বুলবুলের তান্ডব
লক্ষাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত ২৫ লাখ মানুষ বিদ্যুৎহীন

যতটা চোখ রাঙানি ছিল ততটা আঘাত না করলেও তাণ্ডবের ছাপ রেখে গেছে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। গত শনিবার রাতে ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশে আঘাত হানার পর গাছচাপা, ট্রলারডুবি ও আতঙ্কে এ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন এলাকায় ৯ জেলেসহ ২৩ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে ৮ জেলের লাশ উদ্ধার হয়েছে গতকাল সোমবার রাতে।
ঘূর্ণিঝড় বুলবুলে কমবেশি আহত হয়েছে প্রায় শতাধিক মানুষ। ঝড়ের তা-বে উপকূলীয় জেলাসহ অনেক এলাকায় বিধ্বস্ত হয়েছে হাজার হাজার কাঁচা বাড়ি, উপড়ে পড়েছে অগুনতি গাছপালা, ভেসে গেছে মাছের ঘের, নষ্ট হয়েছে হাজার হাজার একর জমির মৌসুমি ফসল। অনেক এলাকার রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ব্যাহত হচ্ছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে অনেক এলাকা গতকালও ছিল বিদ্যুৎহীন।
এদিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের তাণ্ডবে কমপক্ষে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ২ লাখ ৭৩ হাজার মানুষ।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণকক্ষ জানিয়েছে, বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় যেসব জায়গায় বুলবুল আঘাত হেনেছে, সেসব জায়গায় উদ্ধারকাজ এবং ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ শুরু হয়েছে। ঝড়ের পর থেকে কোনো কোনো এলাকায় প্রাথমিকভাবে ত্রাণ দেওয়া শুরু হয়েছে।
বিভিন্ন এলাকার নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো জেলাভিত্তিক খবর :
ঘণ্টায় ১১০ থেকে ১২০ কিলোমিটার বেগের বাতাসের শক্তি নিয়ে গত শনিবার মধ্যরাতে বাংলাদেশের খুলনার সুন্দরবন উপকূলে আঘাত হানে প্রবল ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। পরে এটি ধীরে ধীরে শক্তি হারিয়ে সকাল নাগাদ গভীর স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়। ঝড়ে উপকূলীয় জেলাগুলোতে উপড়ে গেছে বহু গাছ, বিধ্বস্ত হয়েছে কাঁচা ঘরবাড়ি। ফলে এসব এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বরগুনা : বরগুনার ছয়টি উপজেলায় পাঁচ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে ২৫০টি কাঁচা ও আধাপাকা ঘর। সদর উপজেলায় সাইক্লোন শেল্টারে হালিমা খাতুন (৬৫) বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান। এছাড়া ঘূর্ণিঝড়-পরবর্তী সময়ে গাছ কাটতে গিয়ে মহিবুল্লাহ ৫০ নামে আরও এক ব্যক্তি মারা যান। এছাড়াও ছয়টি উপজেলায় কমপক্ষে ১৭ জন আহত হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে একটি মাছ ধরা ট্রলারসহ ১৫ জেলে নিখোঁজ রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৮৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
বরগুনা জেলা প্রশাসক
কার্যালয়ের কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা গেছে, টানা বৃষ্টিতে কৃষিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, এর মধ্যে আমন ৯ হাজার ৮৬৩ হেক্টর, শীতকালীন শাকসবজি ৫৫০ হেক্টর, গবাদি পশু নিহত ৩, আহত ৪১, ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি ৫ হাজার ২৮৫, ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৮৬টি, ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ ৩৮.৫ কিলোমিটার। মৎস্য বিভাগের সূত্র অনুযায়ী পুকুর ৬০, মৎস্য ঘের ৬৫, চিংড়ি ঘের ৩৫টি।
জেলার ছয়টি উপজেলার ৪২টি ইউনিয়নে ১০ লাখ টাকা, ৪০০ বান্ডিল ঢেউটিন, গৃহ নির্মাণবাবদ ৩ হাজার টাকা করে ১২ লাখ টাকা, শিশু খাবার বাবদ ১ লাখ টাকা, গোখাদ্যবাবদ ১ লাখ টাকা, ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার ও ১ হাজার ১৫০টি কম্বল বিতরণ করা হয়। এছাড়াও নিহতদের পরিবারকে দেওয়া হয়েছে আর্থিক সহায়তা।
