ঢাকা রবিবার, ৪ঠা মে ২০২৫, ২২শে বৈশাখ ১৪৩২


ঢাকা-৭ হাজি সেলিমের পক্ষে নৌকার গণজোয়ার


৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:৩৮

আপডেট:
৪ মে ২০২৫ ১৫:২০

ঢাকা-৭ হাজি সেলিমের পক্ষে নৌকার গণজোয়ার

আসন্ন সংসদ নির্বাচনের ঢাকার অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ আসন ঢাকা-৭ আসন। এই আসনে নৌকা মার্কায় পুরান ঢাকার হেভিওয়েট প্রার্থী হাজি মোহাম্মদ সেলিমের সঙ্গে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে রয়েছেন ধানের শীষের (গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক) মোস্তফা মোহসীন মন্টু।কিন্তু হাজী সেলিমের পক্ষে গণজোয়ার বইছে বলে জানান একাধিক প্রার্থী।

নির্বাচনের এক দিন আগের ভাবনা নিয়ে জানতে চাইলে উভয়ই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ প্রকাশ করেছেন। তবে হাজি মোহাম্মদ সেলিম নিজেকে স্থানীয় প্রার্থী হিসেবে অন্যান্য প্রার্থীর চেয়ে এগিয়ে রাখছেন।


নির্বাচন নিয়ে শনিবার হাজি সেলিমের পক্ষে মুখপাত্র হিসেবে তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিএস) মহীউদ্দিন মাহমুদ  বলেন, আমরা জয়ের বাপরে ১০০ ভাগ আশাবাদী। হাজি সেলিম স্থানীয় প্রার্থী। জনগণ তাকে ভোট দেবে। তিনি কিছুটা অসুস্থ থাকলেও প্রচারণায় সক্রিয় অংশ নিয়েছে। জোরেশোরে প্রচারণা করেছেন। তিনি যেভাবে কাজ করেছেন এতে আমরা নিশ্চিত যে, পুরান ঢাকার মানুষ তাকেই নেতা হিসেবে নির্বাচিত করবে।

এই আসনের ধানের শীষের প্রার্থী মোস্তফা মোহসীন মন্টু বলেন, প্রার্থী হিসেবে আমি বিশ্বাস করি আমি জিতবো। তারপরেও বলি জনগণ যাকে খুশি তাকে ভোট দিক, অন্তত ভোটটা দিক। আমরা জনগণের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি। জনগণ যদি সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারে, ভোট কেন্দ্রে যেতে দেয়া হয়, বিরোধী দলীয় পোলিং এজেন্ট এবং কর্মীদের থাকতে দেয়, তাহলে আমার জয় হবে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২৩, ২৪, ২৫, ২৬, ২৭, ২৮, ২৯, ৩০, ৩১, ৩২, ৩৩, ৩৫, ও ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের আসনটিতে মোট ৩ লাখ ২৮ হাজার ২৬৯ জন ভোটার যার মধ্যে ১ লাখ ৭৫ হাজার ২৫০ পুরুষ ও ১ লাখ ৫৩ হাজার ১৯ জন নারী ভোটার।

হাজি সেলিমের জয়ের ক্ষেত্রে কোনো ফ্যাক্টরটি কাজ করবে? জানতে চাইলে তার পিএস বলেন, জনগণ আমাদেরকে দেবে ভোট, কারণ আমরা স্থানীয়। মোস্তফা মোহসীন মন্টু (ধানের শীষ প্রার্থী) প্রকৃত পক্ষে ঢাকা-৩ (কেরানীগঞ্জ) আসনের প্রার্থী। উনি ওখান থেকেও মনোনয়নপত্র কিনেছিলেন। পুরান ঢাকার স্থানীয় লোকজনরা ভাসমান লোকজনকে ভোট দেয় না। সেকারনে শতভাগ আশাবাদী।

এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে ‘ভাসমান’ প্রার্থী মন্টু বলেন, ‘সেলিম সাহেব যোগ্য প্রার্থী। ওনার সঙ্গে আমি কোনো বিতর্কে যাবো না। আল্লাহ্ ওনাকে তাড়াতাড়ি সুস্থ করুক, উনি যেন কথা বলতে পারেন। ওনার স্ত্রী অসুস্থ, আমি আল্লাহ্র কাছে তার স্ত্রীর জন্যেও দোয়া করবো। কিন্তু কথা হলো- সেলিম সাহেবের জন্মগ্রহণের আগে থেকেই আমি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, এই এলাকার সঙ্গে জড়িত। আমার পূর্বপুরুষ, আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি-ঘর ও আমাদের নিজেদের বাড়ি-ঘর লালবাগ, পোস্তা এলাকায় অবস্থিত। আমার বাল্যকাল নবকুমার হাইস্কুলে, আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছু এই এলাকায়। আমাদের আত্মীয়-স্বজনের এইসব এলাকায় কমপক্ষে ৫০-৬০টি মার্কেটে রয়েছে। সেগুলো বলে লাভ নাই। মুক্তিযুদ্ধে আমার ঢাকার সহযোদ্ধা কমপক্ষে ৩০-৪০ জন লালবাগসহ এই এলাকায় থাকে। পুরান ঢাকায় ১০০-১৫০ আমার সঙ্গে কাজ করেছে।’

