রেফতারে তেমন কোনো উদ্যোগই লক্ষ করা যায়নি।

সর্বশেষ গত রোববার ঢাকার গুলশানে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ ও ক্যাসিনোসামগ্রী উদ্ধারের ঘটনায় থানায় দুটি মামলা হলেও কোনোটিতেই আসামি করা হয়নি তাকে। তবে মামলার তদন্তে তার জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পরিচালক (গোয়েন্দা ও অপারেশন্স) ডিআইজি ড. এএফএম মাসুম রাব্বানী।

তবে গুলশানের বাসায় অভিযানের পর এবার বিতর্কিত ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সব ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি আজিজের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবও জব্দ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিআইএফইউ) থেকে সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীর কাছে পাঠানো চিঠিতে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে ৩০ দিনের জন্য ব্যাংক হিসাব জব্দ করতে বলা হয়েছে। এই ৩০ দিন এসব ব্যাংক হিসাবে কোনো টাকা তোলা কিংবা স্থানান্তর করা যাবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

ওয়ান-ইলেভেনের পর বিদেশে পাড়ি জমানো আজিজ মোহাম্মদ ভাই বর্তমানে থাইল্যান্ডে অবস্থান করছেন। থাইল্যান্ডসহ দুবাই, ভারত, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, হংকং, সিঙ্গাপুরে রয়েছে তার হোটেল, বার ও রিসোর্ট ব্যবসা। বাংলাদেশেও অলিম্পিক ব্যাটারি, অলিম্পিক বলপেন, অলিম্পিক ব্রেড অ্যান্ড বিস্কুট, এমবি ফার্মাসিউটিক্যালস ও এমবি ফিল্মসহ আরও কিছু প্রতিষ্ঠানের মালিক আজিজ মোহাম্মদ ও তার পরিবার। আজিজ মোহাম্মদ ভাই দীর্ঘ সময় ধরেই বিদেশে থাকলেও তার স্ত্রী নওরীন মাঝেমধ্যে দেশে আসেন।

অনেকেই বলেছেন, আজিজ মোহাম্মদ ভাই বিদেশে থাকলেও দেশের চলচ্চিত্র, মাদক সাম্রাজ্য ও ক্যাসিনোসহ নানা ক্ষেত্রে তার পরোক্ষ সক্রিয়তা রয়েছে। আন্ডার ওয়ার্ল্ডের মাফিয়া ডন ভারতীয় নাগরিক দাউদ ইব্রাহিমের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে নিয়ে রয়েছে চিত্রজগতের নানা চাঞ্চল্যকর গুঞ্জন।

এর মধ্যে গুরুতর অভিযোগ হিসেবে রয়েছেÑ চিত্রনায়ক সালমান শাহ ও সোহেল চৌধুরী হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে তার জড়িত থাকার অভিযোগ। ঢাকায় একটি পার্টিতে সালমান শাহর স্ত্রী সামিরার সঙ্গে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের অন্তরঙ্গ মুহূর্ত নিয়ে সেই অভিযোগ আরও ঘনীভূত হয়েছিল। কথিত আছে, ওই পার্টিতে সামিরাকে চুমু দিয়েছিলেন আজিজ মোহাম্মদ ভাই। ওই সময় উপস্থিত সালমান শাহ চরম ক্ষুব্ধ হয়ে আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে চড় মেরেছিলেন। এ ঘটনার কিছুদিন পরই সালমান শাহর রহস্যজনক মৃত্যু হয়।

ধারণা করা হয়, ওই পার্টির রেষ হিসেবেই সালমান শাহ প্রাণ হারিয়েছেন। এছাড়া সোহেল চৌধুরীকে বনানীতে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যার ঘটনার পরও নেপথ্যে এই আজিজের জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে। কিন্তু কোনো ঘটনারই স্পষ্টভাবে কোনো ব্যাখ্যা দেননি রহস্যমানব আজিজ মোহাম্মদ ভাই। সর্বশেষ গত রোববার গুলশানের বাসায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অভিযানে বিদেশি মদ ও ক্যাসিনোসামগ্রী জব্দ হওয়ার পর নতুন করে আলোচনায় এসেছেন আজিজ মোহাম্মদ ভাই।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পরিচালক (গোয়েন্দা ও অপারেশন্স) ডিআইজি ড. এএফএম মাসুম রাব্বানী সময়ের আলোকে বলেন, আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের বাড়িতে অভিযানকালে মদ ও ক্যাসিনোসামগ্রী জব্দের পাশাপাশি দুই কেয়ারটেকারকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দুজনসহ আজিজ মোহাম্মদের এক ভাতিজার বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করা হয়েছে।

ডিআইজি মাসুম রাব্বানী বলেন, গ্রেফতারকৃতদের রিমান্ডে নেওয়া হবে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একটি কমিটিও গঠন করা হবে। রিমান্ডে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আজিজ মোহাম্মদের বাসায় এসব মদ ও ক্যাসিনো-কারবার সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করা হবে। এ ক্ষেত্রে আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ যারই সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে তার বিরুদ্ধেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।