দেশে ফিরে বাঁচতে চেয়েছিলেন সৌদিতে নির্যাতিতা নাজমা

সৌদি আরবে নির্যাতনের শিকার নাজমা বেগম (৪০) লাশ হয়েই বাড়ি ফিরলেন। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তার লাশ পৌঁছায়। লাশ গ্রহণ করে রাতেই মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার তালেপুর ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের বাড়ি নিয়ে যান স্বজনরা।
তারা জানান, মৃত্যুর আগে প্রায়ই নামজা তাকে নির্যাতনের কথা বলতেন। কান্নাকাটি করতেন। বলতেন তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে। নামমা বাড়ি ফিরল, তবে লাশ হয়ে।
স্বজনদের সঙ্গে ফোনালাপের কয়েকটি অডিওতে শোনা যায় তিনি দেশে ফিরে সন্তানদের সঙ্গে বেঁচে থাকতে চেয়েছিলেন।
তারা জানান, শুক্রবার বিকেলে তার মরদেহ দাফন করা হবে। ২ সেপ্টেম্বর তিনি সৌদিতে মারা যান।
নাজমার বোন মাখসুদা বেগম জানান, স্বামী মারা যাওয়ার পর দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে অভাবের সংসার ছিল নাজমার। সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে পার্শ্ববর্তী রাজেন্দ্রপুর গ্রামের আয়নাল হকের ছেলে মো. সিদ্দিকের মাধ্যমে সৌদিতে যান তিনি। হাসপাতালের ক্লিনার হিসেবে চাকরির কথা বলে সিদ্দিক তাকে নানাভাবে প্রলোভিত করে। কিন্তু সৌদিতে তাকে গৃহকর্মী হিসেবে বিক্রি করা হয়। সেখানে যাওয়ার পর থেকে মালিকের ছেলে তাকে যৌন নির্যাতন করত বলে নাজমা জানাত।
মাখসুদা বেগম আরো জানান, কথা না শুনলে সেখানে নাজমাকে বেধড়ক মারধর করা হতো। এ ছাড়া পরিবারের অন্য সদস্যরা তাকে নানা অজুহাতে মারধরসহ ঠিকমতো খেতেও দিত না। এসব কারণে নাজমা প্রায়ই তার বোন ও ছেলেমেয়েদের ফোন করে কান্নাকাটি করতেন। যে কোনো মূল্যে তাকে দেশে ফিরিয়ে নিতে বলতেন।
অমানুষিক নির্যাতনের কারণেই নাজমার মৃত্যু হয়েছে বলে জানান তিনি।
নাজমার ছেলে রাজিব মিয়া জানান, মায়ের নির্যাতনের খবর শুনে তারা বহুবার সিদ্দিকের কাছে গেছেন। মাকে ফিরিয়ে আনতে তার হাত-পা পর্যন্ত ধরা হয়েছে। কিন্তু তিনি বিষয়টি গুরুত্ব দেয়নি। উল্টো তাদের ধমক দিয়ে সরিয়ে দিয়েছেন।
তিনি আরো জানান, ২ সেপ্টেম্বর ভোরে এক সৌদিপ্রবাসী তাদের ফোন করে মায়ের মৃত্যুর খবর দেন। সৌদি আরবের আরা শহরের একটি সরকারি হাসপাতালের হিমঘরে তার মায়ের মরদেহ রাখা হয়েছে বলে তাদের খবর দেওয়া হয়। এরপর তারা আবারো সিদ্দিকের কাছে গিয়ে মরদেহ দেশে আনতে অনুরোধ জানান। কিন্তু মরদেহ আনতেও নানা গড়িমসি করে সিদ্দিক।
মৃত্যুর কয়েক দিন আগে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলার কয়েকটি অডিওতে শোনা যায়, নাজমা তার ওপর নির্যাতনের বর্ণনা দিচ্ছেন আর কান্নাকাটি করছেন। তিনি প্রচণ্ড অসুস্থ বলে জানাচ্ছেন। ব্যথায় উঠতে পারছেন না। কিন্তু তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না।
একটি অডিওতে শোনা যায়, তাকে বাসা থেকে কোথায় যেন নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
তিনি বলছেন, ‘আমাকে আর বাঁচাতে পারলি না তোরা। আমাকে আর জীবিত পাইলি না’।
বাড়ি বিক্রি করে হলেও তাকে বাঁচাতে বলেন স্বজনদের।
স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ কয়েকজন গ্রামবাসী জানান, ভালো চাকরির লোভ দেখিয়ে নাজমাকে বিদেশে পাচার এবং সেখানে নির্যাতনের শিকার হয়ে নির্মম মৃত্যুর ঘটনা খুবই দুঃখজনক। পুরো ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির দাবি জানান তারা।
এদিকে অভিযুক্ত আদম ব্যবসায়ী সিদ্দিককে তার বাড়ি গিয়ে পাওয়া যায়নি। তবে তার স্ত্রী হালিমা বেগম জানান, তার স্বামী এলাকার অন্ত ৫০/৬০ জন নারীকে বিদেশে পাঠিয়েছেন। কিন্তু কারো সমস্যা হয়নি। নাজমা নির্যাতিত হচ্ছে এ বিষয়টি তাদের আগে জানানো হয়নি। মারা যাওয়ার কয়েক দিন আগে জানতে পেরেছেন তারা।
এ ঘটনায় সিদ্দিককে আসামি করে প্রতারণার অভিযোগ এনে মানিকগঞ্জ জুডিশিয়াল কোর্টে মামলা করেছে নাজমার পরিবার।
১১ মাস আগে সৌদি আরব পাড়ি জমিয়েছিলেন নাজমা।