দাপটে কম নন রুটিন ভিসিও

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের রুটিন কাজের দায়িত্বে থাকা সদ্য বিদায়ী ট্রেজারার অধ্যাপক ড. এ কে এম মাহবুব হাসানের বিরুদ্ধে সিন্ডিকেট সভা ছাড়াই সাময়িক বরখাস্ত হওয়া এক কর্মকর্তাকে দায়িত্বে পুনর্বহাল করার অভিযোগ উঠেছে। একই সঙ্গে তিনি পাঁচ কর্মকর্তাকে আন্তঃবদলি করেছেন। এসব কর্মকাণ্ডকে রুটিন উপাচার্যের এখতিয়ারবহির্ভূত উল্লেখ করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট কমিটির সদস্যসহ বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষক-কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে মাহবুব হাসান গত মঙ্গলবার মুঠোফোনে বলেন, ‘এখন আমি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ না। দায়িত্বে থাকাবস্থায় যা করেছি, তা নিয়ে এখন কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম ইমামুল হকের চার বছর মেয়াদ শেষ হয় গত ২৭ মে। এরপর থেকে উপাচার্যের রুটিন কাজের দায়িত্বে থাকা ট্রেজারার অধ্যাপক ড. এ কে এম মাহবুব হাসানের মেয়াদ শেষ হয় ৭ অক্টোবর। আর বছরখানেক আগে থেকে রেজিস্ট্রারের পদও শূন্য রয়েছে।
এ কারণে অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম নিয়ে বড় ধরনের সংকটে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়। অনেক ক্ষেত্রেই অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এসব পদ শূন্য থাকায় পূর্বনির্ধারিত ১৮ ও ১৯ অক্টোবরের বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত করেছে এ সংক্রান্ত কোর কমিটি। এমন অবস্থায় সদ্য বিদায়ী ট্রেজারার মাহবুব হাসান উপাচার্যের রুটিন কাজের দায়িত্বে থাকার সময় সিন্ডিকেটের সভা ছাড়াই এখতিয়ারবহির্ভূতভাবে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে চরম অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট কমিটির সদস্যসহ একাধিক শিক্ষকের অভিযোগ, সিন্ডিকেটের কোনো সভা কিংবা সিদ্ধান্ত ছাড়াই সাবেক রেজিস্ট্রারের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগে বছরখানেক আগে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া অর্থ শাখার সহকারী পরিচালক বরুন কুমার দে’কে একই পদে পদায়ন করে গেছেন রুটিন উপাচার্য মাহবুব হাসান।
এছাড়া গত ১৪ অক্টোবর তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরেবাংলা হলের শাখা কর্মকর্তা (এসও) হাবিবুর রহমানকে সংস্থাপন শাখার এসও, অর্থ শাখার এসও জসিমউদ্দিনকে শেরেবাংলা হলের এসও এবং ক্রীড়া দপ্তরের সহকারী পরিচালক বাহাউদ্দিন গোলাপকে সহকারী রেজিস্ট্রার পদে বদলি করেন। সদ্য বিদায়ী ট্রেজারারের ঘনিষ্ঠ অনুসারী হওয়ায় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) সহকারী পরিচালক আতিকুর রহমানকে কোনো অফিস আদেশ ছাড়াই অর্থ শাখার সহকারী পরিচালক পদ দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে রুটিন উপাচার্য মাহবুব হাসান বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলীকে কর্র্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কর্মস্থল ত্যাগ, গণমাধ্যমে মানহানিকর বক্তব্য দেওয়াসহ তিনটি অভিযোগে কারণ ব্যাখ্যা করতে নির্দেশ দেন। গত ২৯ সেপ্টেম্বর সাত দিনের সময় দিয়ে ট্রেজারার স্বাক্ষরিত কারণ দর্শানোবিষয়ক ওই চিঠি ট্রেজারের দেওয়া সময় অতিক্রম হওয়ার পর গত ১৩ অক্টোবর নির্বাহী প্রকৌশলীকে দেওয়া হয়। নির্বাহী প্রকৌশলী মুরশীদ আবেদীনের অভিযোগ, সদ্য বিদায়ী ট্রেজারার ষড়যন্ত্র করে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছেন। এটা তিনি এখতিয়ারবহির্ভূতভাবে করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বশীল একাধিক শিক্ষক-কর্মকর্তার অভিযোগ, নিয়মিত উপাচার্য ছাড়া রুটিন দায়িত্বের উপাচার্য অভ্যন্তরীণ বদলি করতে পারেন না। উপাচার্যের রুটিন দায়িত্বে থাকাকালে ট্রেজারার তার অনুগত কর্মকর্তাদের সুবিধা দিতে এখতিয়ারবহির্ভূত কাজ করেছেন। তাদের দাবি, সিন্ডিকেটের অনুমোদন ছাড়া কোনো কর্মকর্তার বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের সুযোগ নেই।
কিন্তু রুটিন ভিসি বিধি লঙ্ঘন করে তাকে পদায়ন করেছেন। শেরেবাংলা হলের এসও হাবিবুর রহমান সদ্য বিদায়ী ট্রেজারারের নিকটাত্মীয়। তাকেও শেষ সময়ে পদায়ন করেন মাহবুব হাসান।
ভর্তি পরীক্ষার তারিখ দিয়েও পরবর্তী সময়ে পরীক্ষা স্থগিত করার জন্য ট্রেজারারের অদক্ষতাকে দায়ী করেছেন শিক্ষকরা। তারা জানান, বিগত বছরগুলোয় নভেম্বরে ভর্তি পরীক্ষা হয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভায় রুটিন উপাচার্য ১৮ ও ১৯ অক্টোবর ভর্তি পরীক্ষার তারিখ প্রস্তাব করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভায় ওই প্রস্তাব গৃহীত হলে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ছাপানোসহ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়। কিন্তু উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেন সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা।
এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সহকারী অধ্যাপক আবু জাফর মিয়া বলেন, ‘উপাচার্যের রুটিন দায়িত্বে থেকে নীতি-নির্ধারণী কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। কাউকে বদলি, পদায়ন কিংবা কারণ দর্শানো রুটিন ভিসির কাজ নয়।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট কমিটির সদস্য ও কোস্টাল স্টাডিজ অ্যান্ড ডিজস্টার ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান ড. হাফিজ আশরাফুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নিয়মিত উপাচার্যের ক্ষমতাপ্রাপ্ত না হলে মৌলিক কোনো কাজ করা যায় না। রুটিন ভিসির দায়িত্বে থেকে ড. এ কে এম মাহবুব যা করেছেন, তা অনভিপ্রেত, হাস্যকর ও দুঃখজনক।’