ধারণ করা হয়েছে জুলাই বিল্পবের থিম
শুরু হয়েছে অমর একুশে বইমেলা

বাংলা ভাষা ও সাহিত্যপ্রেমীদের সর্ববৃহৎ মিলনমেলা অমর একুশে বইমেলা-২০২৫ শুরু হয়েছে। এবারের বইমেলা উদ্বোধন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান: নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ’—এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে মাসব্যাপী বইমেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৪টায়, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে।
উদ্বোধনী আয়োজন: জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম। এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী। প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, "বইমেলা শুধু বই কেনাবেচার জায়গা নয়, এটি চিন্তার মুক্ত ক্ষেত্র। এবার মেলার প্রতিপাদ্যই প্রমাণ করে, আমরা নতুন বাংলাদেশের পথে হাঁটছি।"
তিনি আরও বলেন, "জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের চেতনায় বাংলাদেশ নতুনভাবে গড়ে উঠবে, বইমেলা সেই পরিবর্তনের সাক্ষী হয়ে থাকবে।"
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪ বিজয়ীদের হাতে সম্মাননা তুলে দেন। এরপর তিনি মেলার বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন।
বইমেলার পরিসর ও আয়োজন:
এবারের বইমেলায় অংশ নিয়েছে ৭০৮টি প্রকাশনা সংস্থা। এর মধ্যে—
বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে: ৯৯টি স্টল
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে: ৬০৯টি স্টল
মোট প্যাভিলিয়ন: ৩৭টি (বাংলা একাডেমিতে ১টি, উদ্যানে ৩৬টি)
লিটল ম্যাগাজিন কর্নার: সোহরাওয়ার্দী
উদ্যানে গাছের নিচে স্থাপিত ১৩০টি স্টল
এবারের মেলায় বই খোলা ও লেখক বলছি নামে দুটি আলাদা মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে, যেখানে লেখক-পাঠকদের সরাসরি মতবিনিময়ের সুযোগ থাকবে।
নিরাপত্তা ও অন্যান্য ব্যবস্থা:
মেলায় দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে নেওয়া হয়েছে কড়া ব্যবস্থা।৩০০টির বেশি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন৷ চারটি প্রবেশ ও বাহির পথ: টিএসসি, দোয়েল চত্বর, এমআরটি বেসিং প্ল্যান্ট ও ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন সংলগ্ন এলাকায়৩ ০টি শৌচাগার স্থাপন। আর্চওয়ে ও স্ক্যানিং সিস্টেম চালু, নিরাপত্তার দায়িত্বে পুলিশ, র্যাব, আনসার ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা।
মেলায় আগতদের সুবিধার জন্য খাবার স্টল এবং বিশ্রামের জায়গা রাখা হয়েছে।
বিশেষ আকর্ষণ: ‘জুলাই চত্বর’
এবারের বইমেলার অন্যতম আকর্ষণ ‘জুলাই চত্বর’, যেখানে গণ-অভ্যুত্থানের চিত্র বিভিন্ন মাধ্যমে তুলে ধরা হবে। এখানে থাকবে ছবি, গ্রাফিক্স ও তথ্যচিত্র, যা জুলাই আন্দোলনের ইতিহাস ও ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা তুলে ধরবে।
মেলার সময়সূচি ও শিশু প্রহর
প্রতিদিন: বিকাল ৩টা - রাত ৯টা
সরকারি ছুটির দিন: সকাল ১১টা - রাত ৯টা
শুক্র ও শনিবার: বিশেষ ‘শিশু প্রহর’ (বেলা ১১টা - দুপুর ১টা)
২১ ফেব্রুয়ারি: সকাল ৮টা - রাত ৯টা
পরিশেষে, গত বছরের রাজনৈতিক উত্তাল সময়ের পর এবার বইমেলার আবহ একেবারেই ভিন্ন। পাঠক, লেখক ও প্রকাশকরা মনে করছেন, বইমেলা শুধু সাহিত্যচর্চার কেন্দ্র নয়, এটি নতুন বাংলাদেশের পথনির্দেশকও বটে। ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান’-এর আলোকে বাংলাদেশের নতুন যাত্রাকে উৎসাহিত করতে বইমেলা বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে মত বিশ্লেষকদের।
বইমেলা ২০২৫, অমর একুশে বইমেলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, বাতিঘর, অন্যপ্রকাশ, হুমায়ুন আহমেদ, বাংলা একাডেমি