স্বাগত ২০১৯…
পুরনো বছরের সকল জরা-জীর্ণতাকে পেছনে ফেলে পশ্চিম আকাশে মিলে গেল বছরের শেষ সূর্য। এরই সঙ্গে শুরু হলো নতুনের আবাহন। কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের সন্ধ্যা থেকেই শুরু হয়েছে বিশ্বজুড়ে নতুন বছরকে বরণের আয়োজন। নগরীর পাড়া-মহল্লায় এখন হৈ-হুল্লোড়, উৎসবের আলোক রঙ। চলছে থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন।
বছরের শেষ দিনগুলো নির্বাচনী উত্তাপে পার করেছে বাংলাদেশ। থার্টি ফার্স্ট নাইটের আগ মুহূর্তে ৩০ ডিসেম্বর হয়ে গেল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই ভোটে জয়ী হয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ।
আর এর মধ্য দিয়েই নতুন ভিশনে টানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। যা দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়ও বটে।
এদিকে এবারের ‘থার্টি ফার্স্ট নাইট’ উদযাপনে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও বাড়তি আনন্দে ভাসবে গোটা দেশ। ইংরেজি নতুন বছর হওয়ায় তুলনামূলক নগরেই আনন্দের রেশটা বেশি।
ঘড়ির কাঁটায় রাত ১১টা ৫৯ মিনিটের আগেই নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে মেতেছে গোটা বিশ্ব। বাংলাদেশের তরুণ-যুবকেরা মেতেছে উৎসবে। থার্টি ফার্স্ট উদযাপনে কড়াকড়ি থাকলেও বাধা মানতে নারাজ নগরবাসী।
সন্ধ্যার পর থেকে থেমে থেমে পটকা-আতশবাজি কুয়াশাচ্ছন্ন ঢাকার আকাশকে করে তুলেছে মোহনীয়। আর তার আগেই ভার্চুয়াল জগৎ ছাড়াও কার্ড, মোবাইলে এসএমএসে শুভেচ্ছা বিনিময়ে প্রিয়জনদের কাছে নতুন বছরের বার্তা পাঠাচ্ছেন সবাই।
নানা ঘটনায় ২০১৮ সাল পার হলেও সামনের বছর সামাজিক-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বছরের শুরুর দিনটি শিক্ষার্থীদের কাছে মহা আনন্দের। এ দিনটিতে নতুন বই হাতে পাবে শিক্ষার্থীরা। নতুন বইয়ের গন্ধটাই যেন নতুনের আনন্দ বার্তা দেবে তাদের।
সাফল্য হিসেবে ২০১৮-তে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে পৃথিবীর ৫৭তম দেশের স্থান করে নেয় বাংলাদেশ। এ বছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
রাজনৈতিক অঙ্গনে পুরনো বছর ছিল নানা কারণে আলোচিত। দুর্নীতির মামলায় বিরোধী জোটের নেতা খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানো ছিল বড় ঘটনা। নির্বাচনে সব দলের অংশ নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংলাপ আয়োজন ছিল বছরের আলোচিত ঘটনা।
ইংরেজি নতুন বছর উপলক্ষে পৃথক বাণীতে দেশবাসীসহ প্রবাসী বাঙালিসহ বিশ্ববাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নতুন বছর উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি এক বাণীতে বলেন, খ্রিস্টিয় নববর্ষ ২০১৯ উপলক্ষে আমি দেশবাসীসহ সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
‘অতীতকে পেছনে ফেলে সময়ের চিরায়ত আবর্তনে খ্রিস্টিয় নববর্ষ আমাদের মাঝে সমাগত। নতুনকে বরণ করা মানুষের স্বভাবজাত প্রবৃত্তি। তাই তো নববর্ষকে বরণ করতে বিশ্বব্যাপী বর্ণাঢ্য নানা আয়োজন। খ্রিস্টিয় নববর্ষকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত গোটাদেশ। বাংলা নববর্ষ আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকলেও ব্যবহারিক জীবনে খ্রিস্টিয় বর্ষপঞ্জিকা বহুল ব্যবহৃত। খ্রিস্টিয় বর্ষপঞ্জি তাই জাতীয় জীবনে প্রাত্যাহিক জীবনযাত্রায় অবিচ্ছেদ্যভাবে মিশে আছে।’
তিনি বলেন, ‘নববর্ষ সবার মাঝে জাগায় প্রাণের নতুন স্পন্দন, নতুন আশা ও নতুন সম্ভাবনা। বিগত বছরের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা পেছনে ফেলে নতুন বছরে অমিত সম্ভাবনার পথে এগিয়ে যাক বাংলাদেশ খ্রিস্টিয় নববর্ষে এ প্রত্যাশা করি। খ্রিস্টিয় নববর্ষ ২০১৯ সবার জীবনে অনাবিল আনন্দ ও কল্যাণ বয়ে আনুক - এই কামনা করি।’
বাণীতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইংরেজি নতুন বছর ২০১৯ উপলক্ষে আমি দেশবাসী, প্রবাসী বাঙালিসহ বিশ্ববাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন, সংবিধান ও গণতান্ত্রিক ধারা রক্ষা জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জ্বীবিত করার ক্ষেত্রে ২০১৮ সাল জাতির ইতিহাসে একটি গৌরবোজ্জ্বল বছর। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গত বছর ছিল বাংলাদেশের জন্য সাফল্যময় বছর।
প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের এই উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন শেখ হাসিনা।