অনিশ্চয়তার দোলাচলে ভুগছেন সংগঠনের পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীরা,
২০ মাস ধরে নেতৃত্বশূন্য গাজীপুর মহানগর ছাত্রলীগ!

গাজীপুর মহানগর ছাত্রলীগের ২০ মাস ধরে কোনো কমিটি নেই। গত ২০১৮ সালের ৫ ফেব্রয়ারি সম্মেলনের মাধ্যমে বিলুপ্ত করার পর থেকে গাজীপুর মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি আর ঘোষণা হয়নি। এর মধ্যে কয়েকবার কমিটি গঠনের গুঞ্জন শোনা গেলেও তা কার্যকর হয়নি। কিছুদিন আগে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি-সম্পাদককে তাদের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পর থেকে গাজীপুর মহানগর কমিটি কবে হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তার দোলাচলে ভুগছেন সংগঠনের পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীরা। তবে এর পাশাপাশি মহানগর ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে কারা নেতৃত্বে আসবেন তা নিয়েও চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা।
সংগঠনের তৃণমূলের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নতুন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক দায়িত্ব নেওয়ার পর গাজীপুর ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা হবে এমনটা আশা করছেন নেতাকর্মীরা। তবে নতুন কমিটির জন্য আর কতদিন অপেক্ষা করতে হবে তা কেউ বলতে পারছেন না।
মহানগর ছাত্রলীগের নেতারা জানান, ২০১৩ সালের ১১ অক্টোবর মাসুদ রানা এরশাদকে সভাপতি এবং তৌহিদুল ইসলাম দীপকে সাধারণ সম্পাদক করে গাজীপুর মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করে সোহাগ-নাজমুলের নেতৃত্বাধীন ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটি। এর প্রায় এক বছর পর ১৫১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই কমিটির মেয়াদ দেওয়া হয় এক বছর। কিন্তু ওই কমিটির মেয়াদ পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও নতুন কমিটি না হওয়ায় তখন অনেক পদপ্রত্যাশী হতাশ হয়ে পড়েন।
পরে ২০১৬ সালের ৩ নভেম্বর মাসুদ রানা এরশাদকে গাজীপুর মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসেন। সে সময় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয় মহানগর কমিটির সহসভাপতি ইকবাল হোসেনকে।
তার সভাপতিত্বে ২০১৮ সালের ৫ ফেব্রয়ারি সম্মেলনের মাধ্যমে গাজীপুর মহানগর ছাত্রলীগের আগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। এরপর মহানগর ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশীদের জীবনবৃত্তান্ত সংগ্রহ করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কিন্তু জীবনবৃত্তান্ত যাচাই-বাছাইয়ের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেও কমিটি দিতে পারেনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এরপর থেকে গাজীপুর মহানগর ছাত্রলীগ নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়ে। অবশ্য সম্মেলনের দিন জানানো হয়েছিল, দু-এক দিনের মধ্যেই নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে।
এ পরিস্থিতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে পদপ্রত্যাশী অনেক ছাত্রলীগ নেতা বলছেন, গাজীপুরের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটে কমিটি না দিয়ে সংগঠনকে দুর্বল করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া মহানগর কমিটির পাশাপাশি ভাওয়াল কলেজ শাখা, কাজী আজিম উদ্দিন কলেজ শাখা ও টঙ্গী সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কমিটিও হচ্ছে না প্রায় দুই বছর ধরে। এর আগে অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে পদ পাওয়ার আশায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক দুই শীর্ষ নেতার কাছে জোর তদবির চালিয়েছিল। এখন নতুন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এসে তাদের আর মূল্যায়ন করবেন কি না সে বিষয়েও তৈরি হয়েছে সংশয়।
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে গাজীপুর মহানগর ছাত্রলীগের এক পদপ্রত্যাশী বলেন, ‘গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার স্বার্থের জন্য স্থগিত হয়ে গেছে কমিটি। নতুন কমিটিতে নিজের অনুসারীদের রেখে কমিটি তৈরির চেষ্টা করছেন ওই নেতারা। মূলত এ কারণেই কমিটি হচ্ছে না।’
নতুন কমিটিতে পদপ্রত্যাশী মেহেদি বাবু বলেন, ‘মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত হওয়ায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অভিভাবকশূন্য হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন গাজীপুর মহানগর কমিটি নেতৃত্বশূন্য থাকায় নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা কাজ করছে। অনেকে দীর্ঘদিন ধরে ছাত্ররাজনীতি করছেন, কিন্তু কোনো পদবি পাচ্ছেন না। তারা অনেকে ছাত্রত্ব হারিয়ে ফেলছেন। ফলে অনেককেই হতাশা নিয়েই ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে বিদায় নিতে হবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের অভিভাবক। তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নতুন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করেছেন। আশা করছি গাজীপুরের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ নগরীতে শিগগিরই মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি করা হবে।’