২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে হাতি মার্কায় নির্বাচন করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনকে হারিয়ে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন হাজি সেলিম। ২০০৮ সালের নির্বাচনে এই আসনে জয়লাভ করেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আসনটি থেকে হাজি সেলিম জয়লাভ করলেও ২০০১ সালের নির্বাচনে তাকে হারিয়ে আলোচিত হন প্রয়াত বিএনপি নেতা নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টু।

২০১৬ সালের মাঝামাঝিতে স্ট্রোকজনিত সমস্যায় মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন মদিনা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাজি সেলিম। এরপর তিনি সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সেখান থেকে চিকিৎসা শেষে গত বছর দেশে ফেরেন। তবে দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড, ব্যবসা-বাণিজ্য, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, পারিবারিক ও সামাজিক সব ধরনের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন ইশারা-ইঙ্গিতে। তাকে সহায়তা করতেন তার স্ত্রী গুলশান আরা বেগম ও বড় ছেলে সোলায়মান সেলিম। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বঞ্চিত হলেও এবার দলের মনোনয়ন পেয়ে কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলা শুরু করেছেন এ সংসদ সদস্য। মনোনয়নপত্র পেয়ে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে সবার সঙ্গে অল্প-স্বল্প কথাও বলছেন তিনি। কোনো বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলার প্রয়োজন পড়লে সহযোগীর সহায়তা নিচ্ছেন।

আওয়ামী লীগের চোখে এই আসনের নির্বাচনী পরিবেশ অত্যন্ত সুষ্ঠু হলেও মন্টু তার উল্টোটাই দাবি করেন। তিনি বলেন, শুক্রবার রাতে আমার তিনজন নারী কর্মীকে ভোটার স্লিপ বিতরণের সময় আটক করে নিয়ে গেছে বংশাল থানায়। তাদের একজনের মা থানায় গেলে তাকেও আটকে রাখা হয়েছে। হরদম এমন কাজ করলে কর্মীরা প্যানিক হয়ে যাচ্ছে। তারা থাকবে কি করে? একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধার সময় আমরা এই অবস্থা চিন্তা করি নাই। আমরা চাই মানুষ যাকে খুশি তাকে ভোট দিক, অন্তত ভোটাধিকার পাক। তবে আমার মনে হচ্ছে সরকার যে পদক্ষেপ নিচ্ছে সেটা গ্রহণযোগ্য পদক্ষেপ না। বর্তমানের জন্যেও না ভবিষ্যতের জন্যেও না। এটা দেশকে একটি সংঘাতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

 

ঢাকা-৭ আসনের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী পোস্টার ও ক্যাম্প দেখা গেলেও মোস্তফা মোহসীন মন্টুর একটি পোস্টারও দেখা যায়নি। প্রতিটি এলাকায় নৌকার জয়জয়কার। তবে মন্টুর দাবি, তার ভোটাররা এখন নিরবে রয়েছে।

এই দুই প্রার্থী ছাড়া এই আসনের অন্যান্যরা হচ্ছেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের খালিকুজ্জামান (মই), জাতীয় পার্টির তারেক আহমেদ আদেল (লাঙ্গল), জাকের পার্টির বিপ্লব চন্দ্র বণিক (গোলাপ ফুল), গণফ্রন্টের মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন (মাছ), বাংলাদেশ মুসলিম লীগের মো. আফতাব হোসেন মোল্লা (হারিকেন), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. আব্দুর রহমান (হাতপাখা), বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফের মো. জাহাঙ্গীর হোসেন (টেলিভিশন), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মো. মাসুদ পাশা (আম), গণফোরামের মো. মোশাররফ হোসেন (উদীয়মান সূর্য), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মো. হাবিবুল্লাহ (বটগাছ)।

এই আসনে গণফ্রন্টের মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন, ইসলামী আন্দোলনের আব্দুর রহমান ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মো. হাবিবুল্লাহ ছাড়া কারও পোস্টার ও প্রচারণা দেখা যায়নি।