ঢাকা মঙ্গলবার, ৬ই মে ২০২৫, ২৪শে বৈশাখ ১৪৩২


শোভন রাব্বানীর বিরুদ্ধে আ. লীগ নেতাদের অধিকাংশ অভিযোগই মিথ্যা, শর্ত মানলেই ক্ষমা!


১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১২:১৩

আপডেট:
১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১২:১৪

::উৎপল দাস::

গত এক সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের চলমান সংকটে অধিকাংশ আওয়ামী লীগ নেতাই শেখ হাসিনা মনোনীত সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর পাশে নেই। আজ শনিবার ছাত্রলীগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলেও জানিয়েছেন সংগঠনটির সোনালী দুঃসময়ের অহংকার ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবেন ছাত্রলীগের সর্বোচ্চ অভিভাবক ও পরিপূর্ণ গঠনতন্ত্র হিসাবে খ্যাত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এদিকে, আওয়ামী লীগের হাই কমান্ডের নির্ভরযোগ্য সূত্র ভোরের পাতাকে নিশ্চিত করেছে, শনিবার রাতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্য নির্বাহী কমিটির সভার আলোচনায় ছাত্রলীগের এসব বিষয় ঠাঁই পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। কেননা গত শনিবার আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের এক সভায় অনির্ধারিত আলোচনায় ছাত্রলীগের দুই নেতার কার্যকলাপ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বর্তমান কমিটি ভেঙে দেয়ার মতো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না দিলেও আওয়ামী লীগের কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা গণমাধ্যমকে এমন তথ্যই দিয়েছেন। যদিও গত রোববারই ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, কমিটি ভেঙে দেয়ার মতো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

এদিকে, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের অনুষ্ঠানে শোভন রাব্বানীর দেরিতে উপস্থিত হওয়ার বিষয়টি নিয়ে কথা উঠে। কিন্তু প্রকৃত সত্য হচ্ছে তোফায়েল আহমেদ ডাকসু নির্বাচনের আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত হয়েছিলেন। তাকে সময়মতোই সম্মানের সাথে ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন। ওই অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে অতিথিই করা হয়নি। কিন্তু ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের অগ্রজ বর্ষীয়ান নেতাকে সালাম দিতে চলে যান শোভন ও রাব্বানী। এটাইকেই আওয়ামী লীগের নেতারা সিনিয়র আওয়ামী লীগ নেতাকে অবমাননা করেছেন বলে দলের সভানেত্রীর কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। তবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে তিন ঘন্টা বসিয়ে রাখার বিষয়ে প্রথমেই ক্ষমা চেয়েছেন দুজনই। তবে তার আগের রাতে সাংগঠনিক কাজে তারা ঢাকার বাইরে থেকে গভীর রাতে ফেরায় সময় মতো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারেননি। এমনকি পুরান ঢাকার রাস্তায়ও ব্যাপক যানজট ছিল।

এছাড়া সকালে ঘুম থেকে উঠে না এবং নিয়মিত মধুর ক্যান্টিনে যাচ্ছেন না ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এমন অভিযোগ করা হয়। কিন্তু গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ছাত্রলীগের শোভন-রাব্বানী সকালে প্রায় প্রতিটি অনুষ্ঠানেই যোগ দিয়েছেন। নেতৃত্বে আসার পর থেকে মোট ৪১ টি অনুষ্ঠান সকাল ৭ টা থেকে ৯ টার মধ্যে ধানমন্ডি ৩২, বনানী কবরস্থান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে ৪০ টি অনুষ্ঠানেই তারা উপস্থিত ছিলেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। শুধুমাত্র ঈদ পরবর্তী সময়ে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে শ্রর্দ্ধাঘ্য অর্পণ করার একটি অনুষ্ঠানে শোভন রাব্বানী অনুপস্থিত ছিলেন।

এদিকে, গত এক সপ্তাহ ধরে শোভন রাব্বানী নিজেদের ভুলগুলো শুধরে নিয়মিতই মধুর ক্যান্টিনে আসছেন। একটি শৃঙ্খলিত জীবনাচরণের মধ্যে তাদের চলতে দেখা যাচ্ছে।

সবচে গুরুতর যে অভিযোগটি শোভন রাব্বানীর বিরুদ্ধে উঠেছে তা হলো জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছ থেকে ২ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করা। কিন্তু এ সংক্রান্ত কোনো চাঁদার ভাগ শোভন রাব্বানী কেউই পাননি। এমনকি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ফারজানা ইসলাম নিজেই এখন সেই মেগা প্রকল্পে স্বামী ও সন্তানের মাধ্যমে অনৈতিক সুবিধা বা অর্থ আদায় করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তার নিজের এলাকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি বাণিজ্যের অভিযোগ করেন। তবে এই অভিযোগে অভিযুক্ত সেই বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী দুজনই অস্বীকার করেছেন।

এদিকে, আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কাছে দলীয় সিনিয়র নেতারা যেসব অভিযোগ করেছেন শোভন ও রাব্বানীর বিরুদ্ধে সেগুলোর বেশির ভাগই মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় এ যাত্রায় শেখ হাসিনার কাছে ক্ষমা পেয়ে যাচ্ছেন এমন আভাসও দিয়েছে নির্ভরযোগ্য সূত্র। সূত্রটি আরো জানিয়েছে, শোভন ও রাব্বানীকে কয়েকটি শর্তে প্রধানমন্ত্রী ক্ষমা করার আভাস দিয়েছেন। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম শর্ত হচ্ছে: ইতিমধ্যেই তদন্তে প্রমাণিত বির্তকিত ছাত্রলীগ নেতাদের বাদ দিয়ে সেখানে যোগ্যদের পদায়ন করতে হবে। এছাড়া ব্যাক্তিগত জীবনাচরণে আরো বেশি সংযত হয়ে চলতে হবে। যেসব জেলা কমিটি নিয়ে ঝামেলা রয়েছে সেগুলো নিয়ে সিনিয়র আওয়ামী লীগ নেতা, দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে সমন্বয় করে সংগঠনকে গতিশীল করতে হবে।

 sorce: dailyvorerpata.com/