মাদারীপুর : মাদারীপুরের চারটি উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে প্রায় ২ হাজার ৫২টি কাঁচা ঘর ভেঙে ল-ভ- হয়ে গেছে। এ সময় ৩ হাজার হেক্টর জমির ধান, সবজি, রবিশস্যসহ ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গ্রামের বেশিরভাগ এলাকায় বিচ্ছিন্ন রয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। ঝড়ের সময় মাদারীপুর সদর উপজেলার ঘটমাঝি এলাকায় বসতঘরের ওপর গাছ পড়ে সালেহা বেগম (৪০) ও কালকিনি উপজেলার কয়ারিয়ায় গাছের নিচে চাপা পড়ে হেলালউদ্দিন জমাদার (৫০) মারা গেছেন। ঝড়ে আহত হয়েছে নয়জন। ক্ষতিগ্রস্তের মাঝে আগের বরাদ্দের কিছু টিন, ৫০ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হবে।
গোপালগঞ্জ : জেলায় শিশুসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। গত রবিবার কোটালীপাড়া উপজেলার বান্ধাবাড়ি গ্রামে গাছচাপায় সেকেন হাওলাদার (৭০) নামে একজন এবং সদর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের খাটিয়াগড় গ্রামের বাবন কাজীর স্ত্রী মাজু বিবি (৬৫) নিহত হয়েছেন। গতকাল সোমবার বেলা ১১টায় কোটালীপাড়ার কান্দি গ্রামে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে ভেঙে যাওয়া গাছের ডাল পড়ে সাথী বৈদ্য (৬) নামে এক শিশু নিহত হয়েছে। সে ওই গ্রামের সুখরঞ্জন বৈদ্যর মেয়ে।
জেলার বিভিন্ন গ্রামে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে দুই শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। হাজার হাজার গাছপালা ভেঙে গেছে। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে সবজি ক্ষেতেরও। গত শনিবার রাত থেকে জেলার কোথাও বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বুলবুলের তা-বে জেলার ৯ হাজার হেক্টরের উঠতি আমন ধান, ৬৭৭ হেক্টর জমির শাকসবজি ও ৪১ হেক্টর জমির পেঁপে ও কলাবাগান নষ্ট হয়েছে। গাছ ও ফল নষ্ট হওয়ায় জেলার অন্তত ২০ হাজার কৃষক ক্ষতির মুখে পড়েছে।
খুলনা : খুলনায় বুলবুলের আঘাতে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। গত রবিবার দক্ষিণ দাকোপ গ্রামের সুভাষ মণ্ডলের স্ত্রী প্রমিলা মণ্ডল (৫২) ও খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার সেনহাটি গ্রামের আলমগীর হোসেনের (৩৫) মৃত্যু হয়। জেলায় তিন লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত এবং ৪৭ হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এছাড়া ঘূর্ণিঝড়ে ২৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। খুলনা জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, গত শনিবার মধ্যরাত ও রবিবার সকালে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের তা-বে খুলনা জেলার ৯ উপজেলায় ২ লাখ ৯৭ হাজার ৫০০ মানুষ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া প্রায় ৪৭ হাজার ২৭৫টি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৩৭ হাজার ৮২০টি আংশিক ও ৯ হাজার ৪৫৫টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ২৫ হাজার হেক্টর আবাদি জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে এখনো আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। এদিকে খুলনা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ১ হাজার ৯০০ কার্টন শুকনা খাবার, ১৬০ মেট্রিক টন চাল ও ৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
ভোলা : বুলবুলের প্রভাবে ভোলা সদরের ইলিশা মেঘনা নদীতে ২৪ জেলে নিয়ে ট্রলারডুবির ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৯ জেলের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সোমবার রাতে বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জের মেঘনার বাহাদুরপুর পয়েন্ট থেকে ৮ জেলের লাশ উদ্ধার করা হয়। এর আগে গত রবিবার রাতে একই জায়গা থেকে অন্য এক জেলের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এছাড়া ঘূর্ণিঝড়ে জেলায় গাছপালা উপড়ে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। লালমোহন ও চরফ্যাশন উপজেলায় বিধ্বস্ত হয়েছে অর্ধশতাধিক ঘর। আহত হয়েছে ১৫ জন। জেলায় প্রায় ৫৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমির আমন ধানসহ ৫৯ হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বরিশাল : ঝড়ে ভেঙে পড়া গাছচাপায় উজিরপুর উপজেলায় আশলতা মজুমদার (৬৫) নামে এক নারী নিহত হয়েছেন। