ঢাকা শুক্রবার, ৯ই মে ২০২৫, ২৭শে বৈশাখ ১৪৩২


মিরপুরে জোড়া খুনে জড়িতরা শনাক্ত


৫ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৮:১১

আপডেট:
৯ মে ২০২৫ ০৬:৩৩

রাজধানীর মিরপুরে ষাটোর্ধ্ব রহিমা বেগম (৬১) ও কাজের বুয়া সুমি (২০) খুনের ঘটনায় জড়িত একাধিক ব্যক্তিকে শনাক্ত করেছে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্য সম্পর্কেও জানতে পেরেছে পুলিশ। হত্যার আগে সুমি ধর্ষণের শিকার হন।

বুধবার তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।



পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনার মোস্তাক আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, রহিমা বেগম ও সুমি নামে দুই নারী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রহিমার মেয়ে রাশিদা বেগম বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেছেন। এই মামলার তদন্তে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। খুনের সঙ্গে জড়িতের শনাক্ত করেছি। খুনের উদ্দেশ্যও জানতে পেরেছি। তদন্তে পাওয়া তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এই জোড়া হত্যাকাণ্ডে একাধিক ব্যক্তি জড়িত ছিলেন, যাদের সবার নাম-পরিচয় জানা গেছে। তাদের গ্রেপ্তার করার জন্য বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্তে সংশ্লিষ্ট এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, দুই নারীকেই শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। এদের মধ্যে সুমি নামে এক নারী খুনের আগে ধর্ষণের শিকার হন।

যদিও ওই চিকিৎসকের মন্তব্য-এটি হ্যাবিচুয়াল সেক্সের আলামত।
দুই নারীর মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে ময়না তদন্তকারী চিকিৎসক ডা. একে এম মাইনুদ্দীন মর্গের সামনে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের জানান, দুই নারীকেই শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে।

দুপুর একটার দিকে মায়ের লাশ গ্রহণের জন্য হাসপাতাল মর্গের সামনে অপেক্ষা করছিলেন নিহত রহিমা বেগমের একমাত্র মেয়ে রাশিদা বেগম ও তার (রাশিদা) স্বামী শাহ আলম। মর্গে ঢুকেই কফিনে মোড়ানো লাশ দেখে বিলাপ শুরু করেন রাশিদা। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলতে থাকেন, কী সিন দেখলাম গো। এইটা কী পাওনা ছিল? কেন আমার কাছে তোমারে রাখলাম না। আমারে মাফ করে দিয়ো মা।

কান্না থামিয়ে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, যারে সন্দেহ করা হয়েছে তারে তো পুলিশ ধরেছে। কারা কেন মেরেছে কিছুই জানি না।

রাশিদার স্বামী শাহ আলম বলেন, বছরখানেক আগে শাশুড়িকে প্রায় ৯ মাস আমার নারায়ণগঞ্জের বাসায় রেখেছিলাম। মেয়ের বাসায় তার ভালো না লাগায় তিনি ফের মিরপুরে চলে যান। সেখানে একাই থাকতেন। সোহাগ নামে এক ছেলে মাঝে-মধ্যে বাজার করে দিত। এছাড়া একজন ছুটা কাজের বুয়া কাজ করত। তার সাথে মাঝে-মধ্যে মেয়ের যোগাযোগ হতো।



রাশিদা বলেন, বাবা মারা যাওয়ার পর মা মোতালিব হোসেন মিঠু নামে আরেকজনকে বিয়ে করেন। কিছুদিন সংসার করার পর সেই ব্যক্তিও তাকে ছেড়ে দিয়ে অন্যত্র বিয়ে করেন। তারপর থেকেই মা একা একা বাসায় থাকতেন। মিরপুর ২ নম্বরের ১১ নম্বর বাড়ির চতুর্থ তলার একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকতেন রহিমা বেগম। তবে ওই বাড়ির ভাড়া দিতেন কে সেবিষয়ে কোন তথ্য জানাতে পারেননি তারা।

বাড়ির একাধিক প্রতিবেশী নাম-পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ১১ নম্বর বাড়ির চতুর্থ তলায় বিভিন্ন বয়সী অচেনা মানুষজনের আনাগোনা ছিল। তারা সেখানে কেন যেতেন, সে বিষয়ে কিছু না দেখলেও লোকমুখে শুনেছি, কাজের মেয়ের পরিচয়ের আড়ালে অসামাজিক কর্মকাণ্ড চলতো।

সিআইডির এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ঘটনাস্থল থেকে জন্মনিরোধক সামগ্রী উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া সুমি যে কক্ষে থাকতেন সেই কক্ষ থেকে বীর্য মাখা কাপড়-চোপড় উদ্ধার করে পরীক্ষা করা হচ্ছে। তার মতে, খুনের আগে সুমি ধর্ষণের শিকার হতে পারেন। উদ্ধার করা এসব আলামতের পরীক্ষার সূত্র ধরেই খুনিদের শনাক্ত করার কাজ চলছে।

রহিমা বেগমের জীবন-যাপন বিষয়ে জানতে চাইলে নিহত রহিমার মেয়ে রাশিদার স্বামী শাহ আলমের ভগ্নিপতি দিদার মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, রহিমা বেগমের শরীরে নানা ধরনের রোগব্যাধি ছিল। এর জন্য প্রচুর ওষুধ খেতে হতো। এ ছাড়া তার প্রতিদিন প্রায় একে থেকে দেড় প্যাকেট দামি সিগারেট লাগত। বাসায় একা একা থাকলেও এসবের খরচ জোগাতেন কে বা কারা তার কিছুই জানেন না।

নিহত রহিমা বেগমের স্বজনরা জানান, তাদের গ্রামের বাড়ি যশোরে। তবে সেখানে লাশ না নিয়ে মেয়ের শ্বশুরবাড়ি নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানার গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের কারণ বিষয়ে শাহ আলম বলেন, বাসায় কিছু নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার ছিল- এসবের কারণেই কাজের ছেলে সোহাগ তাদের হত্যা করেছে বলে সন্দেহ করছেন।