ঢাকা সোমবার, ৫ই মে ২০২৫, ২৩শে বৈশাখ ১৪৩২


রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে একদল জুনিয়রকে ৫ ঘণ্টা ধরে র‌্যাগিং


৫ মে ২০২৫ ১৭:১৮

আপডেট:
৫ মে ২০২৫ ২১:০৮

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থা বিভাগের সিনিয়র শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে একই বিভাগের জুনিয়র একদল শিক্ষার্থীকে পাঁচ ঘণ্টা ধরে র‍্যাগ দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় তাদের চটি কবিতা পাঠ করাতে বাধ্য করা ও অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করার জন্য জোরাজুরি করা হয়েছে বলে জানা যায়।

গত শনিবার (৩ এপ্রিল) সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাডেমিক ভবনের ছাদে এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানা যায়। এতে মানসিক চাপ, লজ্জা ও নিরাপত্তাহীনতার কথা তুলে ধরে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণে রবিবার (৪ মে) দুপুরে প্রক্টর বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীদের মধ্যে দুই শিক্ষার্থী।

অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা হলেন হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থা বিভাগের ২০২২-২৩ সেশনের মুকমিনুল ইসলাম চৌধুরী, গোলাম রাব্বী, মাহাবুব হোসেন, মেহেদী হাসান মিঠু, শাহ পরান ও শাহাদাত হোসেন। এ সময় তাদের ব্যাচের আরও ২০-২৫ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন বলে জানা যায়।

অন্যদিকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা হলেন একই বিভাগের ২০২৩-২৪ সেশনের আবদুল্লাহ শেখ ও মেজবাহ দেওয়ান এবং তাদের কয়েকজন সহপাঠী। লিখিত অভিযোগে শুধু তাদের দুজনের নাম থাকলেও ব্যাচের অন্য কারোর নাম নেই, এমন প্রশ্নে তারা দুজন জানান, ‘অন্যরা ভয়ে প্রক্টর স্যারের কাছে অভিযোগ দিতে আসেনি। এ ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে এবং ঘটনার বিচার চেয়ে তারাই শুধু সাহস করে এসেছেন।’

লিখিত অভিযোগপত্রে তারা উল্লেখ করেন, ‘গত শনিবার সন্ধ্যায় আমাদের বিভাগের সিনিয়র কয়েকজন ভাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাডেমিক ভবনের ছাদে আমাদের কয়েকজন বন্ধুকে ডেকে নিয়ে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীর সামনে দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টা ধরে মানসিকভাবে নির্যাতন করে। এ সময় তারা আমাদের বিভিন্ন কুরুচিপূর্ণ শব্দ ব্যবহার করে গালিগালাজ করে। এরপর আমাদের দিয়ে বিভিন্ন অশালীন অঙ্গভঙ্গি করতে বাধ্য করে। সেই সঙ্গে আমাদের দিয়ে চটি কবিতা আবৃত্তি করার জন্য বাধ্য করে। এতে আমরা অনাগ্রহ প্রকাশ করলে আমাদের মা–বাবার নাম নিয়ে গালিগালাজ করে, যা একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে আমাদের জন্য চরম অবমাননাকর।’

মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করেছে জানিয়ে তারা উল্লেখ করেছেন, ‘সিনিয়র ভাইয়েরা আমাদের মোবাইল ফোন জমা রেখে এসব কর্মকাণ্ড করেছে, যাতে কেউ কোনো প্রমাণ রাখতে না পারে। তারা এ-ও বলেছে, এগুলো নিয়ে অভিযোগ দিয়ে কেউ কিছু করতে পারবে না। গতকালের বিষয়টি আমাদের মানসিকভাবে ভেঙে দিয়েছে। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে গতকালের ঘটনাটি আমাদের জন্য চরম লজ্জাজনক ও ভীতিকর অভিজ্ঞতা।’ অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের শাস্তির দাবি জানান তারা।

ঘটনার বিষয়ে অভিযুক্ত ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের গোলাম রাব্বী বলেন, ‘র‍্যাগিংয়ের মতো কোনো ধরনের ঘটনা ঘটেনি। একটি টুর্নামেন্টে আমাদের বিভাগ জয়ী হয়, সে উপলক্ষে জুনিয়রদের সঙ্গে আমাদের খাওয়া-দাওয়ার একটি আয়োজন ছিল। আপনি ওদের (ভুক্তভোগীদের) ব্যাচের অন্য কারও থেকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন, আমাদের তরফ থেকে এ ধরনের কিছু হয়নি।’

আরেক অভিযুক্ত মাহাবুব হোসেন বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো এসেছে, সেগুলোর কোনোটিই সত্য নয়। গতকাল (রবিবার) একটি খাবারের আয়োজন ছিল। এর বেশি কিছুই হয়নি। আমাদের কাছে খাবারের ভিডিও, নিজেদের একসাথে তোলা ছবি সবই আছে। অভিযোগগুলো সবই মিথ্যা।’

অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত মেহেদী হাসান মিঠুও একই সুরে কথা বলে অভিযোগটি অস্বীকার করেন। আরেক অভিযুক্ত মুকমিনুল ইসলাম চৌধুরীর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায় ও শাহাদাত হোসেন ফোন রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মাহবুবর রহমান বলেন, র‍্যাগিংয়ের অভিযোগ তুলে দুজন শিক্ষার্থী অভিযোগ জমা দিয়েছে। প্রাথমিকভাবে তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। এ ছাড়া ওই ব্যাচের ক্লাস ক্যাপ্টেনের সঙ্গে কথা হয়েছে। তবে সে বিষয়টি অস্বীকার করেছে।

তিনি আরও বলেন, বিষয়টি নিয়ে অন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে মূল ঘটনা জানার চেষ্টা করা হবে। যদি র‍্যাগিংয়ের কোনো ঘটনা ঘটে থাকে, সে যে-ই হোক না কেন, সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।