ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ১৪ই আগস্ট ২০২৫, ৩১শে শ্রাবণ ১৪৩২


নকলার নূরে আলম সিদ্দিক রুবেল পেলেন সফল আত্মকর্মীর জাতীয় পুরষ্কার


প্রকাশিত:
১৩ আগস্ট ২০২৫ ১৬:২২

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যুব দিবস-২০২৫ উপলক্ষে সফল আত্মকর্মী ক্যাটাগরিতে ১২ জন ও যুব সংগঠক ক্যাটাগরিতে চারজনসহ মোট ১৬ জনকে দেওয়া হয়েছে জাতীয় যুব পুরস্কার-২০২৫। মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বিজযয়ীদের মধ্যে পুরস্কার তুলেদেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সচিব মো. মাহবুব-উল-আলমের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়) ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় ও রেলপথ মন্ত্রণালয়) শেখ মইনউদ্দিন, যুব উন্নযয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. গাজী সাইফুজ্জামানসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও দেশের বিভিন্ন বিভাগ থেকে আগত ১২ জন সফল আত্মকর্মী ও ৪ জন যুব সংগঠকসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

সফল আত্মকর্মী ক্যাটাগরিতে ১২ জন পুরস্কার বিজয়ীদের মধ্যে শেরপুরের নকলা উপজেলার চরকৈয়া গ্রামের মরহুম মাওলানা মো. ফজলুল হক ও মোছা. নুরজাহান বেগম দম্পত্তির ছোট ছেলে মো. নূরে আলম সিদ্দিক (রুবেল) একজন। সে ময়মনসিংহ বিভাগীয় কোটায় সফল আত্মকর্মী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ময়মনসিংহ বিভাগের সফল আত্মকর্মী মো. নূরে আলম সিদ্দিক (রুবেল) এর হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট, সনদপত্র ও সফল আত্মকর্মীদের সফলতার গল্প দিয়ে প্রকাশিত স্মরণিকাসহ বিভিন্ন উপহার সামগ্রী তুলেদেন।

স্মরণিকাতে প্রকাশিত সফলতার গল্প থেকে জানা গেছে, মো. নূরে আলম সিদ্দিক (রুবেল) শেরপুর জেলাধীন নকলা উপজেলার, পৌরসভার আওতাভুক্ত চরকৈয়া নামক এলাকার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১২ অক্টোবর ১৯৮৪ ইং সালে জন্ম গ্রহণ করেন। নূরে আলম সিদ্দিক ২০০০ সালে দাখিল ও ২০০২ সালে এইচএসসি পাশ করেন। এইচএসসি পাশ করার পর পারিবারিক বিভিন্ন সমস্যাজনিত কারণে তিনি আর পড়শুনায় মনোনিবেশ করতে পারেননি। ফলে তার শিক্ষা জীবনের সমাপ্তি ঘটে। পড়াশুনা নেই, নেই কর্মও। এভাবেই বেকার অলস সময় কাটতে থাকে। বেকার অলস জীবনের হতাশা এক পরিবার ও সমাজের লোকজনের অনাদর অবহেলা, অসম্মান তাকে আহত করে। ফলে তিনি মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন। তিনি বুঝতে পারেন কর্মছাড়া সম্মান মিলবে না। কর্মই পারে বেকারত্বের জমানো বরফ গলাতে। এমতাবস্থায় এলাকার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আত্মকর্মী যুবদের কাছ থেকে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের কথা শুনে তিনি যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের নকলা উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে তিনি যুব উন্নয়ন কর্মকর্তার পরামর্শক্রমে তিনি একমাস ব্যাপী মাছ চাষ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এর পরেই পাশের বাড়ীর এক বড় ভাইকে দেখে শখ করে তার বাবার কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা মূলধন নিয়ে মাত্র ৩০০টি মুরগীর বাচ্চা দিয়ে পোল্ট্রি খামারের যাত্রা শুরু করেন। এর পরে তাকে আর পিছনে তাকাতে হয়নি। খামার শুরু পরের বছর ২০০১ সালের অক্টোবর মাসে বানিজ্যিক ভাবে মুরগী উৎপাদনের ওপর পশু সম্পদ অধিদপ্তরের আওতায় প্রশিক্ষণ গ্রহন করেন। ২০০২ সালে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণাললের যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে বানিজ্যিক ভাবে মুরগী পালন, ব্যবস্থাপনা দক্ষতা উন্নয়ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহন করেন। প্রশিক্ষন শেষে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে তার সৃজনশীল প্রতিভার সবটুকু কাজে লাগিয়ে মাছ চাষ শুরু করেন এবং মাছ চাষের পাশাপাশি পোল্ট্রি খামার করার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেন। পরবর্তীতে তিনি যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর হতে হাঁস-মুরগী পালন বিষয়ক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। পরে তিনি নূর এগ্রো ফার্ম একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। বর্তমানে নূর এগ্রো ফার্মে পোল্ট্রি, ডেইরী, হ্যাচারী, মাছ ও ফলজ বাগান রয়েছে। প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান কাজে লাগিয়ে আশানুরূপ ফল প্রাপ্তিতে মাছ ও পোল্ট্রি খামার কার্যক্রমে অধিক উৎসাহি হয়ে তিনি পোল্ট্রি ্র ও ফিস ফিডের ব্যবসাতে আত্মনিয়োগ করেন। তিনি বর্তমানে নারিশ পোল্ট্রি এন্ড ফিস ফিডের ডিলারশীপ নিয়ে ব্যবসায় সফলতা লাভ করেন। বর্তমানে তাঁর মূলধনের পরিমাণ ১ কোটি ২৬ লক্ষ ৬৬ হাজার টাকা। তার বার্ষিক নিট আয় ২৩ লক্ষ ১৮ হাজার টাকা বলে জাান গেছে। সফল আত্মকর্মী মো. নূরে আলম সিদ্দিকের নূর এগ্রো ফার্ম-এ বর্তমানে ১৬ জনের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। তাঁর পরামর্শে স্থানীয়ভাবে কমপক্ষে ৫ জন আত্মকর্মী হয়েছেন। কর্মসংস্থান সৃজন ও আত্মকর্মসংস্থানে অবদান রাখার পাশাপাশি তিনি সামাজিক নানা কর্মকান্ডের সাথে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। তিনি স্বাস্থ্যসেবা, বৃক্ষরোপন, গরিব ও অসহায়দের অর্থ সহায়তা, ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণ, জাতীয় দিবস পালনসহ বিভিন্ন সামাজিক ও জনসচেতনতামূলক কাজ করছেন। কর্মসংস্থান সৃজন ও আত্মকর্মসংস্থানে গৌরবোজ্জ্বল অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সফল আত্মকর্মী নূরে আলম সিদ্দিক (রুবেল)-কে জাতীয় যুব পুরস্কার-২০২৫ প্রদান করা হয়।

এবিষয়ে মো. নূরে আলম সিদ্দিক (রুবেল) আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে বলেন, ‘লেখাপড়া করলেই যে চাকরি করতে হবে, এই ধারনাটি সঠিক নয়। দেশের প্রতিটি বেকার যুবক ও যুবনারী চাইলে অল্প পুঁজি খাঁটিয়ে ও কায়িক শ্রমকে কাজে লাগিয়ে স্বাবলম্বী হতে পারেন।’ তিনি আরো বলেন ‘পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি এটা চিরন্তন সত্য। স্বাবলম্বী হতে পরিশ্রমের কোন বিকল্প নেই বলে তিনি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি বলেই আমি আজ সফলতার মুখ দেখেছি।’