যুবলীগের বৃদ্ধ নেতারা বয়সসীমায় আশাহত

আওয়ামী লীগের অন্যতম সহযোগী সংগঠন যুবলীগে বয়স বেঁধে দেওয়ায় সংগঠনের অনেক নেতাই আশাহত। যুবলীগের সপ্তম জাতীয় কংগ্রেসে অন্তত বয়সসীমা না বেঁধে দিতে জোর চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হওয়ায় তাদের হতাশা জেঁকে বসেছে।
গত রবিবার বৈঠকে যুবলীগকে বয়সসীমায় না বাঁধতে প্রধানমন্ত্রীর সামনেই যুক্তি তুলে ধরেন যুবলীগের নেতারা। যুবলীগ নেতারা বলেন, গড়আয়ু তো বেড়েছে। জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যা করেছি ভেবেচিন্তেই করেছি। বয়সের কারণে বাদ পড়লে তোমরা জেলায় গিয়ে রাজনীতি করো। অন্যদিকে বয়স বেঁধে দেওয়ার কারণে নতুন নেতৃত্ব আসবে মনে করেন ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা। যুবলীগের নেতাদের হতাশার ভেতরে উচ্ছ¡সিত ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা। ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা বলছেন, পঞ্চাশ পেরোলে কোনো যুবকের আর উদ্যম থাকে না। সে ক্ষেত্রে যুব নেতৃত্বের জন্য ৫৫ বছর সঠিক হয়েছে।
বয়স বেঁধে দেওয়ায় যুবলীগের বর্তমান কমিটির একশরও বেশি নেতার স্বপ্ন ভেঙে গেছে। যারা নেতা হওয়ার প্রতিযোগিতায় ছিলেন, বয়স বেঁধে দেওয়ায় নেতা হওয়ার প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে পড়েছেন তারা।
যুবলীগের প্রেসিডিয়ামের এক সদস্য বলেন, এটা ঠিক যে, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এই সংগঠনে নেতা হওয়ার জন্য বয়স বেঁধে দিয়েছেন। তবে বয়সটা আরও একটু বিবেচনা করা যেত। প্রেসিডিয়ামের এই সদস্য বলেন, বয়সকে বড় করে দেখা ঠিক নয়। আমাদের দেশে গড়আয়ুও তো বেড়েছে। সে ক্ষেত্রে বয়সের ব্যাপারটা আরেকটু ছাড় দিলে সংগঠনে যোগ্য নেতৃত্ব রাজনীতি করার সুযোগ পেত।
যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মুজিবুর রহমান চৌধুরী বলেন, যুবলীগের পক্ষ থেকে চাওয়া হয়েছিল এই সম্মেলনটা অন্তত বয়সের আওতার বাইরে রাখার জন্য। তিনি বলেন, আমি নিজেও প্রস্তাব করেছিলাম প্রধানমন্ত্রীর কাছে। কিন্তু তিনি জানান, যা করেছেন ভেবেচিন্তেই করেছেন। তিনি বলেন, এর মধ্য দিয়ে যুবলীগের অনেক নেতা আশাহত হয়েছেন। আমি নিজেও আশাহত। মুজিবুর রহমান চৌধুরী বলেন, যুবলীগের বয়স নিয়ে এত আলোচনা-সমালোচনা কিন্তু এই কথা তো কেউ লেখে না যে গড়আয়ুও বেড়েছে। তিনি বলেন, যুবলীগের বেশিরভাগ নেতাই এবার বাদ পড়বেন বয়সের কারণে তবে সার্বিক অর্থে ভালো হয়েছে।
অন্য প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুস সাত্তার মাসুদ বলেন, বয়স বেঁধে দেওয়ায় সার্বিকভাবে ভালো হয়েছে। তবে এ সম্মেলনের পরে বয়সের ব্যাপারটা সিদ্ধান্ত নিলে ভালো হতো। তিনি বলেন, যারা দীর্ঘদিন এ সংগঠনে রাজনীতিটা করেছে এখন তাদের কী হবে সে ব্যাপারটাও দেখা দরকার।
যুবলীগের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য আহমদ আল কবির বলেন, এবার অন্তত বয়সের ব্যাপারটা শিথিল করা হলে ভালো হতো সংগঠনের জন্য। এ সংগঠনের জন্য আমাদের অনেকেরই শ্রম আছে। তারা তো বঞ্চিত হলো।
অন্যদিকে বয়স বেঁধে দেওয়ার কারণেই সাবেক ছাত্রনেতাদের ভেতরে নেতা হওয়ার আগ্রহ দেখা দিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি হবে বলেও মনে করেন তারা। বয়স ইস্যুতে এদের সবার ভেতরে উচ্ছাস দেখা দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বাহাদুর বেপারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাস্তবতার নিরিখে বয়সের ব্যাপারটা সামনে এসেছে। এটা সংগঠনের জন্য ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অজয় কর খোকন বলেন, যৌবনের যে কর্মোদ্যম সেটা সর্বোচ্চ ৫৫ পর আর থাকে না। বয়সসীমা বেঁধে দিয়ে যথাযথ কাজ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি বলেন, এটাকে আমি ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। এ সংগঠনে নতুন নেতৃত্ব আসার ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে বয়স বেঁধে দিয়ে।
যুবলীগ নেতাদের বেশ কয়েকজন চলমান দুর্নীতি ও ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে অভিযুক্ত হয়ে রাজনীতি থেকে ছিটকে পড়েছেন। অন্য যারা আছেন তারা বয়সের কারণে নেতা হওয়ার অনুপযুক্ত হয়ে গেছেন। এসব কারণে বলা যায় সংগঠনটিতে এবার বেশিরভাগ মুখই নতুন আসবে। এদের বেশিরভাগই সাবেক ছাত্রলীগ নেতা। যুবলীগের বর্তমান কমিটির প্রথম সারির অন্তত ২৫ জন বয়সের কারণে যুবলীগ নেতা হওয়ার সুযোগ হারাচ্ছেন।
সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ, যুবলীগের সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. মীজানুর রহমান, প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ সামসুল আবেদীন, প্রেসিডিয়াম সদস্য শহীদ সেরনিয়াবাত, মুজিবুর রহমান চৌধুরী, শেখ ফজলুর রহমান মারুফ, আবদুস সাত্তার মাসুদ, চয়ন ইসলাম, আহমদ আল কবিরের বয়স ৬০ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে। পাঁচ যুগ্ম সম্পাদকের বয়স ৫৫ ঊর্ধ্বে। আট সাংগঠনিক সম্পাদকের মধ্যে সবাই পঞ্চাশ পেরিয়েছেন। অন্যান্য সম্পাদকীয় পদের প্রায় সব নেতাই পঞ্চাশ পার করা। সহ-সম্পাদক ২০ জনের মধ্যে ১৫ জনই ৫০ কোটা পার করেছেন। অনেকেই আছেন ষাটের কোটায়ও।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী। এর মধ্য দিয়ে সংগঠনে নতুন নেতৃত্ব আসবে। ফলে গতিশীল হবে সংগঠন।