৪৫ বছরে সীমাবদ্ধ যুবলীগের নতুন নেতৃত্বের সর্বোচ্চ বয়সসীমা

আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগের দীর্ঘ আট বছরের জট খুলছে। আগামী ২৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে যুবলীগের জাতীয় কংগ্রেস। সংগঠন ও সংগঠনের বাইরে চলছে তুমুল জল্পনা-কল্পনা।নেতৃত্ব নির্বাচনে নীতি-নৈতিকতা ও সাংগঠনিক যোগ্যতা গুরুত্ব পাচ্ছে। সতর্ক দৃষ্টি থাকছে কোনো অর্থলোভী যাতে পদ না পায়। নতুন কমিটিতে থাকছেন না বিতর্কিত নেতারা। এছাড়া ৪৫ বছরে সীমাবদ্ধ থাকছে যুবলীগের নতুন নেতৃত্বের সর্বোচ্চ বয়সসীমা
কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, ২৩ নভেম্বর সংগঠনের কংগ্রেসে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে নতুন কমিটি গঠন করা হবে।
ক্যাসিনোকাণ্ড, টেন্ডারবাজিসহ নানা অপকর্মে সম্প্রতি গ্রেপ্তার হন যুবলীগের কেন্দ্রীয়সহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। আত্মগোপনে বহিষ্কৃত দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমানসহ অনেকেই।
যুবলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে অপকর্মের অভিযোগ থাকলেও কোন ব্যবস্থা নেননি সংগঠনের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী। বরং ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান নিয়েই প্রশ্ন তোলেন তিনি।
ইতোমধ্যে ওমর ফারুক চৌধুরীর ব্যাংক হিসাব তলব ও অনুমতি ছাড়া বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এরপর থেকে তিনি অনকেটাই আত্মগ্রোপনে।
যুবলীগ নেতাদের কর্মকাণ্ডে বিব্রত সাবেক নেতৃত্ব। তাদের মতে, টানা তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগ সরকার পরিচালনায় করায় যুবলীগের অনেকে ক্ষমতাকে ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার করছে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, আমার সময়ে যারা যুবলীগের প্রেসিডিয়ামে ছিলেন তারা এখন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, আইনজীবী, ডাক্তারসহ অনেককে দেখাতে পারবো তারা অনেক ভালো জায়গায় রয়েছেন।
সেসময় তারা আন্দোলন সংগ্রামে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। আমি সে যুবলীগকে নিয়ে গর্ব করি। আমি সেই যুবলীগ নিয়ে যখন গণমাধ্যমে নেতিবাচক সংবাদ দেখি তখন আমার মাথা হেট হয়ে যায়।
সংগঠনকে ঢেলে সাজাতে যুবলীগের নেতৃত্বে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। তারা জানান, ২৩ নভেম্বরের কংগ্রেসে দুর্নীতিসহ নানা অপকর্মে জড়িত বিতর্কিত নেতারা ছিটকে পড়বেন।
জাহাঙ্গীর কবির নানক আরও বলেন, সম্মেলনের তারিখ হয়েছে, নেতা নির্বাচন হবে। চুলচেরা বিশ্লেষণ করে নতুন কমিটি করাবেন শেখ হাসিনা। সৎ নেতৃত্ব চাই, নীতি নৈতিকতা রয়েছে, যোগ্যতা রয়েছে। ক্ষমতা ব্যবহার করে অর্থলিপ্সার জন্য নেতৃত্বে আসবেন এমন নেতৃত্ব চাচ্ছি না।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রাজ্জাক বলেন, যাদের নেতৃত্বসুলভ যোগ্যতা আছে, সাংগঠনিক দক্ষতা আছে এবং সুশৃংখল দল পরিচালনা করতে পারবে তাদেরই নেতৃত্বে আসা উচিত। এবং আওয়ামী লীগ এভাবেই চিন্তা করছে।
যুবলীগের গঠনতন্ত্রে সদস্য বয়সসীমা নির্দিষ্ট করা না হলেও বুড়োদের আর নেতৃত্বে দেখতে চায় না আওয়ামী লীগ।
ড. আবদুর রাজ্জাক আরে বলেন, যুবলীগের নেতৃত্বে নির্বাচনে বয়সের গুরত্ব দেয়া উচিত। যুবনেতা হিসেবে বয়স হওয়া উচিত ৪০ থেকে ৪৫ এর মধ্যে। আমরা যুবক বলি ৩৫। তবে কোনক্রমেই ৪০-৪৫ এর বেশি হওয়া উচিত নয়। আমাদের নীতিনির্ধারণী মহলে এটা নিয়ে আলোচনা হবে।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে বহুল বিতর্কিত এই যুব সংগঠনকে ক্লিন ইমেজের নেতা কর্মীদের নিয়েই ঢেলে সাজানোর প্রক্রিয়া চলছে। দলের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী এখন ক্ষমতাহীন। তিনি অনেকটা অন্তরালে রয়েছেন।প্রায় চার সপ্তাহ ধরে তিনি সংগঠনের কার্যালয়ে আসছেন না।৭১ বছর বয়সী যুবলীগের শীর্ষ নেতা ওমর ফারুক চৌধুরীকে যুবলীগের চেয়ারম্যানে পদে রাখা হচ্ছে না এটা নিশ্চিত। তাকে ছাড়াই চলছে কংগ্রেসের প্রস্তুতি।
প্রসঙ্গত, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন বছর পরপর যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। যুবলীগের তিন বছর মেয়াদি সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছে ২০১২ সালের ১৪ জুলাই। মূলত সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্বের অনীহার কারণেই নির্ধারিত সময়ের পরও সম্মেলন করা যায়নি বলে জানিয়েছেন কয়েকজন যুবলীগ নেতা। তাঁরা বলেন, গত সাত বছরে নতুন করে ৩৭টি জেলার কমিটি করা হয়েছে। এখন জাতীয় সম্মেলনের আগে বাকি জেলার কমিটি করা সম্ভব নয়। তাই পুরোনো কমিটি দিয়েই সম্মেলন করতে হবে। যদিও যুবলীগের ৪৭ বছরের ইতিহাসে কোনো জাতীয় সম্মেলনেই ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচিত হয়নি।