ঢাকা বুধবার, ৮ই মে ২০২৪, ২৬শে বৈশাখ ১৪৩১


বিশ্বমানের চিকিৎসা সরঞ্জাম দেশেই বানাচ্ছে 'এএনসি'


৭ মার্চ ২০২১ ০৬:১৪

আপডেট:
৭ মার্চ ২০২১ ০৬:১৯

চিকিৎসা সরঞ্জামের সব কিছু আর দেশের বাইরে থেকে আনতে হয় না। আমদানি নির্ভরতা কমাতে এখন দেশেই উৎপাদন হচ্ছে চিকিৎসা সরঞ্জাম। তৈরি হচ্ছে রক্তের নমুনা সংরক্ষণের টিউব, ব্লাড ট্রান্সফিউশন সেটসহ বিভিন্ন ধরণের সিরিঞ্জ। উৎপাদকরা বলছেন এতে দাম কমবে চিকিৎসা সরঞ্জামের। সাশ্রয় হবে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা। উদ্যোক্তারা বলছেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে, দেশের চাহিদা মিটিয়ে অচিরেই বিদেশে রফতানি করা সম্ভব এসব মেডিক্যাল সরঞ্জাম।

পরীক্ষার জন্য রক্তের নমুনা সংরক্ষণ করা হয় ভ্যাকুয়াম ব্লাড কালেকশন টিউবে। কিন্তু এর পুরোটাই এখন আমদানি করতে হয়। প্রতিবছর প্রায় দুইশো কোটি টাকার টিউব আসছে বাংলাদেশে।

শনিবার কারখানাটি পরিদর্শনে গেলে উদ্যোক্তারা জানান, কারখানাটিতে বর্তমানে তিন হাজার কর্মী রয়েছেন। কাঁচামালের ৮০ শতাংশই সংগ্রহ করা হয় স্থানীয় বাজার থেকে। প্রযুক্তিগত সহায়তা নেয়া হয় জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন ও ভারতের।

দেশীয় প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তারা বলছেন, এখানকার পণ্য দেশের চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। দেশের প্রধান প্রধান মেডিক্যাল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ব্যবহার করা হচ্ছে এসব সরঞ্জাম। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানির চিন্তাও করছেন তারা।

তারা জানান, এই কারখানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ২২টি পণ্য তৈরির অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে ৫টি পণ্য (তিন ধরনের ডিসপোজেবল সিরিঞ্জ, অ্যালকোহল প্রি-প্যাড এবং ভ্যাকুয়াম রক্ত সংগ্রহ টিউব) উৎপাদন করে বাজারজাত করা হচ্ছে।

অনুমোদন পাওয়া ২২টি পণ্যের মধ্যে আরও আছে ইনসুলিন সিরিঞ্জ, ডিসপোজবল সুই, ইনফিউশন সেট, ফার্স্ট এইড ব্যান্ডেজ, স্কাল্প ভেইন সেট বা বাটারফ্লাই নিডল, ব্লাড কালেকশন স্ট্রেইট নিডল বা ফ্ল্যাশব্যাক, ব্লাড কালেকশন বাটারফ্লাই নিডল, আইভি ক্যানুলা, দুটি ধরনের এডি সিরিঞ্জ, বুরেট সেট, আম্বিলিক্যালকর্ড ক্ল্যাম্প, ব্লাড ট্রান্সফিউশন সেট ও স্পাইনাল নিডল।

কর্মকর্তারা জানান, এএনসিই বাংলাদেশের প্রথম ভ্যাকুয়াম ব্লাড কালেকশন টিউব প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান। তারা আশা করছেন, তিন বছরের মধ্যেই স্থানীয় চাহিদা পূরণে সক্ষম হবে প্রতিষ্ঠানটি।

প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন) মোস্তফা জামান বলেন, ‘এএনসি কারখানা আমাদের টানা চার বছরের নিরলস পরিশ্রমের ফল। আমি আত্মবিশ্বাসী, এএনসি বাংলাদেশের মেডিক্যাল ডিভাইস বাজারে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।

তিনি বলেন, ‘এএনসির মূল লক্ষ্য নিরাপদ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে উদ্ভাবনী প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বিশ্বমানের মেডিক্যাল এবং সার্জিকাল ডিভাইস তৈরি করা।’

মোস্তফা জামান জানান, এএনসি জিএমই গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান। ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত গ্রাফিক মেশিনারি অ্যান্ড ইকুপমেন্ট (জিএমই) গ্রুপ ৩০ বছর ধরে বিশ্বমানের মেডিক্যাল ও সার্জিক্যাল সরঞ্জাম সরবরাহের মাধ্যমে দেশের স্বাস্থ্য খাতে সেবা দিচ্ছে। জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন এবং ভারতের প্রযুক্তিগত সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে এএনসি।

তিনি বলেন, ‘জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা ও সুরক্ষা নিশ্চিতের পাশাপাশি এএনসি এই উদ্যোগের মাধ্যমে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করছে, যা জাতীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে।

‘এএনসি বাংলাদেশে নতুন তিন হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে। এএনসি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে উৎপাদিত পণ্য রপ্তানির কথা বিবেচনা করছে।’

এএনসি ০.৫ মিলি অটো-ডিসেবল সিরিঞ্জ তৈরি করছে জানিয়ে মোস্তফা জামান বলেন, এই সিরিঞ্জটি একবারের বেশি ব্যবহার করা যাবে না।

প্রতিষ্ঠানটির জেনারেল ম্যানেজার (উৎপাদন) ড. বিজয় কুমার শর্মার ভারতে ৩৭ বছর ধরে মেডিক্যাল সরঞ্জাম খাতে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে।

 তিনি বলেন, ‘আমার দীর্ঘ কার্য সময়ে ভারতের বেশ কয়েকটি প্রথম সারির মেডিক্যাল ডিভাইস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করেছি। তবে আমি এএনসি মেডিক্যাল ডিভাইস বিডির মতো এমন আধুনিক এবং সুপার স্ট্রাকচার্ড মেডিক্যাল ডিভাইস কারখানা দেখিনি।’

কারখানা পরিদর্শন শেষে ভারতের সাবেক ডেপুটি ড্রাগস কন্ট্রোলার মলয় কুমার মিত্র বলেন, বাংলাদেশ সরকারের ডিজিডিএ-র বিধি মোতাবেক এএনসি মেডিকেল ডিভাইস একটি সুন্দর এবং সুপার স্ট্রাকচার্ড মেডিক্যাল ডিভাইস কারখানা স্থাপন করেছে, যা বাংলাদেশের মেডিক্যল ডিভাইস বাজারে মাইলফলক হয়ে থাকবে।

প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ডা. চৌধুরী হাসান মাহমুদ বলেন, ‘বাংলাদেশে ২০ হাজার কোটি টাকার মেডিক্যাল ডিভাইসের বাজারে রয়েছে। অথচ বিনিয়োগকারী শিল্পপতিরা এই মেডিক্যাল ডিভাইস খাতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী নন।

‘বাংলাদেশের মেডিক্যাল ডিভাইস সেক্টর সম্প্রসারণের জন্য আমি এএনসি মেডিকেল ডিভাইস বিডি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে চিকিৎসা খাতের উন্নয়নে কাজ করতে বদ্ধপরিকর।’