ঢাকা রবিবার, ৪ঠা মে ২০২৫, ২২শে বৈশাখ ১৪৩২


‘নৌকায় ভোট দিন, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি দেব’


১৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:০৫

আপডেট:
৪ মে ২০২৫ ১১:২২

ঢাকা: ২১টি অঙ্গীকার ও ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ স্লোগানে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্বাচনী ইশতেহার-২০১৮ ঘোষণা করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আগামী ৩০ তারিখে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আবার আওয়ামী লীগের বিজয় নিশ্চিত করুন। আপনারা নৌকায় ভোট দিন, আমরা আপনাদের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি দেবো।’

মঙ্গলবার (১৮ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এই ইশতেহার ঘোষণা করেন।

শেখ হাসিনা দেশবাসীর প্রতি আকুল আবেদন জানিয়ে বলেন, আগামী ৩০ তারিখে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আবার আওয়ামী লীগের বিজয় নিশ্চিত করুন। আপনারা নৌকায় ভোট দিন, আমরা আপনাদের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি দেবো।

সাতচল্লিশ বছর আগে ১৯৭১ সালে ৯ মাস মাসের সশস্ত্র রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ শেষে ডিসেম্বরে তারিখে বাঙালি জাতি চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করেছিল। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের ৩০ তারিখ ব্যালট বিপ্লবের মাধ্যমে বাঙালি জাতির এবার স্বাধীনতার প্রতীক নৌকার বিজয় ছিনিয়ে আনবে-এ বিশ্বাস আমার আছে। বিজয় আমাদের সুনিশ্চিত, ইনশাল্লাহ। সবাই ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন। মহান আব্বুল আলামিন আমাদের সহায় হোন।

আমার ব্যক্তিগত কোন চাওয়া-পাাওয়া নাই। বাবা-মা-ভাই আত্মীয় পরিজনকে হারিয়ে আমি রাজনীতি করছি শুধু জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য। এ দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য। এদেশের সাধারণ মানুষ যাতে ভালোভাবে বাঁচেতে পারেন, উন্নত সমৃদ্ধ জীবনের অধিকারী হতে পারেন তা বাস্তবায়ন করাই আমার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য।

আগামী ২০২০ সালে জাতির জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী আমরা সাড়ম্বরে পালন করবো। বাঙালি জাতির এই দুই মাহেদ্রক্ষণ সামনে রেখে মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগই পারবে দেশকে সামনে এগিয়ে নিতে। স্বাধীনতাবিরোধী কোনো শক্তি এ সময় রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকলে তা হবে মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য গ্লানিকর।

আমি কথা দিচ্ছি, অতীতে থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা আরও সুন্দর ভবিষ্যত নির্মাণ করবো। জাতির পিতার কাঙ্ক্ষিত ক্ষুধা, দারিদ্র্য, নিরক্ষরমুক্ত ও অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলবো।

আওয়ামী লীগের এবারের ইশতেহারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি বিশেষ উদ্ধৃতি ব্যবহার করা হয়েছে। সেটি হলো ‘এ স্বাধীনতা আমার ব্যর্থ হয়ে যাবে যদি আমার মানুষ পেট ভরে ভাত না খায়। এই স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি বাংলার মা-বোনেরা কাপড় না পায়। এ স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি এ দেশের মানুষ, যারা আমার যুবক শ্রেণি আছে তারা চাকুরি না পায় বা কাজ না পায়।’

বঙ্গবন্ধুর এই উক্তিকে সামনে রেখেই ২১টি বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে ইশতেহারে। এগুলো হলো— আমার গ্রাম-আমার শহর: প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণ; তারুণ্যের শক্তি—বাংলাদেশের সমৃদ্ধি: তরুণ-যুবসমাজকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর ও কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা; দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ; নারীর ক্ষমতায়ন; লিঙ্গ সমতা ও শিশু কল্যাণ; পুষ্টিসম্মত ও নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা; সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদ নির্মূল; মেগা প্রজেক্টসমূহের দ্রুত ও মানসম্মত বাস্তবায়ন; গণতন্ত্র ও আইনের শাসন সুদৃঢ় করা; সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি; দারিদ্র্য নির্মূল; সকল স্তরে শিক্ষার মান বৃদ্ধি; সকল স্তরে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তা; বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিরাপত্তার নিশ্চয়তা; সার্বিক উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তির অধিকতর ব্যবহার; আধুনিক কৃষি ব্যবস্থা; দক্ষ ও সেবামুখী জনপ্রশাসন; ব্লু-ইকোনমি, তথা সমুদ্র সম্পদ উন্নয়ন; নিরাপদ সড়কের নিশ্চয়তা; প্রবাসী কল্যাণ কর্মসূচি এবং টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার প্রত্যয় ও প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের একটি উধ্বৃতি দিয়ে ‘যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ, প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল, এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি—নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।’

উল্লেখ্য, আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গত ১২ ডিসেম্বর থেকে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন করে একাদশ জাতীয় সংসদের আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শুরু করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

ইশতেহার উপকমিটির আহ্বায়ক আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক সুচনা বক্তব্য রাখেন। ২১ সদস্য বিশিষ্ট ইশতেহার উপকমিটি গঠন করা হয়েছি। ইশতেহার উপকমিটির সদস্য সচিব হলেন ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। ইশতেহার ঘোষণার অনুষ্ঠানে কমিটির অন্যান্য সদস্য উপস্থিত ছিলেন।