কুয়াকাটায় হোটেল মালিককে মেরে ফেলার হুমকি চাঁদাবাজদের
পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় অবস্থিত রোজ ভ্যালি রিসোর্টের মালিক এম এ খায়ের মোল্লাকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে চাঁদাবাজরা। থানাতে অভিযোগ দায়ের করলেও হুমকিদাতাদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ, এমনই অভিযোগ ভুক্তভোগী এম এ খায়ের মোল্লার।
আজ ৯ অক্টোবর বেলা ১২টায় সেগুনবাগিচার ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন দাবি করেন।
ভুক্তভোগী অভিযোগে জানান, তিনি কুয়াকাটার রোজ ভ্যালী মোটেল এন্ড রিসোর্টের মালিক। কুয়াকাটায় দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করছেন। কিন্তু গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের সময় সুবিধাভোগী স্থানীয় সন্ত্রাসী মো: জসিম শিকদার ওরফে রানা পরিকল্পিতভাবে তারর হোটেলটি ভাংচুর করে দখলে নেয়ার চেষ্টা করে।
এসব বিষয় নিয়ে আইনি সহায়তার জন্য গত ১৮ সেপ্টেম্বর পটুয়াখালী জজ আদালতে যান। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে আগে থেকে ওৎ পেতে থাকা সন্ত্রাসী জসিম শিকদার রানা, মো: কবির শিকদার, মো: সাইদুর রহমান, মো: রনি, আলী হোসেন, মো: জসিম আকন, বশির আকন, নেছার আকন, সোহাগ ফরাজী, মানিক সুকানি, মো: ফারুক মির, মো: নেছার, মো: মিরন, মো: ফারুক, রিয়াজ ফকির, নিরাজ ছুকানি, মো: সাইদ ছকানি, মো: রফিক আকন, খলিল মৃধা, কালাম মৃধাসহ আরো ২০/৩০ জন অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। প্রকাশ্য দিবালোকে সকলের সামনে এ ধরনের ঘটনায় তিনি চিৎকার করলেও অস্ত্রের ভয়ে কেউ সামনে এগিয়ে আসেনি। তারা একটি সাদা রংয়ের টয়োটা করোলা প্রাইভেট কার (ঢাকা মেট্রো-গ-২৩-৩০৩৮) এ করে নির্জন বিল এলাকায় তাকে নিয়ে যায়।
সেখানে একটি একতলা ঘরে চোখ বেঁধে বেধড়ক মারধর শুরু করে। এরপর অস্ত্র ঠেকিয়ে ১০০ টাকা মুল্যের ১২টি সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করে। একই সাথে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের একটি চেকে ৫ কোটি টাকা লিখে স্বাক্ষর করিয়ে নেয় বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, পরবর্তীতে ছেড়ে দেয়ার আশ্বাস দিলেও পুনরায় হাত-পা ও চোখ বেধে ফেলে। এরপর আমাকে হত্যা করবে বলে তারা আলাপ করতে থাকে। কিন্তু বাইরে আমার হোটেলের ম্যানেজার থানায় জিডি করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সেক্টরে অভিযোগ দিলে তারা পৌরসভার সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে আমাকে খুঁজতে শুরু করেন। এই সংবাদ অপহরণকারীরা পেয়ে যায়। তারা পরদিন ১৯ তারিখ সন্ধ্যায় আমাকে ব্যাপক মারধর ও অমানুষিক নির্যাতন করে লোহালীয় ব্রীজের নিচে ফেলে যায়। সেখান থেকে জেলা ডিবি পুলিশের একটি দল হাত-পা মুখ বাঁধা অবস্থায় আমাকে উদ্ধার করে পটুয়াখালী সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এর মধ্যে পুলিশ বিভিন্ন সিসি ক্যামেরা থেকে অপহরণের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে অপহরণে ব্যবহৃত জসিম শিকদারের প্রাইভেট কার ও চালককে আটক করে। এই ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়। তবে পুলিশের সাথে যোগাযোগ বা মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে খোঁজ নিতেও থানায় যেতে পারছি না।
মামলা বা কোন আইনি পদক্ষেপ না নেয়ার জন্য জসিম শিকদার একের পর এক হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। কোন মামলা বা আইনি পদক্ষেপ নিলে অথবা রোজ ভ্যালী হোটেলে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুরো পরিবারসহ হত্যা করে কুয়াকাটার সমুদ্রে লাশ ভাসিয়ে দেয়ার হুমকি দিচ্ছে। তার হুমকিতে কুয়াকাটা যাওয়া দূরের কথা বাসা থেকে বের হতেই ভয় হচ্ছে। কারণ জসিম একজন ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী। এর আগেও তার বিরুদ্ধে অপহরণ, দখল, চাঁদাবাজি, মারধরসহ নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে।
এমতাবস্থায় তিনি পরিবারসহ নিজের নিরাপত্তা ও সম্পদ রক্ষার জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।