কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি সচিবালয়ে বিক্ষোভরত কর্মচারীদের

সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে আজ বুধবারও সচিবালয়ে বিক্ষোভ করছেন কর্মচারীরা। সকাল সোয়া ১১টার পর তাঁরা সচিবালয়ের বাদামতলায় জড়ো হয়ে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে পুরো সচিবালয় প্রদক্ষিণ করেন।
এর আগে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে আলাদা আলাদা মিছিল নিয়ে কর্মচারীদের বিক্ষোভে যোগ দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছিলেন কর্মচারী নেতারা। তবে আজকের বিক্ষোভ সমাবেশে কর্মচারীদের উপস্থিতি অনেকটাই কম।
কর্মচারীরা ‘আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, সচিবালয় জেগেছে’, ‘মানি না মানব না, ফ্যাসিবাদী কালো আইন’, ‘মানি না মানব না, অবৈধ কালো আইন’, ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘এসো ভাই এসো বোন, গড়ে তুলি আন্দোলন’, ‘সারা বাংলার কর্মচারী, এক হও লড়াই করো’ স্লোগান দিচ্ছেন।
বিক্ষোভ শেষে ৬ নম্বর ভবনের লিফটের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যান মো. নূরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রত্যেকটা মানুষ সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ বাতিল চায়। ফলে কোনো সংশোধন, সংযোজন, পরিমার্জন আমরা মানব না। এখন পর্যন্ত আমরা সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ডাক পাইনি। যদিও পর্যালোচনা কমিটি গঠনের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে সুপারিশ দিতে।’
নূরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘কর্মচারীদের দাবি সংবলিত পোস্টার যারা ছিঁড়েছে সিসিটিভির মাধ্যমে তাদের শনাক্ত করে আমরা তাদের পরিচয় প্রকাশ করব। যার যার জায়গা থেকে পোস্টার ব্যানার লিফলেট তৈরি করে পুরো সচিবালয়ে সাঁটিয়ে দিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারকে চোরাবালিতে আটকে ফেলার জন্য ফ্যাসিস্ট সরকারের কিছু আমলারা এই আইন তৈরি করেছে, আমরা তাদের চিহ্নিত করেছি। যদি আজকে দিনের মধ্যে তাদের প্রত্যাহার করা না হয় তাহলে এমনও হতে পারে বিভাগীয় সম্মেলনের থেকেও কঠোর কর্মসূচি আমরা ঘোষণা করব। আমরা সরকারকে সহযোগিতা করতে চাই কিন্তু আমাদের বন্দী করে আপনারা শান্তিতে দেশ পরিচালনা করতে পারবেন এটা কি হতে পারে? আমরা হলাম বিল্ডিংয়ের ফাউন্ডেশন। যদি ফাউন্ডেশনটাই উপড়ে ফেলেন তাহলে আপনারা কীভাবে কাজ করবেন?’
আগামীকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ের চার নম্বর ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে ওই ভবনে গণসংযোগের কর্মসূচি ঘোষণা করে নূরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। আগামী রোববার আমরা কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করব।’
চার ধরনের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধের জন্য বিভাগীয় মামলা ছাড়াই শুধুমাত্র কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে সরকারি চাকরিজীবীদের চাকরিচ্যুত করার বিধান রেখে গত ২৫ মে সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। তার আগ থেকেই এই অধ্যাদেশের খসড়া বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে নামেন সচিবালয়ের কর্মচারীরা। চাকরি অধ্যাদেশ জারির পর তারা সচিবালয়ে নজিরবিহীন বিক্ষোভ-সমাবেশ এবং এক ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালনের পর উপদেষ্টাদের স্মারকলিপি দেন।
চাকরি অধ্যাদেশ নিয়ে কর্মচারী নেতাদের সঙ্গে আলোচনার পর ভূমি সচিবের নেতৃত্বে কয়েকজন সচিব কর্মচারীদের দাবির বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে জানান। এরপর মন্ত্রিপরিষদ সচিব তা প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেন। এই অধ্যাদেশ পর্যালোচনায় গত ৪ জুন আইন উপদেষ্টাকে প্রধান করে একটি কমিটি করে সরকার।