মার্কিন আক্রমণ ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ‘ধ্বংস করতে ব্যর্থ হয়েছে’

মার্কিন বিমান হামলায় ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা ধ্বংস হয়নি, শুধু কয়েক মাস পিছিয়ে দিয়েছে; যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রাথমিক গোয়েন্দা প্রতিবেদনের মূল্যায়নে এমনটি বলা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে নড়বড়ে একটি অস্ত্রবিরতি শুরু হওয়ার পর এমন তথ্য সামনে আসছে।
ট্রাম্পের ঘোষিত একটি অস্ত্রবিরতি লঙ্ঘন করার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রকাশ্যে ইরান ও ইসরায়েলকে তিরস্কার করার পর মঙ্গলবার উভয় দেশ ইঙ্গিত দিয়েছে যে তাদের আকাশযুদ্ধ অন্তত এখনকার মতো হলেও শেষ হয়েছে।
রয়টার্স জানিয়েছে, ১২ দিন ধরে টানা যুদ্ধ চলার পর দুই দেশ তাদের বেসামরিকদের ওপর জারি করা বিধিনিষেধ তুলে নিয়েছে।
এই যুদ্ধে ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রও যোগ দেয়। মার্কিন বাহিনী ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনাগুলোতে বোমাবর্ষণ করে সেগুলো ধ্বংস করে দেওয়ার চেষ্টা করে।
রোববার ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র ১৩৬০০ কেজির কয়েকটি বোমা ফেলে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচীকে ‘বিলুপ্ত’ করে দিয়েছে।
কিন্তু তার এই দাবি তার প্রশাসনের একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রাথমিক মূল্যায়নের সঙ্গে যাচ্ছে না বলে মনে হচ্ছে, বিষয়টি সম্পর্কে জ্ঞাত তিন ব্যক্তি রয়টার্সকে এমনটি জানিয়েছেন।
তাদের মধ্যে একজন বলেছেন, ইরানের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুদ এবং দেশটির ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক কর্মসূচী ধ্বংস হয়নি। মার্কিন হামলায় এই কর্মসূচী সম্ভবত এক থেকে দুই মাসের মতো পিছিয়ে গেছে। ইরান দাবি করে আসছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচী পুরোপুরি বেসামরিক উদ্দেশ্যে নিয়োজিত।
তিনি জানান, মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের আক্রমণে দুটি পারমাণবিক স্থাপনার প্রবেশ পথ বন্ধ হয়ে গেছে কিন্তু ভূগর্ভস্থ ভবনগুলো ধ্বংস হয়নি।
হামলার পর এখনও কিছু সেন্ট্রিফিউজ অক্ষত অবস্থায় রয়ে গেছে বলে গোয়েন্দা প্রতিবেদনটির বিষয়ে জ্ঞাত এক অনামা ব্যক্তির বরাত দিয়ে জানিয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট।
হোয়াইট হাউজ এই গোয়েন্দা প্রতিবেদনকে ‘সম্পূর্ণ ভুল’ আখ্যায়িত করেছে। মঙ্গলবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছে, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে তাদের হামলা তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচীর ‘পতন’ ঘটিয়েছে। ট্রাম্প ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ‘বিলুপ্ত’ হয়ে গেছে বলে দাবি করলেও তার প্রশাসন তেমন কিছু বলেনি।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মঙ্গলবার বলেছেন, ইরানে হামলা পারমাণবিক বিনাশের হুমকি অপসারণ করেছে আর তেহরানের অস্ত্র কর্মসূচী পুনরুজ্জীবিত করার যেকোনো প্রচেষ্টা ব্যর্থ করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিল।
নেতানিয়াহু বলেন, “আমরা আমাদের অস্তিত্বের প্রতি আসন্ন দুই হুমকি অপসারণ করতে পেরেছি: পারমাণবিক বিনাশের হুমকি এবং ২০ হাজার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ধ্বংস হওয়ার হুমকি।”
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, তার দেশ সাফল্যজনকভাবে যুদ্ধ শেষ করেছে; যাকে তিনি ‘বিশাল বিজয়’ বলে অভিহিত করেছেন।
ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা আইআরএনএ জানিয়েছে, পেজেশকিয়ান সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে বলেছেন যে তেহরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিদ্যমান মতবিরোধ মিটিয়ে ফেলতে প্রস্তুত আছে।
১৩ জুন ভোরে সবাইকে বিস্মিত করে ইরান ব্যাপক বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। তারা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালায় এবং দেশটির শীর্ষ সামরিক কমান্ডার ও পরমাণু বিজ্ঞানীদের হত্যা করে। এই হামলা ছিল ১৯৮০ দশকে ইরাকের সঙ্গে হওয়া যুদ্ধের পর থেকে ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরানের জন্য সবচেয়ে বড় ধাক্কা।
ইরানও ইসরায়েলের সামরিক স্থাপনা ও শহরগুলোতে শত শত ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে পাল্টা জবাব দেয়।