ঢাকা বুধবার, ৭ই মে ২০২৫, ২৫শে বৈশাখ ১৪৩২


বাদ পড়বেন বিতর্কিতরা

স্বেচ্ছাসেবক লীগে আলোচনায় এক ডজন ক্লিন ইমেজ তরুণ


১৮ অক্টোবর ২০১৯ ১১:৫৩

আপডেট:
১৮ অক্টোবর ২০১৯ ১১:৫৮

নবীন-প্রবীণের মেলবন্ধনে স্বেচ্ছাসেবক লীগে একটি স্বচ্ছ নেতৃত্ব আনবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দীর্ঘ সাত বছর পর হতে যাচ্ছে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন। নেতৃত্বের পালাবদল ঘিরে পদপ্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপও শুরু হয়ে গেছে। সবাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। নিজেদের অতীত ত্যাগ-তিতিক্ষা তুলে ধরছেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ক্যাসিনোকান্ডে খড়গ নেমে আসার পর যুবলীগের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ আরও তিনটি সহযোগী সংগঠনের সম্মেলনের তারিখ একসঙ্গে ঘোষণা করা হয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে।

আগামী ১৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন। এর আগে ১১ ও ১২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে সংগঠনটির গুরুত্বপূর্ণ দুই শাখা ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সম্মেলন। নবীন-প্রবীণের মেলবন্ধনের কমিটি হবে ইতোমধ্যেই আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ঘনিষ্ঠ নেতাদের এমন আভাস দিয়েছেন। সর্বশেষ ২০১২ সালের ১১ জুলাই সংগঠনটির ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে মোল্লা মো. আবু কাওছার সভাপতি এবং পংকজ দেবনাথ সাধারণ সম্পাদক হন।

সম্প্রতি রাজধানীর ক্যাসিনোকান্ডে ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের সঙ্গে সম্পৃক্ততা থাকার অভিযোগে বিভিন্ন গণমাধ্যমের শিরোনামে আসেন মোল্লা কাওছার। সে কারণে তাকে আর স্বেচ্ছাসেবক লীগে রাখা হবে না এমনটিই ধারণা করছেন দলের নেতারা। ২০০৩ সাল থেকে সংগঠনটির নেতৃত্বে থাকায় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথকেও এবার অব্যাহতি দেওয়া হবে বলে আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন। পরিবহন ব্যবসায়ী এ নেতার বিরুদ্ধেও অল্পবিস্তর অভিযোগ রয়েছে।

স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলনের বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম বলেন, পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি, নেতৃত্বের দক্ষতা, রাজনৈতিক ধারাবাহিকতা এবং সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে জনপ্রিয়তা রয়েছে এমন প্রার্থীরাই সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্বে আসবে বলে আমি ধারণা করি।

সংগঠনটির সাবেক সভাপতি বাহাউদ্দীন নাছিম আরও বলেন, নেতা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। বিতর্কিত কাউকে নেতৃত্বে আনা হবে না বলেও জানান তিনি।

আওয়ামী লীগের হাই কমান্ডের আলোচনায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের বর্তমান কমিটির পরিচ্ছন্ন তরুণ নেতা হিসেবে শীর্ষ পদে যে কয়েকজনের নাম আলোচনায় রয়েছে তারা হলেন সাংগঠনিক সম্পাদক খায়রুল হাসান জুয়েল, শেখ সোহেল রানা টিপু ও সাজ্জাদ সাকিব বাদশা। এরা তিনজনই ১/১১-এর সময় ছাত্রলীগ নেতা হিসেবে শেখ হাসিনার মুক্তি আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। তাদের যে কেউ সাধারণ সম্পাদক হতে পারেন। সভাপতি হবেন বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি অথবা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকদের মধ্য থেকে কেউ।

স্বেচ্ছাসেবক লীগের বর্তমান কমিটির অপেক্ষাকৃত জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে শীর্ষ পদের আলোচনায় রয়েছেন সহসভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ, মঈন উদ্দীন মঈন, মতিউর রহমান মতি, আফজালুর রহমান বাবু, কাজী লিটন, চট্টগ্রামের নুরুল ইসলাম নুরু ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী মেসবাউল হোসেন সাচ্চু। এরা প্রত্যেকেই দীর্ঘদিন স্বেচ্ছাসেবক লীগের রাজনীতিতে সক্রিয়। সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু সময়ের আলোকে বলেন, ইতোমধ্যে সম্মেলন উপলক্ষে ১২ উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ২৬ অক্টোবর বর্ধিত সভার আয়োজন করা হয়েছে। এতে সারা দেশের জেলা ও মহানগর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা আসবেন।

এরমধ্যে খাইরুল হাসান জুয়েল স্কুল জীবন থেকেই ছিলেন ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। পরবর্তিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ছাত্রলীগ শেষে স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

স্বেচ্ছাসেকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে তিনি রাজশাহী বিভাগের দায়িত্ব পালন করেন। এক্ষেত্রে রাজশাহী বিভাগের প্রায় সকল জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কমিটি সম্মেলনের মাধ্যমে ঘোষণা করতে তিনি সক্ষম হন।

এছাড়াও গত বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আমলে বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তার হয়ে কারাভোগ করেন। ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের দ্বারা নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে দীর্ঘদিন ভর্তি ছিলেন হাসপাতালেও। এরপর এক এগারোর মইনউদ্দিন ও ফখরুদ্দিন সরকারের আমলে শেখ হাসিনা কারামুক্তি আন্দোলনে সামনের সারিতে ছিলেন তিনি। ফলে প্রশাসনের চক্ষুশূল হয়ে গ্রেপ্তার হন। দীর্ঘ এক বছর নির্যাতন ও কারাভোগ করেন এ সময়।

এসময় খায়রুল হাসান জুয়েল বলেন, “এক-এগারোতে নেত্রীর কারা মুক্তির আন্দোলনে এক বছর জেলে থেকেছি। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে বার বার হামলার শিকার হয়েছি, মামলা খেয়েছি, জেল খেটেছি। সততা স্বচ্ছতা কমিটমেন্ট এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজেকে দলের জন্য সব সময় নিয়োজিত রেখেছি।“আমি মনে করি, নেতৃত্বে যেই আসুক, তার যেন অবশ্যই সততা, স্বচ্ছতা, কনট্রিবিউশন এবং কমিটমেন্ট থাকে।”

সম্মেলন নিয়ে প্রত্যাশার কথা জানতে চাইলে সোহেল রানা টিপু বলেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগে নেতৃত্ব পাওয়ার প্রধান মানদন্ড হোক ক্লিন ইমেজ, ত্যাগী মনোভাব, সাংগঠনিক দক্ষতা।

সাজ্জাদ সাকিব বাদশা বলেন, আমরা চাই প্রধানমন্ত্রী দুর্দিনের নেতাকর্মীদের রাজনীতিতে সুযোগ করে দেবেন। সংগঠনের প্রতি যাদের আবেগ-ভালোবাসা, ত্যাগ-তিতিক্ষা রয়েছে এমন নেতৃত্ব নির্বাচিত হলে সংগঠন আরও শক্তিশালী হবে। খায়রুল হাসান জুয়েল বলেন, আমি মনে করি, নেতৃত্বে যেই আসুক, তার যেন অবশ্যই সততা, স্বচ্ছতা, কনট্রিবিউশন ও কমিটমেন্ট থাকে।

ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০০৬ সালের ৩১ মে। উত্তরের সভাপতি নির্বাচিত হন মোবাশ্বের চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক হন ফরিদুর রহমান খান। ইরান এখন ঢাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলর। তখন দক্ষিণের সভাপতি নির্বাচিত হন দেবাশীষ বিশ্বাস। সাধারণ সম্পাদক হন আরিফুর রহমান টিটু।

এবার ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নেতৃত্বের লড়াইয়ে রয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি কামরুল হাসান রিপন,জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ওমর ফারুক, বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তারিক সাঈদ,  কেন্দ্রীয় জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক এবিএম আহম্মদউল্যা (পপ্পী), প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মির্জা মুর্শেদুল আলম মিলন ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সবেক সাধারণ সম্পাদক আনিসুজ্জামান রানা।

উত্তরে নেতৃত্ব পাওয়ার দৌড়ে রয়েছেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ফরিদুর রহমান ইরান, সাংগঠনিক সম্পাদক কেএম মনোয়ারুল ইসলাম বিপুল, ছাত্রলীগ ঢাকা মহানগর উত্তরের সাবেক সভাপতি ইসহাক মিয়া, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি শফিকুল ইসলাম শফিক ও সহসভাপতি মো. গোলাম রাব্বানী। ইসহাক ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সভাপতি। বিপুল স্বেচ্ছাসেবক লীগের মহানগরের নেতাদের মধ্যে বেশ সক্রিয়। এ বিষয়ে কেএম মনোয়ারুল ইসলাম বিপুল বলেন, আমরা চাই সম্মেলনের মাধ্যমে যোগ্য নেতৃত্ব আসুক।