ঢাকা শনিবার, ১৬ই আগস্ট ২০২৫, ১লা ভাদ্র ১৪৩২


তেজগাঁও কলেজছাত্রের মৃত্যু নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা


প্রকাশিত:
২৭ জুলাই ২০২৫ ১১:৫৬

নাফিউজ্জামান কৌশিক (১৯)

নাফিউজ্জামান কৌশিক (১৯), রাজধানীর তেজগাঁও কলেজের চলমান এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। গত ১০ জুলাই রাজধানীর তেজগাঁও থানার মনিপুরীপাড়ার ১ নম্বর গলির ইউসুফ আলীর বাড়ির চতুর্থ তলার একটি ফ্ল্যাটের সাবলেট বাসা থেকে ফ্যানের সঙ্গে গামছা দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তার পরিবারের দাবি, এটি হত্যাকাণ্ড। তবে হত্যা মামলা করতে চাইলেও পুলিশ অপমৃত্যুর মামলা নিয়েছে।

পুলিশ বলছে, প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যা বলে মনে হলেও পুলিশের তদন্ত ও ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এভাবেই দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও রহস্যের জট খুলছে না এই মৃত্যুর।

নিহতের বাবা কামরুজ্জামান দাবি করে বলেন, যে বাসায় সাবলেট থাকত কৌশিক, সে বাসার ফাতেমা (৩০) নামের এক নারী ও তার ছোট বোনসহ আরও দুজন এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। কারণ ফাতেমার স্বামী প্রবাসী। তার বাসায় অনেকের যাতায়াত ছিল। সে এসবের গোপন কোনো কিছু দেখে ফেলায় এবং তার স্বামীকে বলে দিতে পারে—এই সন্দেহ-ভয়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন।

এদিকে ফাতেমাকে পুলিশ নজরদারিতে রেখেছে বলে জানা গেছে। যদি ময়নাতদন্তে হত্যার আলামত পাওয়া যায়, তাহলে প্রাথমিকভাবে সন্দেহভাজনদের আইনের আওতায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

মরদেহ উদ্ধারের পর তেজগাঁও থানার এসআই মাহমুদুল হাসান সুরতহাল প্রতিবেদন শেষে লাশ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠান।

কৌশিক কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার পিরিজপুর ইউনিয়নের ভালুকবেড় গ্রামের ইলেকট্রনিকস ব্যবসায়ী মো. কামরুজ্জামান ও নাদিরা বেগম দম্পতির বড় সন্তান। কামরুজ্জামান বলেন, আমাদের দুটি ছেলে। কৌশিক অনেক মেধাবী ছিল। তাকে অনেক স্বপ্ন নিয়ে পড়াচ্ছিলাম। সে আত্মহত্যা করার মতো ছেলে না এবং আত্মহত্যা করার মতো কোনো কারণও নেই। সে এবারের এইচএসসি পাঁচটা পরীক্ষা দিয়েছিল। এর মধ্যে আমার সন্তানের সঙ্গে কী হয়েছে? কিভাবে তাকে মেরেছে আমি জানতে চাই এবং হত্যাকারীদের বিচার চাই।

তিনি আরও বলেন, রুমের দরজা খোলা ছিল। আমার ছেলেকে মেরে লাশটি ঝুলিয়ে রেখেছে হত্যাকারীরা। ঝুলন্ত অবস্থায় ছেলের পা বিছানায় ভাঁজ করা ছিল, মুৃখ দিয়ে কোনো লালা কিংবা জিহবা বের হয়নি। কয়েকজন ডাক্তার এ ছবি দেখে বলেছেন, এটা কোনোভাবেই আত্মহত্যা না। আমার জোর দাবি, ফরেনসিক থেকে ময়নাতদন্তের সঠিক প্রতিবেদনটি আসুক এবং খুনিদের শাস্তির আওতায় আনুক পুলিশ।

বাড়ির মালিক ইউসুফ জানান, ঘটনা প্রকৃতপক্ষে কী ঘটেছে তার জানা নেই। যাদের সঙ্গে থাকত তাদের সঙ্গে মনোমালিন্য ছিল নাকি অন্য কিছু, তা পুলিশ বের করবে আশা করি। তবে তারা প্রথমে বলেছিল ফাতেমা নিহত শিক্ষার্থীর আত্মীয়। পরে জানলাম আত্মীয় না।শিক্ষার্থীদের অনলাইন টিউশন

এদিকে বাড়ির মালিককে সঙ্গে নিয়ে ফাতেমার সঙ্গে আলাপ করতে গেলে বাসার ঘটনাস্থলে ঢুকতে দেননি। দরজার সামনে আলাপকালে ফাতেমা বলেন, ঘটনার সময় বলেছি কী হয়েছিল, এত দিন পরে আবার কেন? তাদের (নিহততের পরিবার) কাছ থেকে জানেন কী হয়েছে? এ ছাড়া পুলিশ দেখছে মৃত্যুর বিষয়টি, তারা তো বলেছে আত্মহত্যা।

মৃত্যুর আগে কোনো বিশেষ বিষয়ে কৌশিকের সঙ্গে আলাপ হয়েছে কি না জানতে চাইলে ফাতেমা বলেন, তার তো পরীক্ষা চলছিল। হঠাৎ একদিন সে বলল আপু ডিপ্রেশন কী, তখন আমি বললাম জানি না, এতটুকুই...

মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, সার্বিক দিক মাথায় রেখে তদন্ত চলমান রয়েছে। একটি ভালো তদন্ত করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তবে প্রকৃত ঘটনা উন্মোচনে পুলিশ কাজ করছে।

এ বিষয়ে তেজগাঁও থানার ওসি মোবারক হোসেন বলেন, এ বিষয়টি আমাদের কাছে প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যা মনে হয়েছে। তার পরও যেহেতু মৃতের বাবা দাবি করছেন অন্য কিছু, আমরা সেভাবে অতি গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি তদন্ত করছি। যাদের কথা বলা হচ্ছে তাদেরও আটকে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। এ ছাড়া ময়নাতদন্তে প্রতিবেদন এলে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। যদি হত্যার আলামত থাকে অবশ্যই আমরা আসামি ও ঘটনাস্থল চিনি। তাদের গ্রেফতার করব, আইনের আওতায় নিয়ে আদালতে সোপর্দ করব।