"মুনিয়া মারা গেছে, কিন্তু মেঘনা বেঁচে আছে।"

"মুনিয়া মারা গেছে, কিন্তু মেঘনা বেঁচে আছে।"—এই দৃপ্ত উচ্চারণে নিজের লড়াইয়ের কথা জানালেন মিস আর্থ বাংলাদেশ-২০২০ বিজয়ী মডেল মেঘনা আলম। বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক এক সৌদি রাষ্ট্রদূতের বিরুদ্ধে তিনি সম্মানহানি, মানসিক নির্যাতন এবং মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর মতো গুরুতর সব অভিযোগ তুলেছেন।
এক দীর্ঘ বিবৃতিতে তিনি তাদের সম্পর্ক, পরবর্তী সময়ে সৃষ্ট সংকট এবং ন্যায়বিচারের জন্য তার অনড় অবস্থানের কথা জানিয়েছেন, যা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
মেঘনা তার বিবৃতিতে স্পষ্ট করেছেন, তিনি কেবল একজন মডেল বা প্রেমিকা নন, বরং আত্মমর্যাদায় বলীয়ান এক নারী। তিনি বলেন, “হ্যাঁ, সাবেক সৌদি রাষ্ট্রদূত আমার প্রেমিক ছিলেন। কিন্তু তার সরকারি গাড়ি, বাড়ি বা ক্ষমতা আমাকে কখনোই প্রভাবিত করতে পারেনি। আমি কেবল সেই পুরুষদের দ্বারা প্রভাবিত হই যারা আমার জন্য বিশাল ত্যাগ স্বীকার করতে পারে, তাদের যা আছে তা দিয়ে নয়।”
সম্পর্কের টানাপোড়েন ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ
মেঘনা জানান, তিনি রাষ্ট্রদূতের দেওয়া প্রতিশ্রুতিসহ আংটি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন এবং তার স্ত্রীর কাছেও সম্পর্কের বিষয়টি সততার সাথে তুলে ধরেন। এরপর থেকেই মূলত সংকটের শুরু। তার অভিযোগ, পরিস্থিতি জটিল হতে শুরু করে যখন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক (ডিজি) এবং রাষ্ট্রদূতের এক অধস্তন কর্মকর্তা তার নামে গর্ভপাতের মতো ভয়াবহ গুজব ছড়াতে শুরু করেন। মেঘনা বলেন, “এটি অসম্ভব, কারণ আমি রাষ্ট্রদূতকে কখনোই সেভাবে আমার সঙ্গে থাকার অনুমতি দিইনি।”
এই সম্মানহানিকর প্রচারণার পর তিনি একটি মর্যাদাপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে নিজের নাম পরিষ্কার করার দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু তার অভিযোগ, সমাধান না করে রাষ্ট্রদূত তাকে উপহার পাঠিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন, যা তিনি প্রত্যাখ্যান করেন।
মিথ্যা মামলা ও চূড়ান্ত সংঘাত
মেঘনা জানান, যখন তার সম্মান রক্ষার কোনো পথই খোলা ছিল না, তখন তিনি রাষ্ট্রদূতকে জানান, যদি বিষয়টি সামাজিকভাবে সমাধান না হয় এবং তার নামে কুৎসা রটনাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তবে তিনি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করবেন। তিনি বলেন, “এই কথা জানানোর ঠিক পরের রাতেই আমাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় এবং আমার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির একটি মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়।”
মেঘনা দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, “আমি কখনোই তার কাছে টাকা চাইনি বা নিইনি। বহুবার তিনি আমার ব্যাগে টাকা রাখার চেষ্টা করলে আমি তাকে তিরস্কার করেছি এবং সব ফিরিয়ে দিয়েছি। কারণ আমি সত্য ও মর্যাদার একজন নারী। আমার গল্পে আমিই ধনী পুরুষ; হৃদয়ে ধনী, পকেটেও।”
ন্যায়বিচারের জন্য হুঁশিয়ারি
মেঘনা জানিয়েছেন, এই ঘটনার সমস্ত প্রমাণ তিনি ইতিমধ্যে গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) জমা দিয়েছেন। এছাড়া এর একাধিক কপি দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংস্থা, গণমাধ্যম এবং প্রভাবশালী নেতাদের কাছে পাঠিয়েছেন। তিনি তিন মাসের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, “যদি আমার বা আমার পরিবারের কিছু হয়, অথবা ৩ মাসের মধ্যে আমার বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা না হয়, তাহলে তারা জানে কী করতে হবে।”
তিনি তার সম্মানহানি, মিথ্যাচার ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন। তার লড়াইকে তিনি শুধু ব্যক্তিগত নয়, বরং ক্ষমতার দ্বারা নির্যাতিত প্রতিটি মানুষের লড়াই হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, “আমি নতুন বাংলাদেশ। আমি বাংলাদেশের সেই প্রজন্মের প্রতিনিধি যারা সাহসী, সৎ, নির্ভীক এবং অদম্য।”
#ProtectMeghna ও #DroptheFalseCaseAgainstMeghna হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের জন্য সুরক্ষা ও ন্যায়বিচার চেয়েছেন। ঘটনাটি এখন দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক মহলেও মনোযোগ আকর্ষণ করতে শুরু করেছে।