ঢাকা রবিবার, ১৯শে মে ২০২৪, ৫ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা মহাসড়কে অস্বাভাবিক টোল প্রস্তাব


৪ জানুয়ারী ২০২১ ২০:০১

আপডেট:
১৯ মে ২০২৪ ০৫:৪৩

বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল মহাসড়ক ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা চার লেন। নির্মাণশেষে গত বছর মার্চে এটি উদ্বোধন করা হয়েছে। এতদিন বিনা পয়সায় মহাসড়কটি ব্যবহার করা গেলেও এখন চলছে টোল আরোপের প্রস্তুতি। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর থেকে মহাসড়কটিতে চলাচলের জন্য যানবাহনকে দিতে হবে পৃথক টোল।

গতকাল সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে এ-সংক্রান্ত এক অংশীজন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে টোল হার প্রস্তাব করেছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর। যদিও অস্বাভাবিক হারে টোল আরোপের বিরোধিতা করেন বৈঠকে উপস্থিত পরিবহন মালিকরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে টোল হার পর্যালোচনায় ১৬ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পদ্মা সেতু ছাড়াও দক্ষিণাঞ্চল থেকে রাজধানী রুটে চলাচলকারী যানবাহনকে যাত্রাবাড়ী থেকে গুলিস্তান যেতে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার ব্যবহারের টোল দিতে হবে। আর ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা মহাসড়কেও টোল দিতে হবে। এতে বাস ভাড়া যেমন বাড়বে, পণ্য পরিবহন খরচও তেমনি বাড়বে। ফলে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

গতকালের বৈঠকে উপস্থাপিত টোল প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা মহাসড়ক চার লেন নির্মাণে ১১ হাজার তিন কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এছাড়া মহাসড়কটি রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োগ দেয়া যেতে পারে পৃথক অপারেটর। টোল আদায়ের মাধ্যমে এ বিনিয়োগ ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় তোলা যেতে পারে। এক্ষেত্রে টোল নীতিমালা-২০১৪ অনুসারে টোল হার নির্ধারণ করা হয়েছে।

মহাসড়কটিতে যানবাহন প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য চারটি পয়েন্ট চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়া মহাসড়কটিতে তিনটি সেতু ও সাতটি ফ্লাইওভার রয়েছে। তবে সেতু ও ফ্লাইওভারগুলো বিবেচনা থেকে বাদ দিয়ে টোলের ভিত্তি হার প্রতি কিলোমিটার ১২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা পুরো মহাসড়কের পাশাপাশি যাত্রাবাড়ী-মাওয়া ও পাচ্চর-ভাঙ্গা অংশের জন্য পৃথক হারে টোলের হার প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রস্তাবনা অনুযায়ী, ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা মহাসড়কের পুরো অংশের জন্য কিলোমিটারপ্রতি টোলের হার ট্রেইলারে ৫০ টাকা ৪৫ পয়সা, বড় ট্রাক ৪০ টাকা ৩৬ পয়সা, মাঝারি ট্রাক ২০ টাকা ১৮ পয়সা, ছোট ট্রাক ১৫ টাকা ১৪ পয়সা, বড় বাস ১৮ টাকা ১৬ পয়সা, ছোট বাস ১০ টাকা নয় পয়সা, মাইক্রোবাস ও পিকআপে আট টাকা সাত পয়সা, ব্যক্তিগত গাড়িতে পাঁচ টাকা পাঁচ পয়সা ও বাইকে এক টাকা এক পয়সা।

এ হিসাবে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা মহাসড়কে (৫৫ কিলোমিটার) ট্রেইলার চলাচলের জন্য টোল গুনতে হবে দুই হাজার ৭৭৫ টাকা, বড় ট্রাকে দুই হাজার ২২০ টাকা, মাঝারি ট্রাকে এক হাজার ১১০ টাকা, ছোট ট্রাকে ৮৩৩ টাকা, বড় বাসে ৯৯৯ টাকা, ছোট বাস/কোস্টারে ৫৫৫ টাকা, মাইক্রোবাস/জিপ/পিকআপে ৪৪৪ টাকা, ব্যক্তিগত গাড়িতে ২৭৮ টাকা ও বাইকে ৫৬ টাকা।

এদিকে যাত্রাবাড়ী থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৪৪ কিলোমিটার অংশের জন্য কিলোমিটারপ্রতি টোলের হার ট্রেইলারে ৬২ টাকা ১৩ পয়সা, বড় ট্রাক ৪৯ টাকা ৭০ পয়সা, মাঝারি ট্রাক ২৪ টাকা ৮৫ পয়সা, ছোট ট্রাক ১৮ টাকা ৬৪ পয়সা, বড় বাস ২২ টাকা ৩৭ পয়সা, ছোট বাস ১২ টাকা ৪৩ পয়সা, মাইক্রোবাস ও পিকআপে ৯ টাকা ৯৪ পয়সা, ব্যক্তিগত গাড়িতে ৬ টাকা ২১ পয়সা ও বাইকে এক টাকা ২৪ পয়সা।

এছাড়া পাচ্চর-ভাঙ্গা অংশের ১১ কিলোমিটারের জন্য কিলোমিটারপ্রতি টোলের হার ট্রেইলারে ৩০ টাকা, বড় ট্রাক ২৪ টাকা, মাঝারি ট্রাক ১২ টাকা, ছোট ট্রাক ৯ টাকা, বড় বাস ১০ টাকা ৮০ পয়সা, ছোট বাস ছয় টাকা, মাইক্রোবাস ও পিকআপে চার টাকা ৮০ পয়সা, ব্যক্তিগত গাড়িতে তিন টাকা ও বাইকে ৬০ পয়সা।

বৈঠকে জানানো হয়, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) নির্মাণাধীন প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত ছয় লেনের ঢাকা বাইপাস এবং রামপুরা-আমুলিয়া-ডেমরা মহাসড়কেও টোল দিতে হবে। এরই মধ্যে ঢাকা বাইপাসের টোলের হার অনুমোদন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। ঢাকা বাইপাসের ওপর ভিত্তি করেই ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা মহাসড়কে টোল হার নির্ধারণ করা হয়েছে। তাই প্রস্তাবিত টোল পর্যালোচনা করা হলেও ঢাকা বাইপাসের চেয়ে কম হার নির্ধারণ করা যাবে না।

ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা মহাসড়কে প্রবেশ ও বের হওয়ার চারটি প্রস্তাবিত পয়েন্ট হলোÑআবদুল্লাহপুর, ধলেশ্বরী, মালিগ্রাম এবং আড়িয়াল খাঁ। এসব পয়েন্টে টোল দিয়ে যানবাহন বেরিয়ে যেতে পারবে। আবার এসব পয়েন্ট দিয়ে মহাসড়কটিতে গাড়ি প্রবেশের সুযোগও থাকবে। তবে কোনো যানবাহনকে মহাসড়কটিতে একাধিকবার টোল দিতে হবে না।

এদিকে মহাসড়কটিতে টোল আদায় শুরুর পর পোস্তগোলা (বুড়িগঙ্গা-১) সেতু, ধলেশ্বরী সেতু ও আড়িয়াল খাঁ সেতুতে আর টোল দিতে হবে না। একটি গাড়ি মহাসড়কটিতে প্রবেশ করে বেরিয়ে যাওয়ার মাঝে যত কিলোমিটার পথ চলবে ঠিক ততটুকুর টোল দিতে হবে। তবে দুই পাশে ধীরগতির যানবাহনের জন্য নির্মিত সার্ভিস লেনে কোনো টোল দিতে হবে না।

বৈঠকের সূত্রমতে, টোল হার পর্যালোচনায় গঠিত কমিটির সভাপতি সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. আবু ছাইদ শেখ ও সদস্য-সচিব সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের উপসচিব ফাহমিদা হক খান। এছাড়া কমিটিতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ, ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. রুস্তম আলী খান, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক রুস্তম আলী, বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরীসহ সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এবং সওজের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা রয়েছেন। আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে এ কমিটিকে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা মহাসড়কের টোল হার পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।