ঢাকা সোমবার, ৫ই মে ২০২৫, ২২শে বৈশাখ ১৪৩২


নেছারাবাদে হেল্থ কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ভুল রিপোর্টে পা হারালো স্কুলছাত্র


১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১১:৪৮

আপডেট:
৫ মে ২০২৫ ০২:২০

পিরোজপুরের নেছারাবাদে টেকনোলজিস্টের ভুল রিপোর্টে পা হারালো মোঃ জিহাদুল ইসলাম (১৪) নামের এক স্কুল ছাত্র। জিহাদুল ইসলাম পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলার সোহাগদল ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের মো: আমিনুল ইসলাম মিলনের ছেলে। সে উপজেলার কলেজিয়েট একাডেমীতে নবম শ্রেণীর ছাত্র।

জানা যায়, জিহাদুল ইসলাম গত (৮ জানুয়ারি) মোটরসাইকেল থেকে পড়ে গিয়ে ডান পায়ে চোট পায়। তাৎক্ষণিক সেই চোটের ব্যাথা নিয়ে নেছারাবাদ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে জরুরী বিভাগে আসে। কর্তব্যরত চিকিৎসক পা দেখে পায়ের গোড়ালি এক্সরে করার জন্য ছেলেটিকে পাঠান হাসপাতাল সংলগ্ন 'হেল্থ কেয়ার' নামক একটি বেসরকারি ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে। সেখানকার টেকনিশিয়ান ওই ডাক্তারের দেয়া পরীক্ষার কাগজ না দেখেই রোগীর কথামতো এক্সরে করেন পায়ের হাটুতে। ডাক্তার সেই এক্সরে রিপোর্ট দেখে ছেলেটির পুরো পা ব্যান্ডেজ করে ছেড়ে দেন। ডায়াগনস্টিকের সেই ভুল রিপোর্টে আট দিনের মাথায় ওই ছেলেটির পায়ে পঁচন ধরে। এ কারনে ছেলেটির পুরো পা কেঁটে ফেলতে হয়।

জিহাদুলের স্কুল সহপাঠিরা খবর শুনে উত্তেজিত হয়ে বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুরে ভুল রিপোর্ট প্রদান করা সেই হেল্থ কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার ঘেরাও করে। খবর পেয়ে নেছারাবাদ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও প:প: কর্মকর্তা ডা: আসাদুজ্জামান ডায়াগনষ্টিক সেন্টারটি সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন।

জিহাদুল ইসলামের পিতা আমিনুল ইসলাম মিলন অভিযোগ করেন, ছেলেটি বিশ দিন পূর্বে মটরসাইকেল থেকে পড়ে গিয়ে ডান পায়ে একটু ব্যাথা পেয়েছিল। নেছারাবাদ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই। ডাক্তার ছেলের ডান পায়ের গোড়ালি পরীক্ষা করার জন্য প্রেসক্রিপশনে লিখে দেন। পরে পরীক্ষার জন্য হাসপাতাল সংলগ্ন 'হেল্থ কেয়ার' ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে নিয়ে গেলে সেখানকার টেকনিশিয়ান পায়ের গোড়ালি এক্সরে না করে পায়ের হাটু এক্সরে করে। ডাক্তার সেই এক্সরে রিপোর্ট দেখে হাটু বেন্ডেজ করেন। এতে কয়েকদিনে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে মাথায় ও পায়ে ব্যাথা শুরু হয়। অবস্থা খারাপ দেখে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার ডাক্তাররা পরীক্ষা করে দেখেন ছেলের পায়ের গোড়ালির রগ ছিড়ে গিয়েছিল। ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের ভুল রিপোর্টে ভুল চিকিৎসায় ছেলের পা পঁচে গেছে। পরে সেখানকার ডাক্তাররা ছেলের পা কেঁটে ফেলেছে।

স্বরূপকাঠি কলেজিয়েট একাডেমির শরীরচর্চা বিষয়ক শিক্ষিকা আসমা বেগম জানান, জিহাদুল ইসলাম একজন মেধাবী শিক্ষার্থী। স্কাউটের একজন সদস্য এবং স্কাউটের টিম লিডার। ভুল চিকিৎসায় তার ডান পা কেঁটে ফেলায় আমরা স্কুলের সকল শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকেরা খুব মর্মাহত হয়েছি।

"হেলথ কেয়ার" ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের পরিচালক মো: মাসুদ রানা বলেন, ওই ছেলের কথামতো আমরা এক্সরে করে দিয়েছি। তবে ডাক্তারের দেয়া প্রেসক্রিপশন দেখে এক্সরে করে দিলে হয়তোবা এই ধরনের মারাত্মক সমস্যা হতোনা। আসলে টেকনিশিয়ানের এটা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল।

ঘটনার দিন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেছারাবাদ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সহকারি সার্জন ডা. সুমন হালদার মুঠোফোনে জানান, পায়ের গোড়ালিতে এক্সরে করার জন্য প্রেসক্রিপশনে উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও রোগীর কথামতো টেকনিশিয়ান হাঁটুতে এক্সরে করে দেয়। সেখানে সামান্য ফ্যাক্চার দেখা দেয়ায় সমস্ত পায়ে ব্যান্ডেজ করে দেয়া হয়েছিল।

নেছারাবাদ হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও প:প: কর্মকর্তা ডা: আসাদুজ্জামান জানান, আমি ভুক্তভোগীদের মৌখিক অভিযোগে ডায়াগনষ্টিক সেন্টারটি সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে নির্দেশ দিয়েছি। তদন্তে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সত্যতার প্রমাণ পেলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।