চাঁদাবাজি দখল জালিয়াতিতে পটু মান্ডার বিএনপি নেতা
টাকার জন্য সবই পারেন আ'লীগ অনুপ্রবেশকারী আলমাস চেয়ারম্যান

টাকার জন্য তিনি সবই করতে পারেন। কে আপনজন আর কে প্রতিবেশী এসব দেখার সময় নেই তার। নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য যে কাউকে নিঃশ্ব করতে এতটুকুও সময় নেন না তিনি। ওপরে ভদ্রবেশী আচরণ দেখালেও নেপথ্যে তিনি ভয়ঙ্কর। রাজধানীর মুগদা থানাধীন মান্ডা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা মো. আলমাস হোসেনের বিরুদ্ধে এভাবেই অভিযোগ করেছে স্থানীয়রা। তাদের অভিযোগ, মান্ডা এলাকায় চাঁদাবাজি, জমির দালালি, অবৈধভাবে জমি দখলে সহায়তা থেকে শুরু করে নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন মান্ডা ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আলমাস।
মান্ডার স্থানীয়দের তথ্য মতে, বিএনপির রাজনীতি করলেও বেশকিছু দিন ধরেই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের স্থানীয় রাজনীতিক, পুলিশসহ সবাইকে ‘ম্যানেজ’ করেই দাপটের সঙ্গে এলাকার নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন আলমাস হোসেন। বিএনপির সক্রিয় এই নেতা ‘পল্টিবাজ’ হিসেবেও ব্যাপক পরিচিত। বিএনপির ক্যাডার হিসেবে ক্লিনহার্ট অপারেশনের সময় গ্রেফতারও হয়েছিলেন। বর্তমানে নিজ দলের করুণ অবস্থার কারণে খোলস পাল্টে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়েও মুগদা, মান্ডা, বাসাবো ও সবুজবাগ এলাকায় আওয়ামী লীগের নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা এবং সভা-সমাবেশে ভিড় ঠেলে সামনে থাকার চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের কারণে ঠাঁই পাননি। আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও স্থানীয় সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরীর নজরে পড়ার চেষ্টা করেন অনেকবার। শেষ পর্যন্ত তাকে পাত্তা দেননি এমপি সাবের হোসেন চৌধুরী। এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে বক্তব্য জানতে আলমাস হোসেনের ব্যক্তিগত নম্বরে কয়েকবার ফোন করা হলেও বেশিরভাগ সময় বন্ধ পাওয়া যায়। দুয়েকবার রিং হলেও তিনি ফোন ধরেননি। এছাড়া এলাকায় গিয়ে সরাসরি কথা বলার চেষ্টা করা হলেও আলমাসকে পাওয়া যায়নি।গত বৃহস্পতিবার বিকালে সরেজমিন মান্ডা এলাকায় গেলে আলমাসের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করেন তার কাছের প্রতিবেশী ও স্থানীয়রা। এ সময় নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন বলেন, আলমাস হোসেনকে সবাই আলমাস চেয়ারম্যান বলেই ডাকে।
তিনি মান্ডা ইউনিয়নের টানা সাত বছরের চেয়ারম্যান ছিলেন। তবে বর্তমানে মান্ডা ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা সিটি করপোরেশন হয়ে গেছে। এ কারণে সেখানে ইউনিয়নের কার্যক্রম আর নেই। তবে থেমে নেই সাবেক চেয়ারম্যান আলমাসের অপকর্ম। স্থানীয়দের তথ্য মতে, চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পরই মূলত আলমাসের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য পাল্টে যায়। হঠাৎ আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার মতো অবস্থা। উত্তর মান্ডার বড়পাড়ায় ২৩২ নম্বর হোল্ডিংয়ের পাঁচতলা একটি বিলাসী বাড়ি করেছেন তিনি। সরেজমিন দেখা গেছে, সেই বাড়ির মূল ফটকে তার মৃত বাবার ছবির প্রতিকৃতি। বাড়ির গ্যারেজে ছিল তার কালো রঙের দামি টয়োটা নোয়া গাড়ি।
স্থানীয়রা জানায়, বাড়ির ভেতরেও রাজকীয় কারবার। ভেতরে মালয়েশিয়া থেকে আনা কাঠের টাইলস দিয়ে সাজসজ্জা করা হয়েছে। রয়েছে ডুপ্লেক্স সিস্টেম। এর বাইরেও বড় মেয়ের আনন্দের জন্য আবাসিক এলাকায় কিনেছেন প্রায় দেড় কোটি টাকা মূল্যের পাঁচ কাঠা জমি। আয়ের প্রকাশ্য বড় কোনো উৎস না থাকলেও কয়েক কোটি টাকার বাড়ি, গাড়ি, প্লট বা ফ্ল্যাট এত অল্প সময়ে কীভাবে হলো তা নিয়ে প্রতিবেশীরাও বিস্ময় প্রকাশ করেন। পুরান ঢাকার নবাববাড়ীতে আগে একটি কাপড়ের দোকান ছিল আলমাসের। তবে সেই দোকান অন্য একজন চালান বলেও জানা গেছে।
জানা গেছে, আলমাস চেয়ারম্যান দুটি বিয়ে করেছেন। প্রথম স্ত্রী ইশরাতের পক্ষে দুই কন্যা সন্তান রয়েছে। তবে দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম জানা যায়নি। গোপনে বিয়ে করলেও সেটি প্রকাশ পায় আলমাস চেয়ারম্যান হওয়ার পর। সেই স্ত্রীর জন্যও আলাদা ফ্ল্যাট আছে বলে শোনা যায়। তবে পরিবারের চাপে দ্বিতীয় স্ত্রীকে মান্ডার এই বাড়িতে ওঠাতেও পারেননি তিনি। আলমাসের স্বার্থপরতা আর নানা অপকর্মের কারণে নিকটাত্মীয়রাও তার কাছ থেকে দূরে সরে গেছেন।
জানা গেছে, নিজেদের জমাজমির জটিলতার পাশাপাশি আলমাস অবৈধ দখলবাজ হিসেবে বা দখলে সহায়তাকারী হিসেবেও এলাকায় পরিচিত।
মান্ডা এলাকায় শাপলা সিটি নামে একটি আবাসন প্রতিষ্ঠানের হয়েও মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে দখলবাজির কাজ করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এলাকায় কেউ নতুন করে জমি কিনলে বা বাড়ি নির্মাণ করতে গেলে আলমাসকে খুশি করতে হয়। অনেক সময় জমাজমির ঝামেলা মেটানোর নামে দু’পক্ষের কাছ থেকেই মোটা অঙ্কের টাকা নেন তিনি।
অভিযোগ রয়েছে, আলমাসরা তিন ভাই ও দুই বোন। তাদের বাবার নাম মৃত চুন্নু মিয়া। ভাইদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট এনতাজ হোসেন বিদেশে থাকাকালে তার অংশের জমি বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ করেন আলমাস। তাকে সহযোগিতা করেন তার আরেক ভাই সাইদুল। পরে এনতাজ দেশে ফিরে এ খবর জেনে ‘স্ট্রোক’ করে প্যারালাইজডে আক্রান্ত হন। বর্তমানে এনতাজ মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
এছাড়া দুই বোনের সম্পত্তিও বুঝে না দেওয়ায় এ নিয়ে ভাই-বোনদের মধ্যে বিরোধ চলছে। কাছের প্রতিবেশীরা জানান, চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার আগেই আলমাস তার পৈতৃক সম্পত্তির প্রায় সবই বিক্রি করেছেন। কিন্তু চেয়ারম্যান হওয়ার পর হঠাৎ সম্পদ অস্বাভাবিকহারে বাড়তে থাকে। এমনকি যে সম্পত্তি তার বাবা বেঁচে থাকাকালে বিক্রি করেছেন সেই সম্পত্তি চেয়ারম্যান হওয়ার পর প্রভাব খাটিয়ে পুনরায় বিক্রি করেছেন আলমাস। মান্ডার হায়দার আলী স্কুলের পেছনে খালপাড় এলাকায় বাশার টাওয়ারের পেছনে তিন কাঠা পরিমাণের এমন একটি সম্পত্তি মৃত বাবার পর ফের আলমাস বিক্রি করেন। মান্ডার একজন ফল ব্যবসায়ী পরবর্তী সময়ে ওই জমি কিনেছেন। কিন্তু সেই জমির দখল পাননি। এখন আলমাস জমির দখলও বুঝিয়ে দিচ্ছেন না, আবার টাকাও ফেরত দিচ্ছেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে।