ঢাকা শনিবার, ২৭শে এপ্রিল ২০২৪, ১৫ই বৈশাখ ১৪৩১


আস্থাহীন প্রধান পুঁজিবাজারের দায়িত্ব নিতে চাচ্ছে না কেউ

এমডি ছাড়াই চলছে দেশের দুই প্রধান পুঁজিবাজার


২২ ডিসেম্বর ২০১৯ ১২:৪২

আপডেট:
২৭ এপ্রিল ২০২৪ ২০:৫১

দেশের প্রধান দুই পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) যোগ্য এমডি মিলছে না। ডিএসইতে দীর্ঘ ৫ মাস ধরে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদ শূন্য। দুই দফা বিজ্ঞপ্তি দিয়েও এমডি খুঁজে পাচ্ছে না ডিএসই। অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) দীর্ঘ ৬ মাস ধরে এমডি পদ শূন্য। বর্তমান শেয়ারবাজারের পরিস্থিতি ভালো না বলেই কেউ হাল ধরতে চান না বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম সময়ের আলোকে বলেন, শেয়ারবাজারের পরিস্থিতি ভালো না বলেই কেউ দায়িত্ব নিতে চান না। কেননা যে কেউ দায়িত্ব নিলে হয়তো বাজারের পুরো দায়ভার তার ওপরই বর্তাবে। এটা ভেবেই হয়তো কেউ দায়িত্ব নিতে চান না। যদিও বাজার পরিস্থিতির সঙ্গে এমডির খুব একটা সম্পর্ক নেই তারপরেও বাজার খারাপ হলে সাধারণ মানুষের এমডিকেই দোষ দেওয়ার প্রবণতা রয়েছে।

তিনি বলেন, প্রধান পুঁজিবাজারে এমডি পদটি দীর্ঘদিন খালি থাকা তো শুভকর পরিস্থিতি না। কাজেই এমডি না পেলে বিএসইসি বাধ্য হয়ে দায়িত্ব নিতেই পারে।

সূত্রে জানা যায়, দুই দফায় বিজ্ঞপ্তি দিয়েও এমডি না পাওয়ায় গত ১০ ডিসেম্বর তৃতীয় দফায় এমডির খোঁজে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে ডিএসই। এতে আগ্রহী প্রার্থীদের আগামী ২৪ ডিসেম্বরের মধ্যে জীবনবৃত্তান্তসহ আবেদন পাঠাতে বলা হয়েছে। তবে এ দফায় এমডি না পেলে এগিয়ে আসবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

কমিশন নিজে ডিএসইতে প্রশাসক (অ্যাডমিনিস্ট্রেটর) বসাবে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। দফায় দফায় বিজ্ঞপ্তি দিয়েও যোগ্য এমডি না পাওয়ার বিষয়টি ভালোভাবে নিতে পারছে না নিয়ন্ত্রক কমিশন। এতে ডিএসইর মতো প্রতিষ্ঠানকে এমডি ছাড়া চলতে হচ্ছে। তাই তৃতীয় দফায় এমডি পাওয়া না গেলে, কমিশন শেয়ারবাজারের স্বার্থে নিজেই প্রশাসক বসাবে।

সূত্রে আরও জানা যায়, অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জও (সিএসই) এমডি নেই ৬ মাসেরও বেশি সময় ধরে। এই শূন্যস্থান পূরণে এরই মধ্যে এগিয়ে এসেছে বিএসইসি। স্টক এক্সচেঞ্জটিতে চলতি বছরের ৩১ মে এম সাইফুর রহমান মজুমদারের এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালনের মেয়াদ শেষ হয়েছে।

এরপর থেকে সিএসইর এমডির পদটি শূন্য রয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সিএসইর পরিচালনা পর্ষদ এমডি নিয়োগ দিতে পারেনি। যাতে সিএসইতেও এমডির শূন্যস্থান পূরণের জন্য কাজ করছে বিএসইসি। এরই মধ্যে কমিশন সিএসইকে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত এমডি কী কী সুবিধা পাবে, তা জানতে চেয়ে একটি চিঠি ইস্যু করেছে।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ সময়ের আলোকে বলেন, শেয়ারবাজার নিয়ে সরকারের মাথা ব্যথা আছে বলে মনে হয় না। এটাকে স্বাভাবিকভাবেই নিতে হবে। যারা শেয়ারবাজার নিয়ে হাউকাউ করত তারাও এখন নিস্তেজ হয়ে গেছে। তবে স্টক মার্কেটে এমডি না থাকা আমাদের কাছে বড় ফ্যাক্টর নয়।

তিনি আরও বলেন, এত বেশি বেতনে গুরুত্বপূর্ণ এই পদে দায়িত্ব নিতে বহু লোকেরই আগ্রহ আছে। হয়তো যারা আবেদন করেছে তাদের কর্তৃপক্ষ উপযুক্ত বলে মনে করেনি। তবে দীর্ঘদিন ধরে এমডি পদ খালি থাকলে স্টক মার্কেটের প্রতি নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়। ১-২ মাসের বেশি হওয়া বিলম্ব উচিত ছিল না।

প্রসঙ্গত, ব্যবস্থাপনা থেকে মালিকানা পৃথকীকরণে ডি-মিউচুয়ালাইজেশন স্কিমের পর দ্বিতীয় ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে ২০১৬ সালের ২৯ জুন নিয়োগ পান কেএএম মাজেদুর রহমান। যার মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ১১ জুলাই। তারপর থেকেই পদটি খালি রয়েছে। ওই পদ পূরণে নতুন এমডির খোঁজে গত ৭ আগস্ট বিজ্ঞপ্তি দেয় ডিএসই কর্তৃপক্ষ। এতে আগ্রহী প্রার্থীদের ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আবেদন করতে বলা হয়েছিল। যেখানে ১৬ জন আবেদন করেছিলেন।

তবে ওই ১৬ জনের মধ্যে কাউকেই যোগ্য মনে করেনি ডিএসইর পর্ষদ এবং নমিনেশন অ্যান্ড রিমিউনারেশন কমিটি (এনআরসি)। এরপরে গত ৫ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় দফায় এমডির খোঁজে বিজ্ঞপ্তি দেয় ডিএসই। এ ক্ষেত্রে আবেদন করেছিলেন ৩ জন।

অর্থাৎ দুই দফায় ১৯ জন ডিএসইর এমডি পদে নিয়োগের জন্য আবেদন করেছিলেন। দুই দফায় আবেদনকারীদের মধ্য থেকে গত ২ অক্টোবর ৭ জন প্রার্থীকে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হয়।

পরবর্তী সময়ে ৭ জনের মধ্যে ৩ জনকে নিয়ে শর্ট লিস্ট করা হয়। যাদের গত ৬ অক্টোবর ডিএসইর পর্ষদ ডাকে। তবে ওই ৩ জনের মধ্যেও কাউকেই চ‚ড়ান্ত নিয়োগের জন্য যোগ্য মনে করেনি পর্ষদ। যাতে যোগ্য এমডির খোঁজে আবারও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ৬ অক্টোবরের পর্ষদ সভায়। যা গত ১০ ডিসেম্বর প্রকাশ করা হয়েছে।

অন্যদিকে ডিএসইর প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) আবদুল মতিন পাটোয়ারী বর্তমানে স্টক এক্সচেঞ্জটির ভারপ্রাপ্ত এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।