ঢাকা সোমবার, ৬ই মে ২০২৪, ২৪শে বৈশাখ ১৪৩১


স্কুল শিক্ষককে জামায়াতের তকমা লাগিয়ে নাশকতার মামলায় গ্রেফতার


৩ মার্চ ২০২২ ২২:৩৯

আপডেট:
৬ মে ২০২৪ ১১:২৮

মণিরামপুরে ধলিগাতী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কৃষি শিক্ষক হাতেম আলীকে জামায়তের ট্যাগ লাগিয়ে নাশকতার মামলায় গ্রেফতার হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হাতেম আলী কোন রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে জড়িন নন। তবে তার পরিবারের অন্যান্য লোকজন সবাই আওয়ামী লীগের সমর্থক।

হাতেম আলী রীতিমত একজন ফরেজগার ব্যক্তি। সময় পেলে তিনি মাঝে মধ্যে তাবলীগে অংশ নিতেন। সেই তাবলীগে অংশ নেওয়ায় তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। অভিযোগ রয়েছে ষড়যন্ত্র করে হাতেম আলীকে জামায়াতের তকমা লাগিয়ে নাশকতার মামলায় আসামি করে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর এ বিষয়টি জানাজানি হবার পর শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক, জনপ্রতিনিধিসহ দলমত নির্বিশেষে এলাকাবাসীর মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। স্কুল শিক্ষক হাতেম আলী শ্যামকুড় ইউনিয়নের আগরহাটি গ্রামের মৃত ওয়াজেদ আলী বিশ্বাসের ছেলে।
ধলিগাতী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন বলেন, তার সহকর্মী কৃষি শিক্ষক হাতেম আলী অত্যন্ত ধার্মিক হওয়ায় সময় পেলে মাঝে মধ্যে এলাকায় তাবলীগে অংশ নিতেন। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি হাতেম আলী মণিরামপুর সদর ইউনিয়নের ফতেয়াবাদ গ্রামের জামে মসজিদে তিনদিনের তাবলীগে অংশ নেন।


তাবলীগ শেষে সেখান থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি রোববার সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে হাতেম আলী সফর সঙ্গী খোদাবক্স, ফয়সাল, আবদুল্লাহ, সজিবসহ ৭-৮ জন মিলে ইজিবাইকযোগে বাড়ি ফিরছিলেন। সকাল সাতটার দিকে তাদের ইজিবাইকটি সুন্দলপুর বাজারের আবদুল খালেকের বাড়ির সামনে পৌঁছুলে বিপরীতদিক থেকে জামায়াত-শিবিরের কয়েক শতাধিক নেতাকর্মী ঝটিকা মিছিল করে যাচ্ছিলেন।

এ সময় হাতেম আলীসহ তার অপর সঙ্গীরা ইজিবাইকে অবস্থান করছিলেন। মিছিলটি পার হওয়ার পর হাতেম আলীসহ তার সঙ্গীরা যার যার বাড়িতে চলে যান।
জামায়াত-শিবিরের আচমকা ঝটিকা মিছিলের খবর জানাজানি হলে প্রশাসনের মধ্যে ব্যাপক তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়। ফলে এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পায়। শ্যামকুড় ইউপি চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আলমগীর হোসেন বলেন, ২৭ ফেব্রুয়ারি সকালে জামায়াত-শিবিরের কয়েক’শ নেতাকর্মী মাদকের বিরুদ্ধে ব্যানার নিয়ে ঝটিকা মিছিল বের করে।

কিছু বুঝে উঠার আগেই তারা মিছিল করে নিমিষেই পালিয়ে যায়। ইউপি চেয়ারম্যান আরো বলেন, মিছিলের সংবাদ পেয়ে তিনি বেলা ১২ টার দিকে আবু দাউদ, আবদুল মালেক, আবদুর রব ও স্কুল শিক্ষক হাতেম আলীকে লোক মারফত ইউনিয়ন পরিষদে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

এর মধ্যে তিনজন মিছিলে অংশ নেওয়ার কথা স্বীকার করলেও স্কুল শিক্ষক হাতেম আলী অস্বীকার করেন। ফলে দুপুর দুইটার দিকে হাতেম আলীসহ চারজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এদিন সন্ধ্যার পর এসআই যোগেশ মন্ডল বাদী হয়ে স্কুল শিক্ষক হাতেম আলী, শ্যামকুড় ইউনিয়ন জামায়াতের আমির মাওলানা ইজাহার আলী, ছাত্র শিবিরের সাধারন সম্পাদক আবদুর রব, আবু দাউদ, আবদুল মালেক, হাবিবুর রহমান, চিনাটোলা বাজারের পল্লী চিকিৎসক মনিরুজ্জামান, মানবাধিকার কর্মী আজহারুল ইসলাম, কুয়াদা গ্রামের আসাদুর রহমানের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৫০/৬০ জনের নামে একটি নাশকতার মামলা করেন।

মামলার বাদী এসআই যোগেশ মন্ডল দাবী করেন, সুন্দলপুর বাজারে ঝটিকা মিছিলের স্থান থেকে পুলিশ তিনটি ককটেল, কয়েকটি জালের কাঠি, রড, লাঠি উদ্ধার করা হয়।
ওই রাতেই পুলিশ স্কুল শিক্ষক হাতেম আলী, শ্যামকুড় ইউনিয়ন ছাত্রশিবিরের সাধারন সম্পাদক আবদুর রব, চিনাটোলা বাজারের সেলুন কর্মচারী দুইভাই আবদুল মালেক ও আবু দাউদকে গ্রেফতার করে।

তবে স্কুল শিক্ষক হাতেম আলীকে গ্রেফতারের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে স্থানীয় ইউপি সদস্য উপজেলা শ্রমিক লীগের সদস্য রফিকুল ইসলাম বুলু বলেন, হাতেম আলী কখনও রাজনীতি না করলেও তার পরিবারের সব লোক আওয়ামী লীগের সমর্থক। তিনি আরো বলেন, জমি জমা নিয়ে হাতেম আলীর সাথে এলাকার এক প্রভাবশালীর বিবাদ রয়েছে। তার ধারনা ওই প্রভাবশালীরাই ষড়যন্ত্র করে হাতেম আলীকে ফাঁসিয়েছেন।


শ্যামকুড় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান বলেন, হাতেম আলী কোন দলের সাথে জড়িত নয়। তিনি শিক্ষকতার পাশাপাশি তাবলীগ করেন। ধলিগাতী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হাবিবুল্লাহ হাবিব বলেন, হাতেম আলী কোন রাজনীতি করেননা। তার সদ্য বিবাহীত একমাত্র মেয়ে সাফিকুন্নাহারের বিবাহত্তোর অনুষ্ঠানের দিন ধার্য্য রয়েছে ১০ মার্চ। অথচ একটি মিথ্যা মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হলো। এটা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায়না। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সুমন হোসেন গ্রেফতারকৃত নিরাপরাধ শিক্ষক হাতেম আলীর নি:শর্ত মুক্তি দাবী করেন। মণিরামপুর থানার ওসি (তদন্ত) গাজী মাহাবুবুর রহমান বলেন, সুন্দলপুরে জামায়াত-শিবিরের নাশকতায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। তবে তদন্ত শেষে স্কুল শিক্ষক হাতেম আলী নিরাপরাধ হলে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে।