সম্রাট এখন সাধারণ বন্দির সেলে

ক্যাসিনো হোতাসহ চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজির গডফাদার হিসেবে পরিচিত যুবলীগের প্রভাবশালী নেতা (বহিষ্কৃত) ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটকে রাখা হয়েছে কারাগারের সাধারণ বন্দিদের সেলে। দুর্দান্ত প্রতাপশালী এই যুবলীগ নেতা সরকারি হাসপাতালে সাত সদস্যের মেডিকেল বোর্ডের ‘ভিআইপি’ চিকিৎসাসেবা পেলেও কারাগারে আপাতত সাধারণ বন্দির মতো করেই থাকতে হচ্ছে তাকে।
শনিবার দুপুরের আগে রাজধানীর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতাল থেকে সম্রাটকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ফের কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে বুকে ব্যথা অনুভব করায় সম্রাটকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে তাকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে গঠিত সাত সদস্যের মেডিকেল বোর্ড সম্রাটকে পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছিলেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর গতকাল সকালে মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। এরপরই সরাসরি কারাগারে পাঠানো হয় ক্যাসিনো সম্রাটকে।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ইকবাল কবীর চৌধুরী সময়ের আলোকে জানান, সুস্থ বোধ করায় সম্রাটকে হাসপাতাল থেকে কারাগারে আনা হয়েছে। কারাগারে নেওয়ার পর সম্রাটকে সাধারণ বন্দি হিসেবেই সাধারণ বন্দির সেলে রাখা হয়েছে। একজন সাধারণ বন্দি যেসব সুবিধা পেয়ে থাকেন, সম্রাট শুধু সেগুলোই পাচ্ছেন।
কারাগারের অন্য একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, সম্রাট যুবলীগের এক সময়ের (বহিষ্কারের আগ পর্যন্ত) ব্যাপক প্রভাবশালী ব্যক্তি হলেও স্বাভাবিকভাবে বিশেষ বন্দি সুবিধা বা ডিভিশন পাওয়ার মতো কোনো সুযোগ তার ক্ষেত্রে নেই। এ কারণে তিনি ভিআইপি বন্দির মর্যাদা পাচ্ছেন না। সম্রাট কারাগারের সাধারণ বন্দিদের সেল সূর্যমুখীতে রয়েছেন বলেও জানান কারাগারের সেই কর্মকর্তা। যেখানে থাকছে না অভিজাত বা আরামদায়ক কোনো ব্যবস্থা।
৬ অক্টোবর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটকে অবৈধ ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চালিয়ে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের আলকরা ইউনিয়নের কুঞ্জুশ্রীপুর গ্রাম থেকে গ্রেফতার করে র্যাব। এ সময় তার সহযোগী ও যুবলীগের একই কমিটির সহসভাপতি এনামুল হক আরমানকেও গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পরই ঢাকায় এনে সম্রাটকে সঙ্গে নিয়েই কাকরাইলে তার অফিসে চলে অভিযান। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা অভিযান শেষে সম্রাটের অফিস থেকে গুলিসহ একটি বিদেশি পিস্তল, ১১৬০টি ইয়াবা, ১৯ বোতল বিদেশি মদ, দুটি ক্যাঙ্গারুর চামড়া ও নির্যাতন করার বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম পায় র্যাব।
এ অভিযানে ক্যাঙ্গারুর চামড়া পাওয়ার কারণে সম্রাটকে তাৎক্ষণিকভাবে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ) আইনে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। সেই সন্ধ্যার দিকেই সম্রাটকে কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। মাত্র কয়েক ঘণ্টার মাথায় পরের দিনই সকালে অসুস্থতার কারণে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল সম্রাটকে। এ ছাড়া সম্রাটের বিরুদ্ধে রমনা থানায় দায়ের করা মাদক নিয়ন্ত্রণ ও অস্ত্র আইনে দুটি মামলা হয়েছে। ওই দুই মামলায় তাকে ২০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন শুনানির অপেক্ষায় আছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় সম্রাটকে আদালতে হাজির করা যায়নি। তবে সম্রাটকে কারাগারে ফেরানোর কারণে শিগগিরই রিমান্ড শুনানি অনুষ্ঠিত হতে পারে বলেও জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা যায়, যুবলীগের প্রভাবশালী নেতা সম্রাট রাজধানীর বিভিন্ন ক্লাবে অবৈধ জুয়া ও ক্যাসিনো ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছিল। সে নিজেও দেশের বাইরে গিয়ে ক্যাসিনোয় মেতে থাকত বলে অভিযোগ রয়েছে। ঢাকার মতিঝিল-আরামবাগসহ বিভিন্ন এলাকায় সম্রাটের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে ক্যাসিনো কারবার চলত বলে জানা যায়। এ কারণে ইসমাইল হোসেন সম্রাট ক্যাসিনো সম্রাট হিসেবেও পরিচিত।
১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীতে ক্লাব ব্যবসার আড়ালে অবৈধ ক্যাসিনো পরিচালনার অভিযোগে র্যাবের বিশেষ অভিযানে ধরা পড়ে সম্রাটের ডান হাত হিসেবে পরিচিত যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। এরপর ধরা পড়ে রাজধানীর টেন্ডার কিং আরেক যুবলীগ নেতা জিকে শামীম, কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের সভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজ ওরফে কালা ফিরোজ, গেণ্ডারিয়া আওয়ামী লীগের নেতা দুই ভাই এনামুল হক এনু ও রুপন ভূঁইয়াসহ আরও কয়েকজন। এক সময় এসব নেতাদের দাপটে ও ভয়ে তটস্থ থাকত বিভিন্ন সংস্থা ও কর্মকর্তাসহ সাধারণ মানুষ। তারা এখন কারাগারে অসহায় সময় পার করছেন।
সরকারের এই কঠোর অভিযানে নিজ দলের লোকদের এভাবে গ্রেফতার ও কারাবন্দির ঘটনায় সাধারণ মানুষ ব্যাপক উচ্ছ্বসিত।