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সোমবার দুপুরে বরিশাল জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় এবং বরিশাল জেলা প্রশাসন পরিচালিত নিয়ন্ত্রণকক্ষ সূত্র জানায়, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের তা-বে বরিশালে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ে প্রায় ৫০ হাজার ঘরবাড়ি পুরোপুরি এবং তিন হাজার ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১ লাখ ৬ হাজার হেক্টর ফসলি জমি নষ্ট হয়েছে। এছাড়াও ১২০ কিলোমিটার সড়ক ও ২২ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৬০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ভেঙে পড়েছে কয়েক হাজার গাছ।
বাগেরহাট : বাগেরহাটের রামপাল ঘরের ওপর গাছচাপা পড়ে সামিয়া খাতুন (১৫) নামে এক কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে। এ সময় আহত হয়েছে আরও দুজন। রবিবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে রামপাল উপজেলার ভরসাপুর গ্রামের আবদুর রাজ্জাকের বসতবাড়িতে ঝড়ের মধ্যে গাছ উপড়ে ঘরের ওপর পড়লে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে ঝড়ো হাওয়ায় জেলার বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য গাছপালা উপড়ে গেছে। কিছু এলাকায় ঝড়ে বেশকিছু কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো মামুনুর রশীদ। তবে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে সংখ্যা নিশ্চিত করতে পারেননি। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে সৃষ্ট জোয়ার ও বৃষ্টির পানিতে জেলার বিভিন্ন এলাকার কয়েক হাজার মাছের ঘের প্লাবিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা খালেদ কনক। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি।
জেলার মোংলায় ১ হাজার ৩৭০টি কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এছাড়া পানিতে তলিয়ে ভেসে গেছে ১ হাজার ৬৮০টি ঘেরের বাগদা চিংড়ি ও সাদা মাছ। দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে সরকারের পক্ষ থেকে পর্যায়ক্রমে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হবে।
শরীয়তপুর : শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায় ভেঙে পড়া গাছচাপায় মো. আলী বক্স ছৈয়াল (৬৮) নামে একজন নিহত হয়েছেন। রবিবার দুপুর আড়াইটার দিকে উপজেলার ডিঙ্গামানিক ইউনিয়নের দেওজুড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। জেলায় প্রায় ২০টি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। বাতাস আর টানা বর্ষণে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে কৃষকরা। গাছপালা ভেঙে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। শরীয়তপুর জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের জানান, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের তা-বে যে পরিবারগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে।
সাতক্ষীরা : ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে সাতক্ষীরা শ্যামনগরের উপকূলীয় অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শ্যামনগরের গাবুরায় ঝড়ের রাতে আতঙ্কে এক মৎস্যচাষি মারা গেছেন। এছাড়া তালা উপজেলায় গাছ উপড়ে পড়ে এর আঘাতে আহত ক্ষেতমজুর নিছার সরদার (৬৫) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। সোমবার দুপুরে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় তার মৃত্যু হয়। তিনি তালা উপজেলার মহান্দী গ্রামের কানাই সরদারের ছেলে।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল জানান, উপকূলীয় এলাকা শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলায় কাঁচা ঘরবাড়ি, মৎস্য ঘের ও ফসলি জমি ও রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এসব অঞ্চলে প্রায় ৬০-৭০ ভাগ ঘরবাড়ি ধসে পড়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক অরবিন্দ বিশ্বাস জানান, এখনো পর্যন্ত জেলায় সর্বশেষ খবর অনুযায়ী ২৫ হাজার হেক্টর আমন ধান, ১ হাজার ২০০ হেক্টর সবজি, ৫০০ হেক্টর সরিষা, ২০০ হেক্টর কুল ও ১২০ হেক্টর জমির পান নষ্ট হয়েছে।
এছাড়া নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, ওইসব জেলায় হতাহতের কোনো ঘটনা না ঘটলেও ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাসও দিয়েছে।
বিদ্যুৎহীন ২৫ লাখ গ্রাহক : এদিকে বুলবুলের কারণে সরবরাহ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার অন্তত ২৫ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি)। গতকাল বিআরইবির এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গত শনিবার ভোররাতে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার পর থেকে উপকূলীয় নয়টি জেলার এসব গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে এসব জেলায় ৭০ হাজার কিলোমিটার লাইনে বিদ্যুৎ বিতরণ বন্ধ রয়েছে। বিদ্যুতের খুঁটি, ট্রান্সফরমার ও ইনসুলেটরসহ নানা যন্ত্রাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আনুমানিক ৭ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে গতকাল বিকেল থেকে আজকের মধ্যে পর্যায়ক্রমে বিচ্ছিন্ন হওয়া সব গ্রাহককে বিদ্যুৎ দেওয়া সম্ভব হবে। এর জন্য পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের ৯ হাজার কর্মীর সঙ্গে সমিতির আরও ২০০ কর্মী লাইন মেরামতের কাজে রয়েছে বলে জানান তিনি।
সুন্দরবনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণে জরিপ : ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে সুন্দরবনের কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা জানতে জরিপ করা হবে। সুন্দরবন এলাকা ঘুরে দেখে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য তুলে ধরবেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা। এতে দুই থেকে তিন দিন সময় লাগবে। ২০০৯ সালের মতো এবারও খুলনাসহ উপকূলীয় অঞ্চলকে রক্ষা করল সুন্দরবন। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে সুন্দরবনের গাছপালা উপড়ে পড়েছে। সুন্দরবনের পশ্চিম বিভাগের অন্তর্ভুক্ত বন বিভাগের সাতটি স্টেশন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে কোনো বন্যপ্রাণীর ক্ষতি হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি।
সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বশিরুল আল মামুন বলেন, বুলবুলের আঘাতে সাতক্ষীরা রেঞ্জের পুষ্পকাঠি ফরেস্ট স্টেশনের ঘরের টিনের চালা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কদমতলার এফজি ব্যারাকের টিনের চাল উড়ে গেছে ও রান্নাঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কাঠশ্বর অফিসের ছোট ট্রলার নদীতে ডুবে গেছে এবং পাকঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোবাদক স্টেশনের কাঠের ১০০ ফুট দৈর্ঘ্যরে জেটিটি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ব্যারাকের চাল ও রান্নাঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চুনকুড়ির সোলার প্যানেল উড়ে নদীতে ভেসে গেছে। দোবেকি টহল ফাঁড়ির ৪০ ফুট দীর্ঘ পন্টুনটি ভেঙে গেছে। নলিয়ান রেঞ্জ অফিসে যাতায়াতের রাস্তাটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এই অফিস ঘিরে থাকা গাছপালা ভেঙে পড়েছে।
ভারতে ৬ জনের মৃত্যু : ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের তাণ্ডবে এখন পর্যন্ত ছয়জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। প্রায় তিন লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ছাড়াও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঝড় নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করে ক্ষয়ক্ষতি সামলাতে সব ধরনের সাহায্য করার আশ্বাস দিয়েছেন।
রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের মন্ত্রী জাভেদ খান ঝড়ে ছয়জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন। এর মধ্যে চারজনের মৃত্যু হয়েছে উত্তর ২৪ পরগনায়, ১ জন করে দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরে।