ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ৮ই মে ২০২৫, ২৬শে বৈশাখ ১৪৩২


৩ বছরেও যুবদলের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে পারেননি নীরব-টুকু


১৩ নভেম্বর ২০১৯ ০০:৫২

আপডেট:
৮ মে ২০২৫ ২০:১৬

বিএনপির যুব সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদলের মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে আগামী জানুয়ারি মাসে। যদিও তিন বছরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেননি যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরব ও সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। সম্প্রতি লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দুই দফা সময়সীমা নির্ধারণ করে দিলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে ব্যর্থ হয়েছেন তারা। নিজ নিজ বলয় তৈরির চিন্তাভাবনার কারণে এমনটাই হচ্ছে বলে গত রবিবার দেশ রূপান্তরকে অভিযোগ করেন যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটির পদপ্রত্যাশী নেতারা।

যুবদলের পদপ্রত্যাশী নেতাদের অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু  বলেন, পদপ্রত্যাশীদের অভিযোগ সত্য নয়। কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে প্রতিদিনই তারা বৈঠক করছেন। পদপ্রত্যাশীদের বায়োডাটা যাচাই-বাছাই করে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে একটু সময় লাগছে। আগামী দুই-চার দিনের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করবেন তারা। যুবদলের পদপ্রত্যাশী নেতারা বলেন, সাইফুল আলম নীরবকে সভাপতি ও সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে সাধারণ সম্পাদক করে ২০১৭ সালের ১৮ জানুয়ারি যুবদলের কমিটি ঘোষণা করা হয়। যুবদলের গঠনতন্ত্র মোতাবেক এই কমিটির নির্ধারিত তিন বছর শেষ হবে আগামী জানুয়ারি মাসে। তাদের মেয়াদ এক মাস বাকি থাকলেও তারা পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেননি। এমনকি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দুই দফা সময় নির্ধারণ করে দিলেও তারা পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে ব্যর্থ হয়েছেন।

তারা বলেন, যুবদলকে শক্তিশালী করতে বিএনপির হাইকমান্ড বিগত দিনগুলোতে যে উদ্যোগ নিয়েছিল তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। বিএনপির এই যুব সংগঠন দিন দিন দুর্বল হয়েছে। সংগঠনটির শীর্ষ নেতাদের কোন্দল ও দূরদর্শী নেতৃত্বের অভাবে দুর্বল হয়েছে যুবদল। যুবদল এখন শুধু দিবসকেন্দ্রিক কর্মসূচি পালন করে।

যুবদলের পদপ্রত্যাশী নেতারা বলেন, বিগত দিনে যুবদলের যত কমিটি হয়েছে এবং যারা নেতৃত্বে এসেছে তারা নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাতে জড়িয়ে সংগঠনকে দুর্বল করেছেন। বিএনপির বর্তমান যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল-সাইফুল আলম নীরব যখন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তখন দুজনের মধ্যে চরম দ্বন্দ্ব ছিল। নীরব গ্রুপের সদস্যরা নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সভাপতি আলালের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়েছিলেন। তখন আলালের পক্ষের যুবদল নেতারা পাল্টা নীরবকে পিস্তল ঠেকান। এ নিয়ে চরম উত্তেজনা বিরাজ করে। পরে জ্যেষ্ঠ নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি ঠা-া হয়। নেতারা নিজেদের স্বার্থে একে অন্যকে পিস্তল ঠেকালেও রাজপথে তেমন কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি আলাল-নীরবের কমিটি। তাদের কমিটির মেয়াদ তিন বছর হলেও কাটিয়ে দিয়েছিল ছয় বছর।

তারা বলেন, ৩০ ডিসেম্বরের একতরফা নির্বাচনের প্রতিবাদ এবং কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে রাজপথে কার্যকর কোনো ভূমিকা নেই সংগঠনটির নেতাকর্মীদের। দিবসভিত্তিক কর্মসূচি পালন করছে যুবদল। এর বাইরে গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানাতে হয় তাদের কার্যক্রম।

পদপ্রত্যাশী যুবদলের নেতাকর্মীরা বলেন, যুবদলের গত কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক থাকাবস্থায় নীরবের নিজস্ব বলয় ছিল। এখন পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তিনি নিজের আস্থাভাজনদের রাখতে চান। অন্যদিকে ছাত্রদলের সভাপতি থাকাবস্থায় সুলতান সালাউদ্দিন টুকু তার নিজস্ব একটি বলয় তৈরি করেছেন। তিনিও নীরবের মতো করে নিজ আস্থাভাজনদের দিয়ে কমিটি করতে চান। এ দুই নেতার দ্বন্দ্বের কারণে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয় না। এ কারণে নেতাকর্মীরা ঝুঁকি নিয়ে আন্দোলন বা বিএনপির কর্মসূচিতে অংশ নেন না। কারণ আন্দোলন করতে গিয়ে কোনো নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হলে তখন তার রাজনৈতিক পরিচয় কী হবে? পদ-পদবি থাকলে নেতাকর্মীরা সেটা বাঁচানোর জন্য হলেও মাঠে নামতেন। তাছাড়া দীর্ঘদিন নিয়মিত কমিটি না হওয়ায় নেতাকর্মীদের জট লেগেছে। এ জট কাটানো কঠিন হবে।

যুবদলের নেতৃত্বের জট কীভাবে খুলবেন জানতে চাইলে যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরব দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমরা যে প্রক্রিয়ায় কমিটি করতে যাচ্ছি তাতে জট খুলে যাবে। কারণ পদপ্রত্যাশীদের বায়োডাটা সংগ্রহ করে তা যাচাই-বাছাই করে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হবে। যারা সত্যিকারের ত্যাগী নেতা তারাই কমিটিতে জায়গা পাবেন।